আ’লীগের সঙ্গে বেহেস্তেও যেতে রাজি নন এরশাদ!
লিখেছেন লিখেছেন এইচ এম ফজল ১১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:১৮:৫৩ বিকাল
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, স্বাধীনতার পর এতো দুর্যোগময়, অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দেশে আসেনি। গ্রামেগঞ্জে যেভাবে মানুষ নেমে পড়েছে তাতে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সরকার যা করছে তাতে কোনোভাবেই গণতন্ত্র বলা যায় না। । গণতন্ত্র চর্চার নামে গণতন্ত্রের কবর রচনার চেষ্টা চলছে। গতকাল বারিধারার দূতাবাস রোডস্থ বাসভবন ‘প্রেসিডেন্ট পার্কে’ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ সময় উপস্থিত দলের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য ‘এ সরকার যা করেছে তাতে স্যার (এরশাদ) আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেহেস্তেও যাবেন না’ মন্তব্য করলে ওই বক্তব্যের সমর্থন করে এরশাদ বলেন, ঠিকই বলেছো। আওয়ামী লীগকে ‘না’ ‘না’ ‘না’ করে দিয়েছি। আর নয়; অনেক হয়েছে। দেশের জনগণের বাইরে কখনো ছিলাম না, শেষ বয়সে জনগণের আশা-আকাক্ষার বাইরে যাব না।
এইচ এম এরশাদ বলেন, দেশের গণতন্ত্র বিপন্নের পথে। কঠিন সময় পার করছে দেশের মানুষ। দুই পক্ষই অনড়। সমঝোতার পথ দেখছি না। সংলাপ নয় সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। জ্বালাও-পোড়াও যেভাবে হচ্ছে তাতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে পারে না। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু গণতন্ত্র যে কি অবস্থায় রয়েছে মানুষ তা হারে হারে টের পাচ্ছে। আমার শাসনামলে পুলিশের গুলিতে দুজন মারা গিয়েছিল। সেটা নিয়ে কি লঙ্কাকাণ্ড করেছে বিরোধী দলগুলো। নূর হোসেন কার গুলিতে মারা গেছে তা আজো পরিষ্কার নয়। অথচ তা নিয়ে মায়াকান্না এখনো চলছে। অথচ এখন হরহামেশাই মানুষ মারা যাচ্ছে। নেতৃবৃন্দকে গুম করা হচ্ছে, পুলিশের গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে প্রায়ই। পত্রিকায় দেখেছি বিক্ষোভকারীদের গানপয়েন্টে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব হত্যাকাণ্ডে তাদের প্রাণ কাঁদে না। হরতাল অবরোধে সহিংসতা এবং পুলিশের গুলিতে যারা মারা যাচ্ছে তাদের পরিবার নেই? বাবা-মা নেই? আত্মীয়-স্বজন নেই? মতিঝিলে গভীর রাতে যে ঘটনা ঘটেছে তা স্মরণ করলে গা শিউরে ওঠে। ৫ মে’র ওই ঘটনার পর কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি। এ কোন দেশে বাস করছি আমরা? এটা কিসের গণতন্ত্র? কিসের মানবতা? দেশের আলেম-ওলামাদের জুলুম-নির্যাতন, দাঁড়িটুপি দেখলেই খিস্তিখেউর মুসলিম দেশে কল্পনা করা যায়? মুসলমানের সন্তান হিসেবে দেশপ্রেমিক খাঁটি মুসলমান হিসেবে মরতে চাই। ইসলামবিদ্বেষীদের প্রশ্রয় দেব না। দেশের যা অবস্থা তাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গিয়ে মানুষের ঘৃণা নিয়ে মরতে চাই না। আমারতো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। সেনাপ্রধান ছিলাম। প্রেসিডেন্ট ছিলাম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কারাগারে গেলেও জেল থেকে দুই বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ৫টি করে আসনে বিজয়ী হয়েছি। কারাগার থেকে দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫টি করে আসনে বিজয়ী হয়েছেন বিশ্বে এমন নজির আমিই সৃষ্টি করেছি। গত নির্বাচনেও আমি সর্বচ্চো ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছি। দেশের যে মানুষগুলো আমাকে এতো ভালবাসেন তাদের বিপক্ষে আমি যাব না। কাউকে ক্ষমতায় বসানোর সিঁড়ি হবো না। সরকার যতই চাপ দিক না কেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবো না। জাতীয় পার্টি শতকরা ৯৯ ভাগ নেতাকর্মী চাচ্ছেন আমি মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসি। আমি বেরিয়ে আসব। এককভাবে নির্বাচন করব। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরাও সে ধরনের পাতানো নির্বাচনে যাব না। জাতীয় পার্টির যারা প্রার্থী হবেন তারা আমাকে স্পষ্ট করে বলেছেন ‘একদলীয় নির্বাচন হলে প্রার্থী হতে পারবো না। ভোট চাইতে গেলে জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না।’ জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে নেতারা ভোট করবেন কেমন করে? তিনি বলেন, বর্তমানে কারো জীবনে নিরাপত্তা নেই। ঘরে বাইরে একই অবস্থা। বিরোধীদলীয় নেতা একটি নির্দলীয় সরকারের ফর্মুলা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও সর্বদলীয় সরকারের ফর্মুলা দিয়েছেন। সর্বদলীয় সরকার সংবিধানে নেই। তবে সব দল যদি রাজি হয় তাহলে দেশের বৃহৎ স্বার্থে সেটা গঠন করা যেতে পারে। কিন্তু সেটাতো হবে না। বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। শেখ হাসিনাকে কোনো ভাবেই প্রধানমন্ত্রী মানবেন না।
শীর্ষ দুই নেত্রীর ফোনালাপে জনগণের কোনো কথা নেই উল্লেখ করে সাবেক
প্রেসিডেন্ট এরশাদ বলেন, ৩৭ মিনিট টেলিফোনে কথা হলো। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের এই ফোনালাপে জনগণের কোনো কথা নেই। একজন সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন, অন্যজন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসতে চাচ্ছেন। কিন্তু জনগণের সমস্যা-সংকট নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা, শিল্পের যে অবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা তাতে চরম বিপর্যয় আসন্ন। মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। আন্দোলনে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় পণ্য ঢাকায় আসতে পারছে না। একদিকে গ্রামের পণ্য ঢাকায় না আসায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে পণ্য না এলে ঢাকার ২ কোটি মানুষ কি খাবে? এতে পণ্যমূল্য মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। মানুষের এই দুর্ভোগ-দুর্দশা নিয়ে কারোই চিন্তা নেই। ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতায় থাকাই কি রাজনীতির মূলনীতি? সরকার যদি জনগণের জন্য কাজ করে থাকে; উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে থাকে তাহলে জনগণই আবার ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসাবে। এতো রক্তপাতের মধ্যেও চেয়ার আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে কেন?
দুই শীর্ষ নেত্রীর সংলাপ বঙ্গোপসাগরে ভেসে গেছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সংলাপের জন্য পরিবেশ দরকার। মানুষ সেটা দেখছে না। জুলুম-নির্যাতন করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। জনগণ বিক্ষুব্ধ হলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এটা বুঝা উচিত সরকারের। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কথা বলে দেশ চালাচ্ছে। যেনতেন প্রকাশে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। এটা গণতন্ত্র নয়। আর বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক নয়। তাদের দাবি নির্বাচনকালীণ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে থাকতে দেয়া হবে না। সরকার নির্বাচনে পথে যাচ্ছে। মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করার কথা বলছে। এ অবস্থায় নির্বাচন হয়তো হবে। তবে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, সেনাবাহিনী হয়তো সরাসরি আসবে না। কারণ তারা এলে কিভাবে আবার ফিরে যাবেন সে প্রশ্ন রয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলে মানুষ হয়তো স্বাগত জানাবে। মানুষ এমন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় কতদিন থাকবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। এখন আর এক দেশ থেকে অন্য দেশের দূরে থাকার সুযোগ নেই। ভারত এবং আমেরিকার কাছে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। যারা ক্ষমতায় এলে তাদের (ভারত আমেরিকা) আধিপত্য থাকবে তাদের চায় ক্ষমতায় আনতে। ফলে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা ঠিক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব বিদেশিদের নয়; এদেশের নাগরিকের। আমরা নিজেরা কি করছি সেটাই দেখার বিষয়।
বিষয়: রাজনীতি
১২৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন