ত্রি ইডিয়টস ও কিছু কথন
লিখেছেন লিখেছেন আবরারুল হক ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৩১:৩৬ সন্ধ্যা
রিলিজ হওয়ার পরই দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু কিছুই না বুঝার কারনে একটু দেখেই অবজ্ঞাভরে আর দেখিনি। মাস দেড়েক আগে আবার দেখতে বসলাম। সাবটাইটেল থাকার কারনে এবার ভালমতই বুঝলাম। পরম শ্রদ্ধাবোধে অন্তর ভরে আসল তার প্রতি যার মাথা থেকে ফিল্মের জন্য এইরকম অসাধারন, অপূর্ব একটি থিম বের হয়েছে। যখন বলিউডের সব প্রডিউসার ক্যাটরিনা, প্রিয়াংকাদের নিয়ে যুবকদের মাথা গোবর দিয়ে ভর্তি করে ফেলার মহৎ উদ্দেশ্যে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন এইরকম থিম নিয়ে এগিয়ে আসা সত্যিই প্রশংসা পাবার মত।
বলছিলাম “থ্রি ইডিয়টস” মুভির কথা। সত্যিই মুভিটা না দেখলে অনেক কিছুই মিস করতাম।
ঐ মুভির মূল থিমটার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই কত জয় লুবু কেবলমাত্র শিক্ষাব্যবস্থার আজাইরা সিস্টেমের কারণে ঝরে পড়ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
একটা শিশুকে যখন উঠতি বয়সে দুধের সাথে পানি মেশানোর অংক শেখানো হয়, যখন বাড়ন্ত বয়সে শেখানো হয় অর্থনীতির নিকৃষ্টতম সুদের হিসাব, যা কেবলমাত্র সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যই সৃষ্টি করতে ও তার পরিধি বৃদ্ধি করতে পারে, তখন ঐ শিশুর কাছ থেকে দুর্নীতি, অন্যায় ছাড়া অন্য কিছু আশা করা আম গাছ থেকে মুরগীর ডিম আশা করার চাইতে খুব কম কিছু হয় না।
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মঙ্গোলিয়ার রাজধানী মুখস্থ করতে দেয়া হয়, তখন তুখোড় মেধাবী শিক্ষার্থীর চেহারাও একদম ৫ হয়ে যায়। ঐ বেচারা পড়ে এসেছে প্লুটোনিয়ামের গঠন, আর তাকে এখানে পড়তে হচ্ছে, আমেরিকার সরকারের গঠন। রাস্তা সমান করার রুলার দিয়ে হাল চাষ করার মত অবস্থা আর কি।
চার বছর অনার্স করে যখন ফিন্যান্স, কেমিস্ট্রি, বাংলা, আরবি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যালের শিক্ষার্থী একসাথে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে যায়, তখন তাদের অবস্থা দেখে মাথার ভেতরে কেমন জানি ভুমিকম্প অনূভুত হয়।
এখানেই শেষ নয়, আরো আছে। যে বেটা জীবনে মাঠে নামে নাই, সে যখন কৃষিমন্ত্রী হয়, তখন কৃষি খাতের যে কি অবস্থা হবে তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তার কথায় চলতে হয় কৃষি বিশেষজ্ঞদের। যেন মানুষের নাকে দড়ি দিয়ে গাধার কথামত চালানো। সারাজীবন রাজনীতি করতে করতে যার মাথার চুল উঠে গেছে তার কাছ থেকে কিভাবে অন্য ব্যাপারে গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়? গরু থাকতে ঘোড়াকে দিয়ে হাল চাষ করার মত ব্যাপার।
কি আজব সিস্টেম রে ভাই।
এই সিস্টেম না পাল্টে কিভাবে বাংলাদেশকে পাল্টানো সম্ভব কোন মতেই আমার বুঝে আসেনা।
আমাদের দেশে অসংখ্য “রঞ্চু” আছে। যারা সুযোগ পেলেই প্রমাণ দিতে পারে তাদের সামর্থ্যের। কিন্তু তারা সেই সুযোগ পাচ্ছে কই?
শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষকদের রাজনীতিচর্চা, ছাত্ররাজনীতিবিদদের অপরাজনীতিচর্চা, অস্ত্রবাজী যারা লেখাপড়া করতে চায়, তাদেরকেও দিচ্ছে না লেখাপড়ার পরিবেশ।
বলা কঠিন, কবে শেষ হবে এই অবস্থা। আপাতত একটাই কামনা, কত তাড়াতাড়ি আমাদের বাংলার মাহাথিরের আগমন ঘটে। তাহলে হয়তো আমরা জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে “চুলোচুলি তত্ত্ব” শেখার দিনের অবসান ঘটবে।
কেঊ আছেন নাকি এই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মত, যার হাত ধরে সত্যি সত্যিই বদলে যাবে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ?
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন