ঢামেক বার্ণ ইউনিট ও কিছু ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন আবরারুল হক ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৬:০৫ রাত
আজ সকালে বিশেষ প্রয়োজনে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে। সাহস করিনি পোড়া মানুষগুলোকে দেখতে। বারান্দা দিয়ে আসার সময় উঁকি ঝুকি মেরে কিছুটা দেখেছি তাদের কঠিন অবস্থা। দেহের চোখে খুব বেশি কিছু না দেখলেও মনের চোখ আমাকে জানাতে চাইল অনেক কিছুই।
দেশে নাকি নির্বাচন হবে।
কিসের নির্বাচন? সংসদ নির্বাচন।
কি জন্য নির্বাচন লাগবে? দেশ পরিচালনার জন্য।
এর কি দরকার? দেশের উন্নয়নের জন্য।
উন্নয়ন কি জন্য? যাতে দেশের মানুষ আরো ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
এইবার আসল জায়গায় আসল।
পুড়ছে মানুষ। মরছে মানুষ। মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। দিকে দিকে তীব্রতর হচ্ছে মানুষের কান্নার করুণ সুরের আর্তনাদ। মানুষের জন্য রাজনীতির বলি মানুষ নিজেই কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর কি কেউ দিতে পারেন? আমার কাছে একটি উত্তর আছে। জানিনা কতটুকু ঠিক। মনে হয় এটাই ঠিক। সেই সন্দেহের দোলাচলে দোদুল্যমান উত্তরটি হচ্ছে, মানুষের জন্য রাজনীতি আজ আর মানুষের হাতে নেই। আজ কিছু মানুষরুপি অমানুষের হাতে আমাদের প্রিয় দেশের চালিকাকেন্দ্র রাজনীতি, যাদের কাছে রাজনীতি অর্থ নীতির রাজা নয় বরং রাজার নীতি। মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য যে বিজ্ঞান, তা যেভাবে কিছু অতি অস্বাভাবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্ষমতার লোভে অন্ধ মানুষের হাতে পড়ে উপকারের চাইতে বেশি মানুষের আতংকের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে, ঠিক একইভাবে মানুষের উপকারের জন্য, মানুষের জীবন মান উন্নতির জন্য যেই রাজনীতি, তা আজ কতিপয় দেশপ্রেমিকের পোশাকধারী ক্ষমতালোভীর হাতে পড়ে ধীরে ধীরে মানুষের জীবননাশের ভয়ংকর খেলায় পরিণত হয়েছে।
পৃথীবির কোন দেশের রাজনীতি এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা সোনার বাংলায় না আসলে কেউ কোন প্রকারেই বিশ্বাস করবেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথীবিকে নিজেদের করায়ত্ব করার জন্য কোন ধরণের আইন কানুনের তোয়াক্কা না করলেও তাদের দেশীয় রাজনীতি বিশ্বের যা কোন দেশের জন্য মডেল হওয়ার মত। নিজেদের ব্যাপারে তাদের কোন প্রকার দ্বিমত নেই। আর আমাদের গুলা? দেশ কেউ বিক্রি করে দিলেও তাতে কারো মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু ক্ষমতার জন্য সম্পূর্ণ দেশটাতে আগুন লাগিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেনা তারা।
২০০৪ সালের ৪ জুলাই শেরাটনের সামনে গণতান্ত্রিক অধিকারের দোহাই দিয়ে হরতাল পালনের নামে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা আওয়ামী লীগ করেছিল, সবাই মিলে এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সেই সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। এতে কার কি হল, তাতে উনাদের কি? উনাদের কাছে তো গণতান্ত্রিক অধিকারের ধূয়া আছে, আর আছে জনসেবার মহান উদ্দেশ্য। গতকালকেও ফেনীতে যুবলীগের ৪ জন আহত হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে, যারা পেট্রল বোমা বানাতে গিয়ে আহত হয়। অনেকে বলতে পারেন, আমি বিএনপির যারা আহত হচ্ছে তাদের দোষারোপ করছিনা কেন। আরে ভাই, তারা তো এখন মানূষের গায়ে আগুন লাগাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের ব্যাপারে এমন সংবাদ,আমাদের কাছে অন্য কিছু জানান দেয়। মনে পড়ে যায়, “আমার ফাঁসি চাই” বইয়ে পড়া একটি ঘটনার কথা, যখন ক্ষমতাসীনদের বিপাকে ফেলার জন্য এদেশেরই একনেত্রী নিজেদের মিছিলেই বোমা মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। খুব ভীতু তো, তাই ঐ নেত্রীর নাম বললাম না।
আমি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কাউকে বিশেষভাবে নয়, বরং রাজনীতির নামে মানুষের জীবন নিয়ে যারাই খেলা করবে, সবার উদ্দেশ্যেই কথাগুলা লিখছি। এইটা অবশ্য ঠিক যে, আমার লেখা আদৌ তাদের হাতে পড়ার সম্ভাবনা নেই।
মনের মধ্যে কতকিছুই আসে, সব তো আর বলা যায় না। কারণ এই দেশে ৫৭ ধারা আছে, আরো যে ভয় পাওয়ার মত কত কিছু আছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন