জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহর আরব ও ইহুদিদের নিয়ে অসাধারণ একটা ভাষণ -আজকে প্রথম পর্ব =========================================
লিখেছেন লিখেছেন যৌননেত্রী ষেক্ষ হাষিণা ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৩৪:৩৮ রাত
১৯৪৮ সালে জর্ডানের বর্তমান রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ আল হুসেইনের পরদাদা আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রে আরব-ইসরাইলি যুদ্ধের প্রায় ছয় মাস আগে ভ্রমন করেন এবং তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব এবং ইহুদিদের নিয়ে অসাধারণ একটি ভাষণ দেন। এরকম ভাষণ আপনি মুসলিম শাসকদের কাছে থেকে শতবছরের মধ্যেও সম্ভবত শুনেননি। তার ভাষণের শিরোনাম ছিল, “যেভাবে আরবরা ইহুদিদের দেখে।” কথা না বাড়িয়ে সরাসরি সেই ভাষণে চলে যাচ্ছি। চলুন ঘুরে আসি রাজ আবদুল্লার সেই দিনের সেই ভাষণ থেকে:
-আজকে ১ম পর্ব-
আমি বিশেষভাবে আনন্দিত যুক্তরাষ্ট্রের শ্রোতাদেরকে কিছু বলার জন্য, কারণ ফিলিস্তিনের যে করুণ সমস্যা সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উপলব্ধি, সহানুভূতি ও সহায়তা ছাড়া কখনোই সমাধান করা যাবে না। ফিলিস্তিনকে নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন বই লেখা হয়েছে– আমি ইতঃস্তত করেই বলছি-সম্ভবত ইতিহাসের অন্যকোন বিষয় নিয়ে এত লেখা হয়নি। এরপরও আমি এটা করতে বাধ্য হচ্ছি যে সারা বিশ্বের জনগন এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের, আরবদের সত্যিকারের ঘটনা সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেনা।
আমরা আরবরা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রগুলোকে অনুসরণ করি, হয়তোবা আপনারা যতটুকু চিন্তা করেন তার চেয়েও বেশি। আমরা এটা জেনে খুবই উদ্বিগ্ন যে, এখানে আরবদের পক্ষে একটা শব্দ লেখা হলে জায়োনস্টদের পক্ষে এক হাজারটা শব্দ লেখা হয়! এর অনেক কারন আছে। আপনাদের লক্ষ লক্ষ ইহুদি নাগরিক আছে যারা এই প্রশ্ন নিয়ে আগ্রহী। তারা খুবই খোলামেলাভাবে এবং বিজ্ঞতার সাথে প্রচরণা চলিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু আরব নাগরিকও আছে, এবং আমরা এখনোও বর্তমান সময়ের প্রোপাগান্ডাতে অদক্ষ। এর পরিণতি আমাদের জন্য ভীতিকর। আমরা আপনাদের সংবাদপত্রে ব্যাঙ্গচিত্র দেখি এবং বলা হয় এইটাই আমাদের আসল চেহারা! কোন বিচারেই আমরা এটাকে আপনা আপনি হতে দিতে পারি না।
আমাদের ঘটনাটি একেবারে পানির মত পরিষ্কার: প্রায় ২,০০০ বছর ধরে ফিলিস্তিন ১০০% আরবদের। ব্যাপকহারে ইহুদিদের অভিবাসনের পরও এখানে এখনো অধিকাংশই আরব। কিন্তু যদি এভাবে অভিবাসন চলতে থাকে তবে শিঘ্রই আমরা নিজেরাই নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু হয়ে যাব।
ফিলিস্তিন খুব ছোট এবং খুবই গরীব একটা দেশ, প্রায় আপনাদের ভারমন্ট স্টেটের সমান। এখানে ১২,০০,০০০ আরবদের বসবাস। ইতোমধ্যেই আমাদের উপর ৬,০০,০০০ ইহুদি জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আরো শতশত হাজার হাজার চাপানো হবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে।
আমাদের অবস্থানটা এতটাই পরিষ্কার ও স্বভাবিক যে আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি যে আমাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করার কোন অবকাশ আছে। ইউরোপের ইহুদিদের ব্যাপারেও আপনারা- আমেরিকানদের একই ধরণের অবস্থান। আপনারা তাদের জন্য দুঃখিত, কিন্তু আপনারা তাদেরকে আপনাদের দেশে চান না। আমরাও তাদেরকে আমাদের দেশে চায় না। এটা এই জন্য নয় যে তারা ইহুদি বরং এই জন্যে যে তারা বিদেশি। আমরা আমাদের দেশে হাজার হাজার বিদেশিদের চায় না, হোক তারা ইংরেজ, নরওয়ের বা ব্রাজিলের বা যে অন্য কোন দেশের। একটা মুহূর্তে জন্য চিন্তা করেন: বিগত ২৫ বছরে এক-তৃতীয়াংশ বহিরাগত আমাদের উপর জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্রর উপর ১৯২১ সাল থেকে আপনাদের ভীষণ প্রতিবাদের পরও, সম্পূর্ণ অপরিচিত ৪.৫ কোটি লোকজনদের আপনাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেটাকে আপনারা কিভাবে নেবেন? এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক যে আমরা নিজেরা নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়াটাকে অপছন্দই করবো। কিন্তু এই অপছন্দ করার জন্য আমাদেরকে অন্ধ জাতীয়তাবাদী এবং নিষ্ঠুর ইহুদি বিদ্বেষী বা এন্টি সেমাইট বলা হচ্ছে এটা অপবাদটা শুধু হাস্যকরই নয় বরং বিপদজ্জনক।
পৃথিবীতে আরবরাই সবচেয়ে কম "এন্টি সেমাইট"। ইহুদিদের প্রতি অত্যাচার পশ্চিমা বিশ্বের খৃস্টান দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্বয়ং ইহুদিরাই স্বীকার করবে যে তাদের 'Great Dispersion' [৭৩ খৃস্টাব্দে ইহুদিরা ফিলিস্তিন থেকে ইউরোপ, মদীনা, ইয়েমেন ইরাক, ইরান, মরোক্ক, ইথিওপিয়া ও অন্যান্য দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে] থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সময়ে আরব শাসিত স্পেনের মত এত স্বাধীনতা ও গুরত্ব অন্য কারো কাছে পায়নি। দুই একটা ঘটনা ছাড়া ইহুদিরা মধ্যেপ্রাচ্য কয়েক শতক ধরে পরিপূর্ণ শান্তি এবং বন্ধুত্ব পরিবেশে আরব প্রতিবেশিদের সাথে বাস করেছে।
দামেস্ক, বাগদাদ, বৈরুত এবং অন্য আরব অঞ্চলগুলো বিশাল ও সমৃদ্ধশালী ইহুদি কলোনিতে পূর্ণ ছিল। ফিলিস্তিনে জায়োনিস্টদের আক্রমণের আগ পর্যন্ত এই ইহুদিগুলো সবচেয়ে উদার আচরণ পেয়ে এসেছে—যেটা খৃস্টান ইউরোপের চেয়ে অনেক অনেক বেশি শ্রেয়। দুঃখজনকভাবে, ইতিহাসে প্রথমবারের মত, এই ইহুদিগুলো জায়োনিস্ট আক্রমণের বিরুদ্ধে আরব প্রতিরোধের উত্তাপ অনুভব করছে। এটা বন্ধ করার জন্য সকলের মত আরবরাও উদ্বগ্ন। যে ইহুদিগুলো আমাদের কাছে আপন স্থান পেয়েছিল তারা যেরকম এই আগন্তুকদের [ইউরোপের ইহুদি] দেখে ক্রোধান্বিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি আমরাও হচ্ছি।
অনেকদিন আমি এটা ভেবে হতবুদ্ধ হয়েছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে যে অদ্ভুত বিশ্বাস আছে যে ফিলিস্তিন ‘সবসময়ই ইহুদিদের ভূমি ছিল’। সম্প্রতি আমি এক আমেরিকানের সাথে এই রহস্য পরিষ্কার করার জন্য কথা বলেছিলাম। সে বলেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগণের ফিলিস্তিন সম্পর্কে যে জ্ঞান সেটা বাইবেল পড়ে।তার তর্ক করে বলে- এটা সেই সময়ে ইহুদিদের জায়গা ছিল এবং তারা অনুমান করে যে এটা সবসময়ই তাই থাকবে! এটা সত্যের ধারকাছেও নেই। আজকে ফিলিস্তিন কাদের হবে, ইতিহাসের ধুম্রজালের মধ্য গিয়ে এত বছর আগের কথা দিয়ে তর্ক করাটা হাস্যকর এবং আমি এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। যদিও ইহুদিরা এটাই করে, এবং আমাকে এই ‘ঐতিহাসিক দাবী’র জবাব দিতেই হবে। আমি ভাবছি যে, পৃথিবীবাসী এরকম অদ্ভূত কোন কান্ড দেখেছে কিনা যে একদল লোক সিরিয়াসলি একটা জায়গাকে তাদের নিজেদের বলে দাবি করছে কারণ কি, কারণ তাদের পূর্বপুরুষেরা ২,০০০ বছর আগে সেখানে বসবাস করতো!!
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন