যতনে রতন মেলে
লিখেছেন লিখেছেন নিশা৩ ২৮ জুলাই, ২০১৬, ০৮:৫৮:৩৩ সকাল
পরকালীন মহাসাফল্য কামনা আমাদের প্রানের গভীরে প্রোত্থিত। তাই ভালো যেমন আমরা আনন্দিত হই, তেমনি মন্দ কাজে আমরা বিচলিত বোধ করি। ভাল-মন্দের সংজ্ঞা আমাদের সত্ত্বার সাথে জন্মলগ্ন থেকে জড়িয়ে আছে। তাই কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ এটা জানার জন্য অন্য কারো বা অন্য কিছুর দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। এ কারনেই অন্যায় করলে তা সর্বপ্রথম নিজের উপর জুলুম/ অত্যাচার করা হয়। কারন আমরা আমাদের সত্ত্বার স্বভাবের বাইরে কাজ করি। যে তরুনরা গুলশান আর্টিজানে এমন হত্যাযজ্ঞ করল তারা যদি একটিবার বিবেকের আয়নায় নিজেদের দেখত!
মূলত তাদের আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়নি। তাদের চিনতে দেয়া হয়নি তাদের রবকে। পরিবার থেকে বাহ্যিক চাহিদা পূরনের সার্বিক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্ত অবহেলা করা হয়েছে আভ্যন্তরীন প্রয়জন। আত্মার প্রয়োজন। অযত্ন, অবহেলায় ওটা এতই ময়লা হয়েছে যে সেটা এখন আর নিজের ভাল-মন্দ বুঝেনা। তবুও হাজার কালোতে ঢাকা পড়েও নিভু নিভু জ্বলতে থাকে পরকালীন মহাসাফল্য তথা জান্নাতের আকাংখা।
যখন নিজের কাছে আলো থাকেনা তখন মরিচীকাকেও আলো মনে হয়। মরিচীকার পসরা নিয়ে যারা তাদেরকে এ পথে এনেছে তাঁদের কথাগুলো আলোর মতই জ্ঞানগর্ভ মনে হয়। বস্তত: তাঁদের বক্তব্য একজন প্রকৃত আলেমের চেয়েও বেশি আকর্ষনীয় এবং যুক্তিযুক্ত বোধ হয়। কারন তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকেই জীবন দেয়া-নেয়ার ব্যাপারে যুক্তি-প্রমান পেশ করেন। তাই এসব মতবাদের ক্রেতাদের অভাব হয় না।
হয়ত বা আমাদের তরুন প্রজন্ম মরিচীকার পিছনে না ছুটে প্রকৃত আলোকিত মানব হতে পারবে যদি আমরা আমাদের ঘরগুলোতে আলো জ্বালতে পারি। পন্চাশ শতক আগে আমাদের বাবা-মারা যেভাবে সন্তান প্রতিপালন করেছেন সে পদ্ধতিটি এখন একেবারে অচল। সে সময় সন্তান প্রতিপালন হত কঠোর শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। বাবা-মা যা বলতেন তাই ছিল নিয়ম। আর নিয়ম ভাংলেই শাস্তি। নি:শর্ত আনুগত্য আদায় করা হতো গলার জোরে অথবা লাঠির জোরে। বর্তমানে আদায়ের একমাত্র উপায় দয়া আর ভালবাসা। আর নিয়ম-কানুন তৈরি হয় বাচ্চাদের সাথে পরামর্শ করে। নিয়ম ভাংগার শাস্তিও তাদের জানিয়ে রাখা হয় পূর্বাহ্নেই। তখন বাচ্চারা অনুযোগ করার কোন সুযোগ পায় না। এরকম পরিবেশে বাচ্চাদের সাথে বাবা-মার একটা বন্ধুত্মপূর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠে। আভ্যন্তরীন সম্পর্ক যখন মজবুত তখন বাহ্যিক প্রভাব এ সন্তানদের উপর কম পড়বে। এবং প্রয়জনে তারা বাবা-মার সাথে পরামর্শ করবে যে কোন ব্যাপারে।
ধর্ম সম্পর্কে মনোভাব ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক, সময়ের দাবী এ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা লাভের। আমাদের সন্তানদের জীবন রক্ষার্থে। পরিবারের সবাই একত্রে এ কাজটি করা যায়। আলোচনা-পর্যালোচনায় যেমন জ্ঞান বৃদ্ধি হবে তেমনি বৃদ্ধি পাবে পারস্পরিক সম্পর্ক।
ইসলাম শাহাদাতের মৃত্যুকে যেমন উৎসাহিত করে তেমনি নিজের জীবন রক্ষারও তাগিদ দেয়। যেমন, সূরা কাহাফের বর্নিত যুবকেরা চাইলেই শহীদ হয়ে যেতে পারত। কিন্ত এক আল্লাহ্তে বিশ্বাস আনার কারনে তাদেরকে যখন হত্যার নির্দেশ দেয়া হলো তখন তারা জনপদ থেকে পালিয়ে গেল। সাথে করে নিল অর্থ-সম্পদ। ধারনা করা হয় তারা ছিল উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। জীবন রক্ষার্থে তরুনরা পালিয়ে গেল। পালিয়ে গিয়ে অমর হয়ে রইল। অথচ শাহাদাতের পথ তাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যখন গুলশানের নিউজটা দেখানো হচ্ছিল সবাই হা হুতাশ করে মরছিল। আহারে শয়তান ছেলেগুলো কতগুলো নিরীহ বিদেশি মেরে ফেলল, দেশের কত দুর্নাম হল, তাদের কি দোষ? ইত্যাদি
নেক্সট নিউজ শুরু হল। মানবাধিকার সংস্হাগুলোর দাবি সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন বিমান হামলায় ২০০০ এর বেশি নিরীহ মানুষ মারা গেছেন যাদের অধিকাংশই নারী-শিশু ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু মার্কিনিদের দাবি সেসব হামলা আইএস জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছিল, সেখানে দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও পারে কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি ভিত্তিহীন। কিন্তু এই নিউজ আসতেই সবার চোখ টিভির দিক থেকে ফীরে গেল তারা কোন গুরুত্বই দিলেন না, আহ উহ শব্দ বের করলেন না, ফ্যামিলির নানান গল্প গুজবে মন দিলেন, যেন কিছুই হয়নি।
আসলে কি জানেন আপু আমাদের মানষিকতা এমনই হয়ে গেছে। গুলশান হামলায় নিরপরাধ বিদেশীরা হত্যার শিকার হয়েছে, তারা তাদের দেশের সাধারণ মানুষ যেমন আমরাও তাই। তাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী আজকের আইএস এর জন্মের জন্য দায়ী কারণ তারা মুসলিম দেশগুলোয় অনৈতিকভাবে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে কিন্তু তার জন্য সাধারণ মানুষকে দায়ী করা যায়না কারণ দেশের শাসক ও দেশের সাধারণ মানুষ দুটো সম্প্রদায় একে অপর থেকে আলাদা তাই শাসকদের অন্যায়ের জন্য সাধারণকে কোন শাস্তি দেয়া যায়না। তাই আমরা প্রতিবাদ করব এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ডাবল স্টাডার্ড এর কেন? বিদেশী মরলে আমাদের কাছে তা কষ্টের কারণ হয়, আমরা ইসলামের সব নৈতিকতা শুধুমাত্র তাদের বেলায় প্রয়োগ করি, আমাদের আলেম গোষ্ঠী কুরআন হাদিসের আয়াত প্রদর্শন করে তার বিপক্ষে মতামত প্রদান করেন, আমরা সবাই ছি ছি করি। অথচ নিরীহ সিরিয়ান, ইরাকী, আফগানীদের বেলায় আমরা অন্যমনষ্ক হয়ে যাই কেন? কেন তখন নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন তুলিনা?? কেন কুরআনের আয়াত প্রদর্শন করিনা? গত বছর দুয়েক আগে যখন সেন্ট্রাল আফ্রিকায় প্রায় ১০,০০০ মুসলিমকে উগ্র খৃষ্টান মিলিশিয়ারা নির্মমভাবে হত্যা করল কোন খৃষ্টানকে তো দেখা গেলনা ফেসবুকে, টুইটারে আহারে ইস!! শব্দ করতে। কেন?? মিডিয়া কি আমাদের এভাবেই ব্রেন ওয়াশ করে ফেলেছে যে, নিরীহ বিদেশী মরলে তা অনৈতিক ইসলাম তা সমর্থন করেনা আর মুসলিম মরলে নৈতিক কেননা সেই হামলা আসলে জঙ্গি নির্মূলে পরিচালিত হয়েছিল কিন্তু ভুলে মাত্র ২০০০ টা মুসলিম মরে গেছে!!! এই হল আমাদের অবস্হা।
সূরা কাহাফের রাকিমের অধিবাসীদের যে উদাহরণ দিয়েছেন তা শুধু নিছক উদাহড়ন নয় আজকের মুসলিমদেরও করণীয়। কারণ তারা যে যুগের অবস্হায় ছিল তা বর্তমান যুগেরও বৈশিষ্ট। আমাদের সমাজ আমাদেরকে অনিবার্য এক যুদ্ধ পরিস্হিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে যার জন্য কম বেশি সবাই দায়ী। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
যে মায়ের উচিত ছিল স্বামীর সংসারের দেখভাল করা , তার সন্তানদের মানুষ করে গড়ে তোলা ---- ক্যারিয়ার , চাকরি বা সমাজ সেবার বাহানা দিয়ে সে তার শরিয়তী কর্তব্যকে দূরে ঠেলে দেয় । আড্ডা , বন্ধু বান্ধব , বস তোষন , হা হা হি হি - এসবে সে মেতে থাকে ।
বাবাদের দোষের চেয়ে মায়েদের দোষই এখানে বেশী , কারণ একজন মাল্টি জিলিয়নিরাকেও যেমন সংসারের খরচ মেটানোর জন্য বাইরে যেতে+থাকতে হয় , তেমনি একজন দিনমজুরের সেটা হতে রেহাই নেই ।
ঘরের কাজ স্পেসিফিকভাবে মায়েদের তথা স্ত্রীদেরকেই ডিস্ট্রিবিউট করা থাকে, হোক আপনি হিলারী কিংবা ঐশ্বরিয়া বা গার্মেন্টস কর্মী ।
মায়েদের বহির্মুখীতার জন্য সন্তান লালন পালন করে ম্যাক্সিমাম ক্ষত্রে আয়া বুয়ারা ।
বাবার ব্যস্ততার কারণে তাকে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে যায় আর মাও থাকে সোশাল ওয়ার্কে । বাবা মাকে তারা পায়ই টাকা চাইবার সময় ।
সন্তান সে টাকা নিয়ে কি করলো , কার সাথে মিশলো , কোথায় গেল - কোন কিছুরও খবর উনাদের রাখার সময় হয় না । কারণ উনারা সমাজে এলিট শ্রেনী এবং সেই এলিটত্ব ধরে রাখতে ক্লাবে যেতে হয় , সোশাল ওয়ার্ক করতে হয় । সামাজিক কাজ করতে করতে হয়রান , পারিবারিক কাজের সময় কোথায় !
পিতা মাতার স্নেহ বন্চিত এসব সন্তানেরাই পরে ডিরেইলড হয়ে যায় খুব সহজেই ।
আমাদের সময় ( গত ৩০/৩৫ বছর আগে ) বাবা ঘরের বাইরেরটা সামলাতেন আর মা দেখতেন ভেতরেরটা । নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশী সময় বাড়ির বাইরে থাকলে কৈফিয়ত দিতে হত , বকা ছিল খুব কমন ব্যাপার , কোন কোন সময় মাইর খেতে হত । এখনকার বাবা মায়েরা সন্তানদের এরকম কোন প্যারা দেন না ।
সেটার ফল এখন পাওয়া শুরু হয়ে গেছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন