ফরহাদ মজহারের কথায় আতে ঘা লেগেছে !
লিখেছেন লিখেছেন নকিব মাহমুদ ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:০২:০৭ রাত
সাংবাদিকদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া উচিত বিশিষ্ট কলাম লেখক ও বুদ্ধিজীবি ফরহাদ মজাহারের এমন কথার সাথে আমি ব্যক্তিগত ভাবে একমত। কেননা আজ দেশে যা কিছু ঘটছে সাংবাদিকরা তার শিকি আনাও তুলে ধরছে না। তারা বরং সরকারের পোষা কুত্তা হয়ে গোলামী করছে। ঢালাও ভাবে মিডিয়া গুলো বেশি করে বাংলানিউজ২৪.কম, বিডিনিউজ, দেশটিভি, ৭১চ্যানেল, সময় টিভি সরকারকে আবার আনার জন্য নানা কাজ করে যাচ্ছে। এরা সবাই আওয়ামী ঘরানার মিডিয়া। দেশে কোন হরতাল হলে, অবরোধ হলে এসব মিডিয়া বলে হরতাল পালিত হয়নি, অবরোধ পালিত হয়নি। এভাবে তারা দেশের মানুষকে জানাতে চায় বিরোধী দলের ডাকে দেশের মানুষ সাড়া দেয়নি। কোন জায়গায় হরতালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মারামারি হলে তারা ঢালাও ভাবে প্রকাশ করে আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সদস্যরা আহত। এতে মনে হয় শুধু তারা মার খেয়েই যাচ্ছে আর জামায়াত-বিএনপি তাদের উপর নিপীড়ন করে যাচ্ছে। যত মারামারি ও গন্ডগোল হয় তার সবই করে জামায়াত-বিএনপি আর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মুখে চুইনগাম লাগিয়ে চুপ করে থাকে। দেখুন মিডিয়া এখানে কত তথ্য সন্ত্রাস করতে পারে। আসলে তারা কি না বিষয়টি সুন্দর ও সত্যটা তুলে ধরবেন তা না করে তারা বিরোধী দলকে দায়ী করে। এটা কি সন্ত্রাস নয়? প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে?
এছাড়াও গত ৫ মে সরকারের আদেশে পুলিশ রাজধানীর শাপলা চত্বরে যে গণহত্যাটা চালিয়েছে তা বিশ্ববাসী জানে। কিন্তু এসব ছবি ও ফুটেজ কোন মিডিয়া প্রকাশ করেনি। বরং তারাও সরকারের সাথে ঢালাও ভাবে বলেছে সেখানে কোন হত্যা হয়নি। পরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় যুবলীগ, ছাত্রলীগের সদস্যরা যে তান্ডব চালিয়েছে তা তারা হেফাজতের কাজ করে চালিয়ে দিয়েছে।
সূত্রমতে জানা গেছে, অনেক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের ভিডিও ফুটেজ জমা দেয়নি। কেননা তা তাদের মিডিয়া প্রচার করবে না এই ভেবে।
অপরদিকে কক্সবাজারে হরতালে জামায়াতের ৬জন সদস্য পুলিশের গুলিতে মারা গেলেও তা প্রথম আলো, বাংলানিউজ, বিডিনিউজ দেরিতে প্রকাশ করেছে তবে পুলিশ হত্যা করেছে তা প্রচার করেনি। তারা বলেছে,তারা নিজেদের সহিংসতায় মারা গেছে। এখন আপনি বলুন, এসব কি ?
এভাবেই মিডিয়া সত্য বিষয়টিকে তুলে না ধরে তারা ঢালাওভাবে একতরফা সরকারকে ভাল আর বিরোধী মতকে খারাপ বলে প্রচার করছে। এখন আপনি বলেন, তাদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া উচিত কিনা?
এবার আসা যাক, মূল বিষয়টিতে-
দেখা গে্ল ফরহাদ মজহারের এই কথার পর মিডিয়ার তথাকতিত সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে জিডি ও শাস্তি দাবি করছে। আসলে আমরা স্বাধীনতার পর থেকেই দেখেছি যারা আওয়ামী লীগ করে তারা কখনও ভিন্ন মতকে সহ্য করতে পারে না। তাই কেউ কোন কিছুর প্রতিবাদ করলেই ক্ষেপে যান এবং তাকে রাজাকার বিএনপি জামায়াত বলে গালি দেয়া শুরু করেন।
আমরা একটি ইতিহাসের পিছনে তাকাই--
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এইসব সেক্টরের যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের মধ্যে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, মেজর আব্দুল জলিল, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ মেজর জিয়ার নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে মেজর জলিল তার অরক্ষতি স্বাধীনতাই পরাধিনতা বইয়ে সেই সময়কার অনেক অজানা তথ্য লিখে গেছেন। যা আজও জাতির জানা। স্বাধীনতার পর ভারত একতরফাভাবে আমাদের দেশের সব জিনিস লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল। আর এ সব দেশে মেজর জলিল প্রতিবাদ শুরু করলেন।তখন বাকশালের পিতা শেখ মুজিব তাকে গৃহবন্দি করে রাখল। কি দোস ছিল তার? তার একমাত্র দোষ তিনি ভারতের বিরোধীতা করেছেন! তাদের লুটপাটের প্রতিবাদ করেছেন! অপরদিকে মাওলানা ভাসানী এসব দেখে যখন তিনি চীনের উদ্দ্যেশে লং মারচ করার প্রস্তুতি নিলেন তখন তাকেও বন্দি করা হল। এবার বুঝলেন দেশে যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাকেই নানাভাবে হেস্তনেস্ত করাটা আওয়ামী লীগের পুরানা অভ্যাস।তাই আর নতুন করে বলার কিছু নাই।
এবার দেখুন, যিনি বললেন, সাংবাদিকদের উপর আরও বোমা মারা উচিত তাকে যে করে হোক জেলে পুরাবার জন্য তারা ফন্দি আটছ
তবে তার পিছনে কি কি কারণ থাকতে পারে একটি জেনে নেই।
ফরহাদ মজহার মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন। একারণেও ফরহাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত একটি মহল।
বিগত এক এগারর জরুরি অবস্থার সাথে জড়িত সুশীল সমাজ ও ভূমিদস্যুতাসহ নানা লুণ্ঠনে জড়িত ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে জোরালো লেখালেখির কারণেও ফরহাদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোষানলে ছিলেন।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে ফরহাদ মজহার এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুঁকি মোকাবেলা করছেন প্রতিরক্ষা ইস্যুতে। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি হতে হবে 'গণপ্রতিরক্ষা নীতি'।
তিনি দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করে আসছেন। পাশাপাশি জঙ্গীবাদ দমনের নামে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের'ও একজন কড়া সমালোচক দার্শনিক ফরহাদ।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে একুশে টিভির 'একুশের রাত' টকশোতে ফরহাদ মজহার বলেন ‘বাংলাদেশে এখনকার যে গণমাধ্যমগুলো, তারা নিরপেক্ষ তো নয়ই, একই সঙ্গে তারা গণবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয়, আমি তাদেরই দায়ী করি। ...আমি তো মনে করি, এই পটকা ফোটানোটা খুব কমই হয়েছে। আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল।’
ফরহাদের এই বক্তব্য নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রতিবেদন করতে থাকলে ফরহাদ মজহার এর প্রতিবাদ করেন। তিন বলেন, 'আমি সেদিন পরিষ্কার বলেছি, আমি একটা কথা বলতে চাই যেন দর্শকরা যেন আমাকে বোঝে। আমি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের ও ব্যাক্তি স্বাধীনতার পক্ষে। গণ মাধ্যমের ওপর কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ কারও থাকা উচিত না, যদি যিনি মত প্রকাশ করছেন, যার বিরুদ্ধে করছেন ওতে যেন কারও অপমান বা অমর্যাদা না হয়। সেটা রসুল হতে পারেন কিম্বা অন্য কেউ হতে পারেন। এটা ছাড়া যে কারুরই ব্যাক্তি স্বাধীনতার অধিকার আছে।'
তিনি আরো বলেন, 'আমি এর আগে যে বোমার কথা বলেছি এই অর্থে কথাটা বলেছি যে আমি স্বভাবতই কখনই চাইব না কেউ পটকা, নিন্দা বা ঢিলও কোন গণমাধ্যমের ওপর ছুঁড়ুক। এটা কথার কথা, rhetoric। আলোচনা করারা জন্য, যাতে আমরা বুদ্ধিজীবীরা গণমাধ্যমের কর্মীরা বুঝতে পারি যে এই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া একমাত্র দায়ী নয়। আমরা, আমাদের ভুমিকার কারণেই আজকে এই পরিস্থিতি আমরা তৈরী করেছি।'
ফরহাদ তার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারে অভিযুক্ত গণমাধ্যমের ব্যাপারে মন্তব্য করেন, 'আমার বক্তব্য খণ্ডিত ও বিকৃত ভাবে প্রচার করছে। উস্কানি দিয়ে নানান স্তরের সন্ত্রাসীদের আমা্র বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। এরা বাক, ব্যক্তি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এদের সন্ত্রাস আজ কোথায় ঠেকেছে তা আমার বিরুদ্ধে এবং‘একুশের রাত’-এর বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যা ও অপ-প্রচারের ধরণ দেখেই আপনারা বুঝতে পারবেন। এরা এভাবেই মিথ্যা অপপ্রচার ও উস্কানি দিয়ে তাদের বিরোধী গণমাধ্যম ও ব্যাক্তিদের দমন করে। এরাই মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেন ক্ষমতাসীনদের গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রচার করতে না পারে তার জন্য গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করে। এরা বিরোধী দলের কোন কন্ঠস্বর থাকুক তা চায় না। '-----
তাই কবির ভাষায় আমারও বলতে ইচ্ছে করছে-- ধরা যাবেনা, ছোয়া যাবেনা, বলা যাবেনা কথা/রক্ত দিয়ে পেলাম সালার এমন স্বাধীনতা।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন