ওরা আমাকে চরম পন্থি বানাল।
লিখেছেন লিখেছেন আবু ছাবিত ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:১২:৫৫ রাত
ছোটোবেলা থেকেই আমি খুব নিরিহ এবং নরম প্রকৃতির ছেলে ছিলাম। কেউ ধমক দিলেই কেঁদে ফেলতাম। সেই আমাকেই আবিস্কার করলাম অস্ত্র হাতে পাহাড়ের আড়ালে উপজাতি সন্ত্রাসীদের সাথে 'তাড়ি' খেয়ে মাতলামি করা অবস্থায়।
ওরা ধাপে ধাপে আমাকে এ পথে নিয়ে এসেছে। প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র অবস্থায় সিনেমা দেখার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল যা এখনও আছে। সিনেমায় যা দেখতাম তা প্র্যাকটিস করতাম আর সপ্ন দেখতাম বড় হয়ে সিনেমার নায়কের চরিত্র গুলো আমি বাস্তবায়ন করব। আর তাইতো আজ আমার এই অবস্থা।
ওরা বিনোদনের নামে শিশু বয়সেই আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে অপরাধ নির্মূল করতে হলে নিজেকে সন্ত্রাসী হতে হবে। প্রেম করে বিয়ে করলেই শুধু সুখি হওয়া যায় আর বাবা মায়ের পছন্দের পাত্র হবে সন্ত্রাসী, খারাপ, চক্রান্তকারী। তাইতো শিশু অবস্থায় স্কুলে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দিতাম ফিল্মি কায়দায়। শিক্ষকের মার খেয়ে খেয়ে নরম মন হয়ে গেছে শক্ত। চাচাতো, মামাতো ..... বোনদের অভিযোগে হয়েছি বাবা মায়ের অপ্রিয় সন্তান। সবাই শুধু শাসনই করল কিন্তু বুঝতে চাইল না, কেন আমার এমন আচরন? কেন আমার মত হাজারো শিশু বেড়ে উঠছে বিক্রিত মানসিকতা নিয়ে?
কথায় আছে, "যে শিখার সে দেখে শিখে, বলে শিখাতে হয় না।" ওরা আমাকে দেখাল বিনোদনের নামে উলঙ্গ নৃত্য, 18+ গল্পের নামে চটি, শিল্পের নামে পর্ণ গ্রাফি। যা দেখেছি তাইতো শিখেছি। ভাল কিছু দেখাও আমি শিখে নিব, কথা দিচ্ছি।
বয়ঃসন্ধি কালে গুফ দাড়ি উঠবে এটাই সাভাবিক। মাধ্যমিক পরিক্ষা দিয়ে ভাবলাম এবার বাবা মায়ের সুসন্তান হব। চিবুকে রেখেছি দাড়ি, মাঝে মাঝে মসজিদে যাই। আর এ টুকুই যে ওদের সহ্য হল না। হাটে-ঘাটে সবার মুখে কেমন বিদ্রুপ!!! আত্নিয়-সজন, পড়া-প্রতিবেশি সবার প্রশ্ন, "তুমি কি জঙ্গি হয়ে গেছ? তুমি যাদের সাথে চল সাবধানে চলবা।" কেউ বা আবার বাবাকে পরামর্শ দিল, "ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দিন, দেশে থাকলে জঙ্গি বা চরম পন্থি হয়ে যাবে।" কই যারা মন্দিরে পুজো দেয়, রোব বারে গির্জায় যায় তাদেরকে তো কেউ জঙ্গি বলেনা। আমি কেন জঙ্গি হয়ে গেলাম?
কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে উঠেছি, কিন্তু ওরা আমার পিছু ছাড়েনি। ওই যে মসজিদে যাওয়া আর চিবুকে দাড়ি আছে বলে এখানেও বিপদ। টেবিলে কোরআন ছিল আর তাইতো ওরা পুড়িয়ে দিলো আমার বই খাতা, জামা কাপড় সব। এখানেই শেষ নয়, পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেল থানায়। আমার বিরুদ্ধে কয়েকটা মামলা হয়েছে। কিন্তু কেন? কি অপরাধ আমার? না আমি রাজনীতি করি না। তবুও টাকা না পেলে ছাড়বে না।
ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে হরতাল উপেক্ষা করে বাবা রওয়ানা করলেন আদালত পাড়ায়। না আমার সাথে তার আর দেখা হল না। হরতাল সহিংসতার বলি হয়ে বাবা এখন আগুনে পুড়া শরীর নিয়ে হাসপাতালের ব্যাডে।
এক মাস জেল খাটতে হল। জেলের মাঝেই পরিচয় এক উপজাতি সন্ত্রাসীর সাথে। এখন আমিও সন্ত্রাসী। সমাজের বিত্তবানরা ভাড়াটে খাটায় আমাকে। ওরা আমাকে নামিয়ে দিয়েছে মানুষ থেকে পশুতে। ছোট বেলার সপ্ন এখন বাস্তব। ওরা আমাকে যে পথ দেখিয়েছে, এখন সে পথেই ঠেলে দিয়েছে। সাবধান আর কাউকে পাঠাস না তোরা আমার পথে।
বিষয়: বিবিধ
১৪০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন