ঈদের জামা ও বাবার ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন নিশা৩ ২৬ জুলাই, ২০১৪, ০৩:২৫:১৮ রাত
অনেক বছর আগের কথা। সে সময় হিন্দি সিরিয়ালের এত প্রভাব ছিল না। তাই জামা-কাপড় কেনার সময় ব্রান্ড না বরং পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব বেশি ছিল। তাছাড়া প্রয়জনীয় কাজেই সংসারের সব টাকা খরচ হয়ে যেত। মাসের শেষটা অনেক সতর্কতার সাথে চলতে হত। মধ্যবিত্ত বেশির ভাগ পরিবারই মনে হয় এমন ছিল। আজকের এ সময়ের মত শখের পিছনে প্রচুর টাকা খরচ করার মত পরিবার তেমন দেখিনি। তাই বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জামাটা বছরে একবারই কেনা হত। রোজা শেষের ঈদে। আর তাই ঈদের জামা কেনাটা ছিল অতি স্পেশাল।
কিন্ত অত স্পেশাল জামা কেনার খরচ আসবে কোথা থেকে? আমাদের পরিবারে আমরা পাঁচটা বাচ্চা একসাথে বড় হচ্ছিলাম। সবাই স্কুলে যাই। বই-খাতা, ইউনিফর্ম, সকুলের বেতনসহ অন্যান্য খরচ তো ছিলই। একবার মনে পড়ে আব্বু স্কুলে গিয়েছিলেন প্রিন্সেপালের সাথে দেখা করতে। কেন? স্কুল থেকে নির্দেশ দিয়েছিল সব বাচ্চদের কালো জুতা পরতে হবে প্রতিদিন শুধুমাত্র শারিরীকি ক্লসের দিন ছাড়া। ঐ দিন পড়তে হবে কেডস জাতিয় জুতা। আব্বু শুধু জানতে গিয়েছিলেন এতগুলো বাচ্চার জুতো একসাথে কিভাবে কিনে দিবেন? প্রিন্সিপাল আব্বুকে অতিরিক্ত সময় দিয়েছিলেন।
যাই হোক ঈদের সময় তো আর অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায় না। তদুপুরি আমাদের দেশের ব্যবসায়িরা রোজার মাস থেকেই সবকিছুর চড়া দাম হাঁকতে থাকে। আমাদের ভাগ্য ভাল আব্বু ঈদের কেনা-কাটার জন্য ঈদ বোনাস পেতেন। তাই মাঝারি দামের মধ্যে সুন্দর জামা কেনা যেত। বছরের এই একটা সময় আমরা দল বেঁধে বাজার করতে যেতাম এবং নিজ নিজ পছন্দে কাপড়-চোপড় কিনতাম। নিজের ভাল লাগা কিছু একটা দখলে আনতে পারার আনন্দটাই আলাদা!
সবাই যার যার মত পছন্দ করে কিনত কিন্ত আমাকে নিয়ে ঘুরতে হতো সারা বাজার। কিছুতেই মনমত জিনিষ খুঁজে পেতাম না। আর যদি একটা পছন্দ হয়েছে তো সারা বাজার ঘুরলেও অন্য আরেকটা আর ভাল লাগবে না। হতে পারে অন্য পোষাকগুলো অনেক দামি বা অল্পদামি। কিন্ত সেগুলো কিছুতেই সুন্দর লাগবে না। দেখা যেত শুধু আমাকে নিয়ে আব্বু আবার বাজারে যেত।
একবার ঈদে এক দোকানে ঢুকে দেখি হালকা বাদামি রং এর সিল্কের একটা জামা। কোমড়ের কাছে চওড়া ইলাস্টিক আর বামদিকে কাঁধের কাছে একটা ছোট, মিষ্টি গোলাপ আটকানো। চোখে পড়তেই ভাল লেগে গেল। দাম জানতে চাইলাম আমরা। দোকানি বল্ল। আমার মুখটা শুকিয়ে গেল। আব্বু বলল, মা এতো আমার বাজেটের বাইরে। চল আরেক দোকানে যাই।
সে দিন আর কেনা হলো না। বাসায় ফিরে এক সপ্তাহ পর আব্বু জানতে চাইল ওটা ছাড়া অন্য কোন জামা দেখব কিনা। আব্বু জানত আর কোনটাই আমাকে পছন্দ করানো যাবে না। তারপরো একটু চেষ্টা করা। আমি না বল্লাম। আব্বু বললো, চল আমরা জামার জন্য থান কাপড় কিনি। আমিও নিমরাজি হয়ে চল্লাম। কাপড় কিনে আনলাম। আম্মুকে দেখি মাঝে মাঝে সেলাই করে। আমি এ দিক সে দিক ঘুরি কিন্ত জামার কাছে যাই না। ইত:মধ্যে আব্বু একা আবার সেই দোকানে গেল। ফিরে এসে বল্ল, না, দোকানদার কিছুতেই দাম কমাবে না। তবে আমি খুব ভাল করে দেখে এসেছি ডিজাইনটা।
দিন গড়িয়ে ঈদ এলো। নতুন জামা তইরি হলো। জামা হাতে নিয়ে দেখি পছন্দের সিল্কের কাপড়ের উপর কোমরের কাছে মোটা ইলাস্টিক, দোকানেরটার চেয়েও চওড়া। ফুল হাতা। দোকেনেরটা ছিল ছোট হাতা। বামদিকে কাঁধের কাছে মিষ্টি একটা গোলাপ। জামা পড়ে আব্বুকে সালাম দিতে হাসিমুখে বল্লেন, কি পছন্দ হয়েছে? আমিও খুশিতে হাস্যজ্জ্বল হয়ে দ্রুত উপর-নীচ মাথা নাড়লাম যেন আনন্দ প্রকাশে এতটুকু দেরী না হয়।
এটি আমার এত ই পছন্দের ছিল যে, সুযোগ পেলেই এটা পরতাম। ঘরে বা বাইরে সবখানে। এমন কি বিয়ের আগে যখন হবু বর দেখতে এলো তখনো আমার গায়ে সেই জামা। অথচ কত বছর গরিয়ে তখন তা পুরান একটি জামা ছাড়া আর কিছু না। সত্যি কি তাই? নাকি ঐ জামাটির গহীন গোপনে লুকিয়ে ছিল, লুকিয়ে আছে এমন অমূল্য কিছু যা আজও আমার কাছে নতুনদের ভিরেও সবচেয়ে প্রিয়।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৫ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এখনও কি দাম শুনে মুখ শুকিয়ে যায় ?
মন্তব্যতে বোঝা যায় আপনি অনেক বাস্তববাদী। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
একসময় ঈদ ছিল শুধু নির্মল আনন্দ। এখন তার সাথে ব্যবসা আর তথাকথিত ষ্ট্যাটাস যুক্ত হয়ে এর আসল উদ্দেশ্যই নষ্ট করে দিয়েছে।
যা অাপনার মাধুর্যযুক্ত শৈশবস্মৃতি লেখাটি পড়ে। ভালো লাগলো ধন্যবাদ।ঈদ মোবারক।
বাবামায়ের ভালবাসা আসলেই তুলনাহীন। ভালো লাগলো। ঈদ মোবারক আপু আপনাকে
অশেষ শুকরিয়া আপু এবং ঈদ মোবারক।
ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭ ﻣﻨﻜﻢ
সব্বাইকে ঈদ মুবারক।
আপনার বাড়িতে রান্নাঘড়ের প্রতিটি হাড়িতে আমার ঈদের দাওয়াত রইলো।
আমার ঈদ বোনাস যেনো ঠিকঠিক পাই হামমম এটা যেনো মনে থাকে।
ঈদ মোবারক
কেমন আছেন আপু? অনেক দিন দেখছি না আপনাকে ব্লগে .......... কেন?
আমার জন্যও দোয়া করবেন আল্লাহ পাক যেন সবকিছু সহজ করে দেন। আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন