একজন আরজ আলী মাতুব্বর, কতিপয় প্রশ্ন ও তার জবাব-১

লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ০১ মে, ২০১৪, ১১:৩২:০৫ সকাল

আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্রের ৩টি খন্ডই ভাল করে পড়লাম। তার লেখা ‘সত্যের সন্ধানে’ এবং ‘সৃষ্টি রহস্য’ বই দুটি যারা পড়েছেন তারা নিষ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন মাত্র দ্বিতীয় শ্রেনী পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত এই ব্যাক্তি কি গভীর জ্ঞান রাখেন। ইসলাম সম্পর্কে যাদের ভাল পড়াশুনা নেই বা ভাসা ভাসা জ্ঞান আছে, তারা এ বই দুটো পড়লে ঈমান হারাতে খুব বেশী সময় লাগবে না। আরজ আলী মাতুব্বরকে তাই অবহেলা করার কোন কারন নেই। তিনি তার ৮৬ বৎসর বয়সের মধ্যে ৭০ বৎসরই লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করে কাটিয়েছেন। কাজেই এখানে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্ন অর্থহীন। তিনি পেশায় একজন সামান্য গ্রাম্য কৃষক হলেও, বাস্তবে ছিলেন একজন জ্ঞানপিপাসু দার্শনিক, গবেষক। বাল্যকালেই তিনি শিকার হন ধর্মের নামে এক চরম অর্ধমের মানসিক নির্যাতনের। তার জবানীতেই সেটা শুনা যাক-‘আমার মা ছিলেন অতিশয় নামাজী-কালামী একজন ধার্মিকা রমনী। তার নামাজ-রোজা বাদ পড়া তো দুরের কথা, কাজা হতেও দেখিনি কোনোদিন আমার জীবনে। মাঘ মাসের দারুণ শীতের রাতেও তার তাহাজ্জত নামাজ কখনো বাদ পড়েনি এবং তারই ছোঁয়াচ লেগেছিল আমার গায়েও কিছুটা। কিন্তু আমার জীবনের গতিপথ বেঁকে যায় মায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি দুঃখজনক ঘটনায়। সে ঘটনাটি আমাকে করেছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দ্রোহী। ১৩৩৯ (বাংলা) সালে আমার মা মারা গেলে আমি আমার মৃত মায়ের ফটো তুলেছিলাম। আমার মাকে দাফন করার উদ্দেশ্যে যে সমস্ত মুন্সী, মৌলভী ও মুছল্লিরা এসেছিলেন, ‘ফটো তোলা হারাম’ বলে তারা আমার মা’র নামাজে জানাজা ও দাফন করা ত্যাগ করে লাশ ফেলে চলে যান। অগত্যা কতিপয় অমুছল্লি নিয়ে জানাজা ছাড়াই আমার মাকে সৃষ্টিকর্তার হাতে সোপর্দ করতে হয় কবরে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে ছবি তোলা দূষনীয় হলেও সে দোষে দোষী স্বয়ং আমিই, আমার মা নন। তথাপি কেন যে আমার মায়ের অবমাননা করা হলো, তা ভেবে না পেয়ে আমি বিমূঢ হয়ে মার শিয়রে দাঁড়িয়ে তার বিদেহী আত্মাকে উদ্দেশ্য করে এই বলে সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘মা। আজীবন ছিলে তুমি থর্মের একনিষ্ঠ সাধিকা। আর আজ সেই ধর্মের নামেই হলে তুমি শেয়াল কুকুরের ভক্ষ্য। সমাজে বিরাজ করছে এখন ধর্মের নামে অসংখ্য অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার। তুমি আমায় আর্শীবাদ করো—আমার জীবনের ব্রত হয় যেনো কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দুরীকরণ অভিযান।’

আরজ আলী মাতুব্বর তা-ই শুরু করেছিলেন। সেই যুগে প্রাণপ্রিয় একজন ধার্মীক মা-কে বিনা জানাজায় মাটি চাপা দেয়া সত্যি সহ্য করার মত কোন ঘটনা ছিল না। ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত ছিল কেবলই কুসংস্কার। কাজেই ধর্মের বিরুদ্ধে আরজ আলী মাতুব্বর শুরু করেন অন্য রকম এক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আরজ আলী মাতুব্বর কতিপয় ক্ষেত্রে জিতে গেলেও, প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে হারিয়ে ফেলেছেন পরকালের জীবন। কুসংস্কারকে তিনি ধর্ম জ্ঞান করে প্রথম ভুলটি করেছিলেন। যাক সে কথায় আমরা পরে আসছি।

আরজ আলী মাতুব্বরের মত বাংলার আনাচে কানাচে হাজার হাজার মানুষ আজো ধর্মের নামে শিকার হচ্ছে নানা জুলুম নির্যাতনের। কুসংস্কারকে বলা হচ্ছে ধর্ম। একথা বলাই বাহুল্য যে, ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবিদার মোল্লারা কেবলই আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় না হয় ধর্ম রপ্ত না হয় ভাষা রপ্ত। সে কারনে যে যার মত করে ধর্মের ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে এদেশের মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। বৃটিশ আমলে বলা হয়েছে, ইংরেজী বিধর্মীদের ভাষা। এ ভাষা রপ্ত করলে ঈমান চলে যাবে। মুসলমানরা অন্ধভাবে এসব কথা মেনে নিলো আর ক্রমে পিছিয়ে পড়লো। জ্ঞানে বিজ্ঞানে হিন্দুরা দ্রুত এগিয়ে গেলো এবং নেতৃত্বও এসে গেলো তাদের হাতে। মুসলমানরা পড়ে রইল ধর্মের নামে অধর্মের অন্ধকার গভীর গহব্বরে। একটা বারও চিন্তা করলো না যে, ভাষা কোন ধর্ম নয়, ভাষা কেবল জানার মাধ্যম। কেবল আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত কতিপয় আলেম না জানে ধর্মের প্রকৃত রহস্য তথা কোরআনের আয়াতের প্রকৃত অর্থ, শানে নুজুল, কোথায় তার প্রয়োগ কিম্বা সঠিক অর্থ, না জানে মাতৃভাষায় তা বুঝাতে। কেউ একজন বললো ইংরেজী শিখলে জাহান্নামে যেতে হবে। ব্যস। এটাই ধর্ম হয়ে গেলো। ধর্মীয় গোঁড়ামীতে পূর্ণ লোকেরা যেমন তেমনটা করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আজকালকার কিছু জ্ঞানপাপীরাও অনেকটা তেমনই করে থাকেন। যেমন তসলিমা নাসরিন তার একটা বইতে লিখেছেন, কোরআনে আছে, সুর্য্ পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে। কাজেই এমন অবৈজ্ঞানিক কথায় বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।’ এখানে একটি বারের জন্যেও কোরআনে সেরকম আছে কিনা তা যাচাই না করেই তসলিমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করছেন তারা। প্রকৃত পক্ষে কোরআনে সেরকম কোন কথাই নেই। তসলিমার ধারনা কোরআনে সেরকমই থাকার কথা। তাই মনগড়া কথা লিখে তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।

আরজ আলী মাতুব্বর কেবল প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছেন। সবই যুক্তিপুর্ন প্রশ্ন। বেশীর ভাগ প্রশ্নই কুফরী প্রশ্ন। তিনি তার সত্যের সন্ধানে বইতে লিখেছেন, ‘প্রশ্নকর্তা সকল সময়ই জানিতে চায়—সত্য কি? তাই সত্যকে জানিতে পারিলে তাহার আর কোন প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু কোন সময় কোন কারনে কোন বিষয়ের সত্যতায় সন্দেহ জাগিলে উহা সম্পর্কে পুনরায় প্রশ্ন উঠিতে থাকে।’খুবই যুক্তিপূর্ণ কথা কোন সন্দেহ নেই। আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে শুনার পর থেকে তার বই পড়তে চেয়েছি। কিন্তু আমার গার্ডিয়ানরা এসব কুফরী বই পড়তে দিতে কোনভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না। তাদের বক্তব্য, এসব বই পড়লে ঈমান চলে যাবে। জাহান্নাম অবধারিত। তাদের এই বাধা আমাকে আরো বেশী উৎসাহী করে তুললো। এমন কি বই লিখলেন আরজ আলী মাতুব্বর সাহেব, যা পড়ার সাথে সাথেই ঈমান চলে যায়। কি এমন শক্তি এ বইয়ের? এতো ঠুনকো ঈমান নিয়েই কি আমরা বেচে আছি?

গোপনে সংগ্রহ করলাম তার বই। পড়ে প্রথমেই আমার যে বোধ উদয় হলো তা হলো, আমি না পড়লেও আমার ভাই কিম্বা বোন কিম্বা আমার সন্তান তো তা পড়বে। আমি ঈমান না হারালেও তারা তো হারাবে। সে চিন্তা থেকে আরজ আলী মাতুব্বরের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা শুরু করলাম। আমার এ লেখাটা সে প্রয়াসের অংশমাত্র।

আরজ আলী মাতুব্বর ধর্মে বিশ্বাস করতেন না। পরকালেও তার কোন বিশ্বাস ছিল না। আল্লাহ বিষয়েও তার ছিল বেশ কিছু কঠিন প্রশ্ন। তথাপি তার প্রতি আমার আছে অগাধ শ্রদ্ধা। তাকে আরজ আলী মাতুব্বর বানিয়েছে ধর্মের নামে কুসংস্কারাচ্ছন্ন আমাদের এই সমাজ, এই মোল্লা শ্রেনী, যারা নিজেদেরকে ইসলামের একমাত্র এজেন্ট বলে মনে করেন। যারা যুগে যুগে অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকে বানিয়েছে এক চরম কঠিন ও আতঙ্কের এক ধর্মে। হিন্দুদের সতীদাহ প্রথার চেয়ে কম কঠিন ছিল না আমাদের এই উপমহাদের ইসলাম ধর্ম। আমরা ছোটবেলাতেই দেখেছি আমাদের মাতা বা বোন যখন রিক্সা দিয়ে কোথাও যেতেন, নানা কাপড়চোপড় পড়ে তার উপর কালো বোরকা পড়তেন। চোখ দেখা যাবারও কোন জো ছিল না। চোখের উপর জালি দেয়া কাপড় থাকতো। এরপরও নিস্তার নেই। পুরো রিক্সাকে বড় কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলতে হতো। কেউ যদি বড় কাপড় দিয়ে রিক্সা না ঢাকতো, তাকে সমাজ চ্যুত করা হতো। বেপর্দা বেহায়াপনার অভিযোগ নিয়ে সমাজে তাকে নিগৃত হতে হতো। তেমন কারো মৃত্যু হলে তথাকথিত মুমিন মুসলমানেরা তাদের জানাজার নামাজ পড়তে অনীহা প্রকাশ করতেন। মেয়েদের ছবি তোলার তো প্রশ্নই ছিল না।

ধিরে ধিরে সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। এখন বোরকা পরলেই যথেষ্ট। বিদেশে যেতে হলে, এমনকি হজ্বে যেতে হলেও পাসপোর্ট লাগে। ছবি তুলতেই হয়। এখন ছবি তোলা ইসলামে তেমনভাবে নিষিদ্ধ নেই। তাহলে কি সেকালের ইসলাম আর একালের ইসলামে পার্থক্য আছে? উত্তর হলো, না। মোল্লাদের ব্যাখ্যা এবং মানসিকতায় পার্থক্য হয়েছে। ইসলাম ইসলামের জায়গায় ঠিকই আছে। ছোটবেলায় দেখেছি, এক প্রতিবেশীর মেয়ের বিয়েতে গান-বাজনার অনুষ্ঠান হওয়ার অপরাধে মেয়ের বাবাকে খুঁটির সাথে বেঁধে বেধরক পিটানো হয়েছিল। অপমানে হতভাগ্য পিতা সে রাতেই আত্মহত্যা করেছিল। বলাবাহুল্য, তার জানাজাও কেউ পড়াতে আসেনি। বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় পরবর্তীতে তার মেয়েও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।

বাল্যকালে যখন মসজিদে যেতাম, বড়দের রক্তচক্ষুর মোকাবিলা করতে হতো হররোজ। মসজিদের যেতে মন চাইতো না। এই তো সেদিন চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ মসজিদের ঈমাম সাহেব ফতোয়া দিলেন, বাচ্চাদের পাশে নামাজ পড়া মাকরুহ। ব্যস, আর যায় কোথায়। কে চায় তার নামাজ মাকরুহ করতে? শুরু হয়ে গেলো বাচ্চাদের বিতারনের মহান ধর্মীয় কাজ। আমার প্রতিবেশীর এক ১২ বছরের ছেলে মসজিদ থেকে এমন ব্যবহার পেয়েছে যে মসজিদের নাম শুনলেও আঁতকে উঠে। তার মা-বাবা এখন আর ছেলেকে মসজিদে পাঠাতে আগ্রহী হন না। আমার বিশ্বাস এই ছেলে বড় হয়ে মসজিদকে ঘৃনা করা অসম্ভব নয়। এই ছেলেও হয়ে উঠতে পারে আরেকজন আরজ আলী মাতুব্বর। অনুরুপভাবে মাদ্রাসা শিক্ষায় বাচ্চাদের যে রকম শারীরিক ও মানসিক শাস্তির সম্মূখীন হতে হয়, সেটা বলাই বাহুল্য। সম্প্রতি শিক্ষিত মানুষেরা তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না এ কারনেই। তার সন্তান অর্থ না বুঝে কেবল কোরআন মুখস্ত করে কি হবে? উর্দু শিখে ইসলামের কি উদ্ধার করবে?এটা তাদের ধর্মের প্রতি বিমুখতা যে নয় বলাই বাহুল্য। এরকমের অসংখ্য ঘটনা আছে। প্রশ্ন হলো, এগুলো কি ইসলাম?

কাঠমোল্লাদের ইসলামের ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যা শুনে মানুষ ক্রমে ধর্ম থেকে সরে গেছে। ধর্মের প্রতি জন্মেছে ঘৃনা। ধর্ম থেকে পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতার সৃষ্টি হয়েছে একই কারনে। এরাই সৃষ্টি করেছে আরজ আলী মাতুব্বর। ব্যক্তি আরজ আলী মাতুব্বরকে দোষ দেয়ার কোন কারণ দেখছি না। তার মাকে যারা দাফন কাফন করেনি, তারা ধর্মীয় লোক হওয়া তো দুরের কথা। তারা ছিল মানুষ নামের অমানুষ। পিশাচ বললেও তাদেরকে কম বলা হয়। লানত এদের ধর্মীয় গোঁড়ামীকে। লানত এদের মানসিকতাকে।

আরজ আলী মাতুব্বর অনেক প্রশ্ন করেছেন। এধরনের প্রশ্ন আরো অনেকের। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া পর্যন্ত এসব প্রশ্ন সজীব থাকবে বলেই ধারনা। আর নাস্তিকেরা এসব ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস যে চালাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে আমি নানা বই পুস্তক ও ইন্টারনেটে ঘুরাঘুরি করেছি। বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব পেয়েও গেছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ এই উত্তরগুলোকে আরো সমৃদ্ধ ও যুক্তিযুক্ত করার। আলহামদুলিল্লাহ, ফেসবুকে ‘আরজ আলী মাতুব্বরের যুক্তিখন্ডন’ নামে একটা সাইটও পাওয়া গেছে।

আরজ আলী মাতুব্বর লিখেছেন, প্রশ্নকর্তা সকল সময় জানিতে চায়-সত্য কি? তাই সত্যকে জানিতে পারিলে তাহার আর কোন প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু কোন সময় কোন কারণে কোন বিষয়ের সত্যতায় সন্দেহ জাগিলে উহা সম্পর্কে পুনরায় প্রশ্ন উঠিতে থাকে।

উত্তর: এটা একেবারেই খাঁটি সত্য কথা। ইসলাম এর সাথে কোনই দ্বিমত পোষন করে না। ইসলামের যে কোন শাখা সম্পর্কে জানতে হলে প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।

আরজ আলী মাতুব্বর লিখেছেন, জগতের এমন অনেক বিষয় আছে, যে সব বিষয়ে দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্ম এক কথা বলে না। আবার ধর্মজগতেও মতানৈক্যের অন্ত নাই।

উত্তর: এটাও সত্য কথা। দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্ম এক কথা বলতে পারে না। ইসলাম এবং খ্রীষ্টধর্ম বলে মানুষ বিবর্তনবাদের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি। সবকিছু সৃষ্টির পর আল্লাহপাক মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বিজ্ঞান একথা মানতে বাধ্য নয়। এটা মানলে সেটা আর বিজ্ঞান থাকে না। বিজ্ঞান নানা যুক্তির নিরিখে বিচার বিশ্লেষন করে। আর ধর্মজগতে মতানক্য তো থাকবেই। ইসলামের সহিত অন্যান্য ধর্মের তুলনা করা একেবারেই অযৌক্তিক। ইসলাম কেবল একটা ধর্মই নয়, এটা সম্পূর্ণ জীবন বিধান।

আরজ আলী মাতুব্বর লিখেছেন, অমুসলমানী পর্ব উপলক্ষ্যে কলা, কচু, পাঁঠা বিক্রিও মহাপাপ। এমনকি মুসলমানের দোকান থাকিতে হিন্দুর দোকানে কোন কিছু ক্রয় করাও পাপ। এই কি মানুষের ধর্ম? না ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা ?

উত্তর: হ্যা এটা সাম্প্রদায়িকতা। এটা ইসলাম নয়। ইসলাম এধরনের কিছু অনুমোদন করেনি। বরং ইসলামের নামে ভন্ড অজ্ঞরা এধরনের কাজ করে থাকে। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

আরজ আলী মাতুব্বর লিখেছেন, মানবতার মাপকাঠিতে মানুষ একে অন্যের ভাই, ভালবাসার পাত্র, দয়া-মায়ার যোগ্য, সুখ-দুঃখের ভাগী; এক কথায় একান্তই আপন। কিন্তু ধর্মে বানাইল পর।

উত্তর: না ইসলামের ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। ইসলাম প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করে। সম্মান করে, আপন করে নেয়। ইসলামের এই মহা সৌন্দর্যে্য আকৃষ্ট হয়ে যুগে যুগে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহন করেছে।

বিষয়: বিবিধ

২৮৭৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

215895
০১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
খেলাঘর বাধঁতে এসেছি লিখেছেন : উত্তর: না ইসলামের ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। ইসলাম প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করে। সম্মান করে, আপন করে নেয়। ইসলামের এই মহা সৌন্দর্যে্য আকৃষ্ট হয়ে যুগে যুগে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহন করেছ

হুম! আপনি বল্লেন আর হয়ে গেল? অথচ কোরাণ-হাদিসের পতায় পতায় কাফের অমুসলিমদের অভিশাপ দেয়া হয়েছে, অভিশপ্ত বলা হয়েছে, তুচ্ছতাছিল্যা করা হয়েছে, দোজকের ইন্ধন বলা হয়েছে, তাদের ধ্বংস কামনা করা হয়েছে, বন্ধুত্ব না করার কথা হয়েছে,করজোড়ে জিজিরা আদায়ের কথা বলা হয়েছে, সমূলে কতল করতে বলা হয়েছে........

মানুষ তো বোকা না, এগুলো অস্বীকার করবেন কেমন করে?
০১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২০
164124
আনোয়ার আলী লিখেছেন : আপনি কেবল মুদ্রার একটা পিঠই দেখেছেন। তাই একচোখা বিশ্লেষন করছেন। ভালভাবে কোরআন পড়ুন। বোঝার চেষ্টা করুন। আল্লাহপাক আপনাকে হেদায়েত করুন। আপনার জন্যে দোয়া রইল।
215909
০১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫
খেলাঘর বাধঁতে এসেছি লিখেছেন : আপনি এখন মাইকা চিপায় পরে মুদ্রার আসল পিঠখানা অস্বীকার করতে চান । কথায় বলে- দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় ভুলিতে নাই।
215913
০১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
egypt12 লিখেছেন : আল্লাহ যার অন্তরে সত্যের জ্যাতি দেন তাকে কেউ বিপথগামী করতে পারেনা তবুও কাঠমোল্লাদের উৎপাত বন্ধ করা সময়ের দাবী Rose
০১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
164297
আনোয়ার আলী লিখেছেন : সহমত।
215965
০১ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৫০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অত্যন্ত যুক্তিপুর্ন পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আরজ আলি মাতুব্বর এর অনেক রচনাই আমি পড়েছি। তিনি চিন্তাশিল ছিলেন কিন্তু তার সমস্যাটা ছিল তিনি ধর্মের অপব্যাখ্যাকেই ধর্ম বলে মেনে নিয়েছিলেন এবং তাকে দার্শনিক বলে দাবি করা হলে ও দার্শনিকের নির্মোহ যুক্তিবাদি দৃষ্টিতে এক বিচার করেননি।
আর মসজিদে শিশুদের বিষয়ে প্রায় প্রতি জুমাতেই আমার সঙ্গে অনেকের সংঘর্ষ হয়ে যায়। এই নিয়ে একটি পোষ্ট ও দিয়েছিলাম ব্লগে। বায়তুশ শরফ এ ধরনের ঘটনা ঘটবে ভাবাতে পারিনি কারন ইসলাম সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মোটামুটি সঠিক।
০১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
164298
আনোয়ার আলী লিখেছেন : সহমত।
আপনার লেখাটার আরো প্রচার দরকার। ফেসবুকে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
216004
০১ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৪৯
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আরজ আলী ‍মাতব্বর সম্পর্কে কিছুটা জানলাম। ওনার বই পড়তে ইচ্ছে করছে।
আর মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপারে আপনি যা বললেন, তা অবশ্যই কিছুটা ঠিক না, মাদ্রাসা শিক্ষা এখন অনেক আধুনিক।
আর মসজিদে ছোট ছেলেদের কথা বলতেই হয়। ফেবুতে আমি পোস্টও দিয়েছিলাম। মসজিদে আসলেই তাদের সব ধরনের শয়তানীর চর্চা শুরু হয়ে যায়। গুতাগুতি, মাতামাতি, লাথি মারা ইত্যাদি। আমি মনে করি সাত বছরের নিচে ছেলেদের মসজিদে আনাটাই ঠিক না। যার উপর এখনো শরীয়ত প্রযোজ্য না।
সর্বোপরি ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য
216023
০১ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
হতভাগা লিখেছেন : কিছু কিছু আলেম আছেন যারা ইসলাম ধর্মকে সাধারণ মানুষের সামনে কঠিনভাবে উপস্থাপন করেন ।

ছবি তোলা বাদে উনাদের কাছে আর কি অপশন আছে একজন মানুষকে চিন্হিত করার পরীক্ষার হলে/ভাইভা বোর্ডে যখন ঢুকবে /হজে গমন করবে ?
০১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
164296
আনোয়ার আলী লিখেছেন : আল্লাহপাক যেহেতু আপনাকে সুযোগ দিয়েছেন, তাই এসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরী। সাথে থাকার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
216029
০১ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : ইসলামকে ইসলামের মত করে না বুঝে শুধু ইমাম সাব বা আব্বা হুজুরের মত করে ব্যাখ্যা করার কারণে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠে।
ইসলামের বিরুদ্ধে এমন কোন প্রশ্ন নেই যার গ্রহনযোগ্য উত্তর নেই। আপনার উদ্যোগটা ভালো।
আমাদের যাইতুন পত্রিকায় আপনার কিছু লেখা দিন, ভাই।
তবে, কেউ যদি বক্র মন নিয়ে বসে থাকেন তাকে কেউ বুঝাতে পারবেন না। রাসূলুল্লাহ (স) এর মত একজন মহান নবীও আবু জাহলকে বুঝাতে সক্ষম হন নি।
তবুও আমাদেরকে ইসলামকে তার নিজস্ব আংগিকে তুলে ধরেই যেতে হবে।
০১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
164295
আনোয়ার আলী লিখেছেন : নাস্তিকদের নানা কুযুক্তির বিরুদ্ধে আমার মিশন জারি থাকবে ইনশাল্লাহ। ইতিমধ্যে ফেসবুকে ‘নাস্তিকের প্রশ্ন, সংশয়ের নিরসন’ বেশ সাড়া জাগিয়েছে। নাস্তিকদের প্রশ্নে মানুষকে আর বিভ্রান্ত হতে দেয়া যায় না। নাস্তিকদের টার্গেট ১৪ কোটি মানুষ নয়, টার্গেট ১৪শ মানুষ, যারা এদেশের হাল ধরেছে বা ধরবে। মানুষের ঈমান আকিদা বাঁচানোই এখন প্রধান কাজ। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি সাথে পাব।
০১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৯
164311
আনোয়ার আলী লিখেছেন : আমার যে কোন লেখা যেকোন জায়গায় প্রকাশ করতে পারেন। অনুমতির কোনই প্রয়োজন নেই। কোন বিশেষ ট্রপিকের উপর লেখা চাইলে সে চেষ্টা অবশ্যই করব, ইনশাল্লাহ।
219147
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৪
সমালোচক লিখেছেন : অনেক দিন আগেই প্রথম খন্ড পড়েছিলাম । পড়ার পর শুধু মনে হয়েছে, এই লোকটি যদি জীবনে শুধু একবার হলে-ও কুরআনের তাফসীর আদ্যপান্ত পড়তো, তাহলে তার মনের ভেতর আঁকুপাঁকু করা প্রায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতো । বাদবাকীগুলো আধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদদের সংস্পর্শে আসলে বা নূন্যতম ক্ষেত্রে তাদের বইপত্র পড়লে-ই পেয়ে যেতো ।

কিন্তু আফসোস ! সে যাদের সাথে চলাফেরা করেছে, তাদের কেউ তাকে সঠিকভাবে গাইড করতে পারেনি ; তারা শুধু একটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন এক গ্রাম্য সহজ সরল কৃষকের বিদ্যানুরাগ ও মননশীলতা দেখে বিস্মিত-ই হয়েছে এবং সে কারণে শুধু বাহবা দিয়ে গেছে ; পরবর্তীতে তাকে জনসমক্ষে প্রচারের জন্য তাকে “দার্শনিক” হিসেবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করেছে। একটা মানুষ কদাচিৎ জীবন ও জগত নিয়ে শুধু কিছু উচ্চাঙ্গের কথা বললে-ই তাকে দার্শনিক অভিধায় ভূষিত করা যায় না । কিন্তু আমাদের "বিচিত্র সেলুকাসের দেশে” সব-ই হয় । কেউ তাকে কোনদিন দর্শন শাস্ত্রের গভীর জ্ঞানগর্ভ প্রশ্ন-ও করতে যায়নি। করবে-ই বা কিভাবে - তারা নিজেরা-ই তো জানে না দর্শন শাস্ত্র কি বিষয় নিয়ে আবর্তিত !

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটি ভালো দিক হলো - ওটা একজন শিক্ষার্থীকে সুষম জ্ঞানার্জনের মার্গে সঠিক ক্রমান্বয়ে বিকশিত করে তোলে । নোট না করে এলোমেলোভাবে (যেমন, যখন লাইব্রেরীতে যে বই পেলাম বা কেউ যে বই দিলো) এগুলে চিন্তা-ভাবনার মধ্যে সঠিক যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব না-ও হতে পারে । ফলে জীবন ও জগত সম্বন্ধে একটা অস্বচ্ছ ও অসম্পূর্ণ ধারণা মানসপটে স্থিরীকৃত হয়ে যেতে পারে ।

তার প্রশ্নগুলো যতো না দার্শনিক গোছের, তার চেয়ে বেশী ধর্মকেন্দ্রিক -- প্রথম খন্ড পড়ে আমার কাছে অন্তত তাই মনে হয়েছে ।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করার জন্য ও এই বিষয়ে পোষ্টটি দেবার জন্য । পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
220002
১০ মে ২০১৪ রাত ১০:৫৪
মাজহার১৩ লিখেছেন : চালিয়ে যান।
সবগুলো প্রশ্নের জবাব দিন যাতে বই আকারে প্রকাশ করা যায়।
বইয়ের নাম হবে " আরজ আলী মাতব্বরের যত প্রশ্ন"
তাহলে আরজ আলী কেন্দ্রিক নাস্তিকের সংখ্যাটা কমানো যাবে।
১৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৬
169696
আনোয়ার আলী লিখেছেন : উৎসাহ পেলাম। আল্লাহ যেন আমাদের সে তৌফিক দান করেন। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করছি সাথেই পাব।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File