ইফতার মাহফিল থেকে বোনদের আটক
লিখেছেন লিখেছেন নিশা৩ ১৮ জুলাই, ২০১৫, ০৪:৫৮:৩২ রাত
রমযানের মত রহমতে পরিপূর্ণ মাসটিও আমাদের কঠিন, বেরহম মনটিকে একটুও নরম করতে পারল না! পাথরের মত কঠিন মনটির উপর দিয়ে শুধু রহমতের বারিধারা গড়িয়ে পড়ে যায়! অবস্থার কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই! আর পরিবর্তন হবেই বা কেন? উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মটিকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই।তাই দিন শেষে কি অর্জন করলাম তার হিসাব মিলানোর প্রয়জন দেখি না। জন্মসূত্রে মুসলিম তাই এক আল্লাহ্ আর তার প্রেরিত রাসুলে (সা) বিশ্বাস করি। আখেরাতে মুক্তির জন্য এটুকুই তো যথেষ্ট! পরবর্তি জীবনে মুক্তি মানে তো জান্নাতের চিরন্তন শান্তি আর জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রান! হ্যাঁ, সেটাও বিশ্বাস করি! বিশ্বাস আছে এই বিশ্বাসটিই মুক্তির জন্য অপরিহার্য! আর কি চাই? তাই আমরা আমাদের হিসাবের ব্যপারে একেবারেই নির্ভার, নিশ্চিত। সে কারনেই একবারও যাচাই করার প্রয়জনবোধ করি না। ঈমানের গভিরতা মাপতে চাই না।
হিসাবের ভয় থেকে যখন আমরা মুক্ত তখন দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের কোন প্রয়জন পড়ে না। আর দশটা বিশ্বাসের মত ইসলামও ব্যক্তি জীবনে পালন করা কিছু নিয়ম মাফিক রুটিনে পরিনত হয়। এবং এই জীবন যাপনে আমরা কোনরকম অস্বস্তি বোধ করি না যতক্ষন পর্যন্ত না আমাদের বিশ্বাস কোন প্রশ্নের সন্মুখিন হয়। এ জন্যই 'মুসলিম' হয়েও শিরক করা, মিথ্যা বলা, চুরি-ডাকাতি, হত্যা, একে অন্যের প্রতি জুলুম করা সহ নানাবিধ আপরাধে আমাদের ঈমানের কোন তারতম্য আমরা অনুধাবন করি না।
তাই খবর পাই মুসলিম দেশ হওয়া সত্তেও প্রায়শই ইফতার মাহফিল থেকে, কুরআন শিক্ষার আসর থেকে সরাসরি মেয়েদের বা মহিলাদের গ্রেফতার এবং জেলে অবস্থান। শিশুরাও রেহাই পায় না আমাদের অত্যাচারের হাত থেকে। অথচ যুদ্ধের সময়কালেও রাসুল পাক (সা) নারী এবং শিশুদের রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতেন। আজ যখন নারী আর শিশুরাও জুলুমের শিকার হচ্ছে এমন অপরাধে যার সাথে তাদের দূরতম সম্পর্কও নেই, তখন ধরেই নেয়া যায় দেশের অভ্যন্তরে কোন একটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চলছে। ষড়যন্ত্র এর স্বীকার ইসলাম, কুরআন-হাদিস, ইসলামি সাহিত্য আর যারা এসব মেনে চলে।এর অন্তর্ভুক্ত বাহ্যিকভাবে মুসলিম বোঝা যায় এমন কোন প্রতিক বা পোষাক, যেমন- পুরুষের দাড়ি আর মেয়েদের বোরকা-নিকাব ইত্যাদি।
এবার দেখি এই মানুষগুলোর চরিত্র কেমন। তারা কি এই শাস্তির যোগ্য কি না? কথায় বলে, শোনা কথার কোন কোনা নেই। তাই পরের মুখে ঝাল না খেয়ে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের একটু ভেবে দেখি। প্রথম যেদিন কেন্দ্রিয় অফিসে গেলাম এক বোনের সাথে, তখনো এই মানুষগুলো সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আর মিডিয়ার কল্যানে যেটুকু জানতাম তার পুরোটুকুই নেতিবাচক! পরিচিত শুধু প্রতিবেশি ঐ বোনটির সাথেই। যাই হোক তাদের সাথে পরিচয়পর্ব শেষ করে চুপচাপ বসে থাকলাম। নতুন পরিবেশ কেমন অস্বস্তি লাগছিলো। কতক্ষনে বের হব সেখান থেকে সেই চিন্তা। ইতিমধ্যে হাসি-খুশি আর কর্মচান্চল্যে পরিবেশটি ভালই লাগল। লাইব্রেরি থেকে প্রয়জনে বই নিয়ে পড়ার আহ্বান পেলাম। এক বোনকে খুশি মনে বছরের নতুন আম কাটতে দেখলাম। মাত্রই দু'টা কাঁচা আম। তাও এত্ত ছোট! এরপর তাকে দেখলাম সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছে! আমি ভাবছি এত মানুষকে কিভাবে দিচ্ছে! বুঝলাম যখন আমার হাতেও এক টুকরা দিল। দুইটা আমের মনে হয় শত টুকরা করেছে। অথচ তার প্রয়জন ছিল না। যেমন আমাকে তারা চেনেই না। না দিলেও কিছু মনে করতাম না। কিন্ত তাদের আন্তরিকতা মনে গভীরভাবে রেখাপাত করলো। এরপর আরো অনেকবার সেখানে গিয়েছি। একবার বোনেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল পরীক্ষা আর পড়াশোনা নিয়ে। তারা বলছিল কিভাবে যে পাশ করবে! কিছু পড়াশোনা হয়নি! আমি কাছে যেতেই বললো, "------ আপা, আপনি কানে আঙ্গুল দিয়ে থাকেন! এসব শুনেন না!" কারন পড়াশুনা করে ভাল রেজাল্ট করা ছিল অত্যবশকিয়। কিন্ত দায়িত্বশিল পর্যায়ে পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের আরো অতিরিক্ত সময় দিতে হত সাংগঠনিক কাজে। আমি যাতে তাদের কাজের চাপ দেখে হতাশ না হই তাই ঐ কথা!
এই বোনেরাই আমাকে শিখিয়েছে তাকওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামজের পরও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার গুরুত্ব, আল্লাহর হক আর বান্দার হকের পার্থক্য, মানবতার সংজ্ঞা এদের ছত্রছায়ায় থেকেই শিখেছি। মোট কথা একজন মুসলিমার চরিত্র কেমন হবে তা এদের সংস্পর্শে থেকেই বাস্তবায়নের জন্য উৎসাহ পেয়েছি। আজ সুদূর প্রবাসে থেকেও মনে হয় যদি আজো তাদের সাথে থাকতে পারতাম তবে আল্লাহর সন্তষ্টির পথে প্রতিটি কদম পরিচালনা অনেক সহজ হত।
আর একটা প্রশ্ন, 'জিহাদি বই' গুলো পড়তে দিয়ে আমাদেরকে তার কোন অংশ বাস্তবায়নে তারা বাধ্য করেছে? আসলে জিহাদি বই বলে কোন বই জানিনা। সব ধরনের বই পড়তেই তারা উৎসাহিত করতেন। এটা পড়া যাবেনা বা ওটা ধরা যাবে না এমন কিছু ছিল না। হালাল-হারাম যেহেতু সুস্পষ্ট হয়ে উঠে ছিল নিজের কাছে তাই ব্যক্তি নিজেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করে নিতে পারত। না, তারা আমাদের কখনও মিছিলে যেয়ে যুদ্ধ করতে বলে নি। তাদের এই চরিত্র যখন এমন, তখন নাশকতা মূলক কর্মকান্ডের জন্য যারা তাদের গ্রেফতার করেছে বা করিয়েছে তাদের জন্য একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আ'লামিনের দরবারেই ফরিয়াদ করব। জুলুমকারিদের এতটা নিশ্চিত হওয়া ঠিক না পরকালের শান্তির ব্যাপারে। কারন মজলুমের প্রতি ফোঁটা চোখের পানি তাদের জন্য অভিশাপ! আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা অত্যন্ত ধৈর্যশীল। তার সব বান্দাদের ব্যাপারেই। তাই তিনি আমাদের সীমাহিন সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন সঠিক পথটি বেছে নেয়ার জন্য।
আমরা যারা দুনিয়ায় ধন-জন,মান-সম্মানে সমৃদ্ধ তারা নিজেকে মনে করি অভাবমুক্ত, আল্লাহর ভালবাসাপ্রাপ্ত। সূরা কাহ্ ফ এ বর্ণিত সেই বাগান ওয়ালার মত মনে করি দুনিয়াতেই জান্নাত পেয়ে গেছি। আর কোন্ জান্নাত পাওয়ার জন্য এখন প্রচেষ্টা করতে হবে? ভুলে যাই অনন্ত জীবনের কথা! ধরেই নেই যে, যদি পরকাল বলতে কিছু থেকে থাকে তবে আমরা এখানকার চেয়েও বেশী ভাল থাকব। কারন, আমরা ভালবাসার পরিমাপ করি দুনিয়ার প্রাপ্ত ধন-সম্পদ আর পরিমাপ যোগ্য সবকিছুর মধ্য দিয়ে। অথচ "দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহর কাছে একটি মাছির ডানার সমানও মূল্যবান হত তবে তিনি অবিশ্বাসীদের এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।"
ঈদের কিছুদিন আগে এই মা-বোনদের গ্রেফতার করে আমরা এটাই বুঝালাম যে, দুনিয়ায় আমাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ি এবং এই জীবনের ভাল-মন্দের জন্য কারো কাছে জবাব দিতে হবে না। অথচ আমরা বুঝি না যে, কয়েদখানার অভ্যন্তরে ঐ মা-বোনদের ঈমান জেলখানার লোহার গরাদের চেয়েও দৃঢ়,শক্ত।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওরা বৈঠক করলে তাহা আর গোপন হয়না দলিয় হয়
আগেও অনেক দ্বীনি বোনদের গ্রেফতার করা
হয়েছে। তাই আগের শিক্ষা থেকে পথ চলা উচিৎ। এত গুলো বোন একত্রে বসা ঠিক ছিল না। সারা বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনের দুর্দিন চলছে।
নিশাত: ভাই আপনার মন্তব্যটি অনিচ্ছাকৃত ভাবে মূছে গিয়েছিল আমার প্রতিমন্তব্য মূছতে গিয়ে। আপনার মন্তব্যের সাথে একমত। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। অনেক শুকরিয়া মন্তব্যর জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন