‘আল্লাহ’ সম্পর্কে নাস্তিকের প্রশ্ন-
লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৩০:০৩ রাত
নাস্তিকেরা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন। কিন্তু তাদের নানা লেখায় ধরা পড়ে, এরকম বিশ্বাসে তারা একেবারে অটলভাবে বিশ্বাসীও নন। অর্থাৎ তাদের বিশ্বাসের ভিত অতটা শক্ত নয়। ষ্টিফেন হকিনস বলেছেন, তিনি মানুষ সদৃশ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নন। তবে পদার্থ বিজ্ঞানের নানা মৌল কনা যিনি সৃষ্টি করেছেন তাকে মানতে তার আপত্তি নেই। খৃষ্টানরা ঈশ্বরকে মানুষ সদৃশ ভেবে এসেছে যুগ যুগ ধরে। মানুষের স্বভাবজাত কারনে সৃষ্টিকর্তাকে নিজ সাদৃশ ভেবে এসেছে। সেকারনেই তারা ঈসাকে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে গণ্য করে। মানুষ সদৃশ কোন ঈশ্বর দ্বারা মহাবিশ্বের সৃষ্টি একেবারেই অসম্ভব। হযরত ঈসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন বটে তবে তারাও আল্রাহকে দেখেননি। আল্লাহ সম্পর্কে বাইবেলের বর্নণায় অনেক বিকৃতি ঘটেছে। কোরআন আল্রাহর যে পরিচয় আমাদের কাছে পেশ করেই তা-ই তার জন্যে যথেষ্ট। সুরা ইখলাসে বলা হয়েছে, তিনি পরাক্রমশালী, তিনি কাউকে জম্ম দেনওনি, জন্ম নেনওনি। তার সমকক্ষ কেউ নেই।
আল্রাহ হলেন সেই স্বত্বা যিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। কত বড় এই মহাবিশ্ব তা মানুষের কল্পনারও বাইরে। আলোর গতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। এই গতিতে চাঁদে যেতে সময় লাগবে ১.৩ সেকেন্ড, সূর্য্য পর্যন্ত্য ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড, মংগল গ্রহে যেতে ৪৪ মিনিট লাগবে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সেন্টারে পৌছতে লাগবে ২৬,০০০ আলোকবর্ষ। আমাদের সবচেয়ের কাছের গ্যালাক্সিতে (এ্যান্ড্রমিডা) পৌছতে সময় লাগবে: ২,৫০০,০০০ আলোকবর্ষ Great Attractor (যে স্পেসের মধ্যে কয়েক লক্ষ গ্যালাক্সি আছে) পর্যন্ত্য পৌছতে সময় লাগবে ২০০,০০০,০০০ আলোকবর্ষ । মহাবিশ্বের ডাইমেনশন (যতটুকু দেখা যায়) ৪৬,৫০০,০০০,০০০ আলোকবর্ষ লাগবে এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত্ আলোর গতি ভ্রমন করলে। ছায়াপথ নামে পরিচিত এই গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র। একটা গ্যালাক্সীর এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে আলোর গতিতে গেলেই সময় লাগবে এক লক্ষ বছর। মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা হলো ৭০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০। পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের যত বীচ আছে, তার সব বালুকনাকে গননা করলে সংখ্যা হবে ৭,৫০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ তাহলে এই এত স্টারের মধ্যে পৃথিবীর স্হান কোথায়, একবার ভাবুন। পৃথিবীর সমস্ত বালুকনার মধ্যে একটা বালুকনার সমানও না।
কিভাবে সৃষ্টি হলো এই মহাবিশ্ব ? এতো কোটি কোটি নক্ষত্র, গ্রহ উপগ্রহ?
বিজ্ঞানীরা এর নানা তত্ত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কোন তত্ত্বই সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। শক্তি বা কণা থেকে মহা বিষ্ফোরনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে বিজ্ঞানের মত। বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের মতো এটা ল্যাবরেটরীতে পরিক্ষীত কোন কনক্রিট তত্ত্ব নয়।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মধ্যে বিগব্যাং তত্ব্, বুদবুদ তত্ত্ব ও কণাবাদী তত্ত্ব ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ষ্টিফিন হকিংস কণাবাদী তত্ব্বে বিশ্বাস করেন। তিনি তার ব্রিফ ষ্টোরি অফ টাইম গ্রন্থে বলেছেন, কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে শক্তি হতে অথবা বিপরীত কণিকার জোড়ারূপে কণিকা তৈরী হতে পারে। তার মতে কণিকার উৎস দুটো-১। শক্তি হতে কণিকা, ২। বিপরীত কণিকা বা বিপরীত পদার্থ বা বিপরীত জগত। এখন প্রশ্ন হলো, শক্তি থেকে কণিকা এলে এই শক্তি এলো কোথা থেকে? মৌল কণা বা পদার্থ কে সৃষ্টি করল? এই মৌলিক জড় পদার্থ থেকে জীবনের সৃষ্টি হলো কিভাবে? এধরনের অসংখ্য প্রশ্নের জবাব নাস্তিকেরা দিতে পারছেন না। শূণ্য থেকে ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাক্চুয়েশনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে এমন মতবাদেও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেরকমটা হতে পারে। শূণ্য থেকে জড় পদার্থ সৃষ্টির ধারণাটি প্রথম ব্যক্ত করেছিলেন এডওয়ার্ড ট্রিয়ন ১৯৭৩ ‘নেচার’ নামীয় এক বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নালে। আশির দশকে তার এ ধারনার সাথে স্ফীতি তত্ত্ব জুড়ে দিয়ে একটা মডেল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। বিজ্ঞান তার নিজস্ব গতিতে চলবে এটাই স্বাভাবিক। ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বিজ্ঞানের কাজ নয়। কিন্তু এই শক্তি বলুন আর কনা বলুন, এগুলো এলো কোথা থেকে? বীজ থাকলে গাছ হবেই। কিন্তু বীজটা এলো কোথা থেকে। এসব প্রশ্নের কোন জবাব নেই। শক্তি বা কণা থাকলে বিগ ব্যাং হবে। মহাবিশ্বের সৃষ্টি হবে। শক্তি এবং কণা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাক্চুয়েশনের তত্ত্বটা সত্য হলেও তা কোরআনের বিপরীত হয় না। আল্লাহ বলেছেনই তিনি শূণ্য থেকেই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। শূণ্য থেকে আপনাআপনি জড় পদার্থের সৃষ্টি, জড় পদার্থ থেকে বিগ ব্যাং, তার থেকে মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের এই পৃথিবী নামক গ্রহে অজৈব অনু (inorganic molecules) থেকে দৈবক্রমে এমিনো এসিড (amino acids) গঠিত হওয়া, এমিনো এসিড থেকে দৈবক্রমে প্রোটিন (proteins) ; এবং সবশেষে প্রোটিন থেকে দৈবক্রমে জীবকোষ গঠিত হওয়া এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ব নয়। বিজ্ঞান সুস্থিরও নয়। আর ঠিক এখানেই নাস্তিকদের ভিত নড়ে যায়। কল্পনাতীত বিশাল এই মহাবিশ্বের কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা আছে কি? প্রত্যেকেই নিয়ম মেনে আবর্তিত হচ্ছে। এ পৃখিবীতেও যেখানে মানুষের যা প্রয়োজন, সেখানে তা-ই সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে মরুভুমি নেই, তাই এখানে উটেরও সৃষ্টি হয়নি। শীতকালে তরমুজ জন্মায় না। গরমকালে বরই জন্মায় না। যে সিজনে মানুষের শরীরের জন্যে যা দরকার প্রকৃতি তা-ই জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। কে এই প্রকৃতি? সবক্ষেত্রেই অবাক করা এই সুশৃঙ্খলা আপনাআপনি? কেউ এর নিয়ন্তা নেই?
আজ পর্যন্ত মহাগ্রন্থ কোরআনের কোন কিছুই মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি। বিগ্ ব্যাং তত্ত্ব কোরআনের বিপরীত তা-ও নয়। কোরআনে বিশ্ব সৃষ্টির মৌল হিসাবে গ্যাসীয় পদার্থ বা ধোঁয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ডঃ মরিস বুকাইলির বইতে যথাযথ বর্ণনা রয়েছে। বহু বিশ্বের ধারনাও কোরআনে রয়েছে। তবে বিবর্তনবাদ কোরআনের বিপরীত। বিবর্তনবাদ কোন প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক সত্য নয়। এটা ল্যাবরেটরীতে প্রমাণ করা যায় না। প্রাচীন যুগের কিছু ফসিল বিশ্লেষন করে এ তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়েছে। আল্লাহ মাটি এবং পানি থেকে মানব সৃষ্টি করেছেন। পরে তার পূর্নাংগ রূপ দিয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। মানুষের পুর্নাংগতা প্রাপ্তির পর হযরত আদম-হাওয়ার সন্তানেরা পৃথিবীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। তারা নানা জায়গায় পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করেছেন। আদিতে আদিমতায় ডুবে থাকা অসম্ভব নয়। আদম-হাওয়া কাপড় পড়ে আধুনিক বুদ্ধিমান হয়ে দুনিয়াতে এসেছিলেন এমন তো নয়। তারা প্রকৃতির বিরুপ পরিবেশের সাথে যুদ্ধ তো করেছেনই। কিন্তু নাস্তিকেরা এ বিষয়ে বেশ উচ্চকন্ঠে নানা কুযুক্তি পেশ করেন।
১৪০০ বৎসর পূর্বে অবর্তীণ কোরআন বলছে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ৬টি সময়কালে। একেকটি সময়কাল হাজার কোটি বৎসর বা তারও বেশী। এ ৬টি সময়কালকে বিজ্ঞানীরা অস্বীকার করতে পারেননি। বরং প্রমাণিত হয়েছে, আসলেই ৬টি পর্যায়ক্রমিক সময়কালে এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। নাস্তিকেরা প্রশ্ন করেন, আল্লাহ যদি থাকেনই, তাহলে তিনি পৃথিবী সৃষ্টিতে এত সময় নিলেন কেন? মানুষ সৃষ্টি করতে তাকে কোটি কোটি বৎসর অপেক্ষা করতে হলো কেন? প্রশ্নটা এমন যে, বীজ বুনে অপেক্ষা করতে হবে কেন, আল্লাহ চাইলে তো সাথে সাথেই ফলন দিতে পারেন। কিন্তু আল্রাহ তেমনটা করেননি। আমাদের কাছে সময়টা যেরকম আল্লাহর কাছে তো তা নয়। ধীরে ধীরে নিয়ম মেনে সবকিছু হলো যৌক্তিকভাবে। তাতে কি আল্লাহর মহিমা বিলীণ হয়ে গেলো?
আর আল্লাহর কোরআন মহাবিশ্ব পরিচালনার কোন গাইড নয়। এটা কেবলই পৃথিবীর মানুষের জন্যে একটা গাইড মাত্র। এখানে মহাবিশ্ব পরিচালনার খুঁটিনাটি থাকার কথা নয়। যতটুকু প্রয়োজন, আল্রাহপাক তার সবটাই দিয়েছেন। মানুষের পক্ষে কোটি কোটি আলোকবর্ষ পার হওয়া সম্ভব নয়। মানুষ সেসব পরিচালনাও করতে পারবে না। তাই সংগতকারনেই সে বর্ণনা সেখানে নেই। মানুষের জীবনকাল বর্তমানে ১০০-১৫০ বৎসর। ভবিষ্যতে বড়জোর ১০০০-১৫০০ বৎসর হতে পারে। এতো ক্ষুদ্র জীবনকালে হাজার কোটি আলোকবর্ষ পাড়ি দেয়া অসম্ভব। কল্পনা আর বাস্তবতা এক কথা নয়। আলোর গতির চাইতে দ্বিগুন গতিতে এগুলেও মানুষের জীবনকালে নিজের ছায়াপথ পাড়ি দেয়াও সম্ভব নয়। লক্ষ কোটি ছায়াপথ তো দুরের কথা।
এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন যে স্বত্বা তিনি মানুষ সদৃশ কোন প্রাণী নন। তিনি এক মহা স্বত্বা। তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। তার সব সৃষ্টিই নিয়ম মেনে চলে। কেউ কাউকে অতিক্রম করতে পারে না। এই মহাবিশ্বের তিনিই নিয়ন্তা। সবকিছু তারই সৃষ্টি। তিনি মহাপরাক্রমশালী, তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাই লেখাটি দুবার হয়ে গেছে। ঠিক করে দিন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
=========
ধরুন কেউ আমাকে বলল, এই তুই কি জারজ? এখন আমি যদি মাথা খারাপ করে বলি তুই জারজ, তোর বাপ জারজ, তোর চোদ্দগোষ্ঠি জারজ! আছা এই করে আমি প্রমাণ করতে পারব যে, আমি জারজ নয়?
আসলে কেউ যদি কিছু জানতে চাই, কিছু শিখতে চাই তাহলে তাকে অবশ্যইা যুক্তিবাদী হতে হবে, তথ্যবাদী হতে হবে, সহনশীল হতে হবে। এখন আপনি যদি মনে করেন যে, না আপনিই বড় তাহলে তো সমস্যা বাড়বে তাই নয় কি?।
মন্তব্য করতে লগইন করুন