চেতনায় শহীদ আব্দুল মালেক -ব্লগার ইমরোজ
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার ইমরোজ ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ১২:২৯:৩৭ দুপুর
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সত্য মিথ্যার সংঘাত চিরন্তন।সত্যের আলোকে চিরপ্রতিষ্ঠিত করতে সত্যের পতাকাবাহীরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে কখনোও দ্বিধাবোধ করেনা। অপরদিকে সমাজের কিছু মানুষ ঝলমলে আলো বরদাশত করতে পারেনা, আধার যতোক্ষন কালো রূপ ছড়িয়ে জেঁকে বসে থাকে ততোক্ষনই তারা বেশি মজা পায়।
পারস্য, বাইজেনটাইন ,সিরিয়া ,জেরুজালেম ও আফ্রিকায় ইসলামের আলো পৌছে যায় এগার শতকের মাঝেই । ৭১১ সালে স্পেনে ইসলামের পতাকা ওড়ে, তার ধারাবাহিকতায় রোডস দ্বীপপুঞ্জ,বলিয়ারি দ্বীপপুঞ্জ,সিসিলি দ্বীপপুঞ্জ এসে যায় ইসলামের ছায়াতলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান পথ মুসলিম শাসকদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ।সমরখন্দ থেকে লাহোর , আটলান্টিক হয়ে স্পেন পর্যন্ত বিশাল এলাকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব আসে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে যা অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন দেশের শাসকরা মেনে নিতে পারেনি। মুসলমানদের পরাস্ত করতে শুরু হয় ক্রুসেড যা চলে ৩০০ বছর। ১২৫৬-৫৮ হালাকুখান বাগদাদ আক্রমন করে ইসলামের জ্ঞানের ভান্ডার ধ্বংশ করার প্রক্রিয়া চালায় ।
ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের পর তারা নজর দেয় ভারতবর্ষে, যার ফলে পলাশী, বালাকোট, মহিশুরের প্রান্তরে বারবার কারবালা পরিলক্ষিত হয় ।দ্বিজাতি ত্বত্তের আলোকে পাকিস্থান নামক মুসলিম রাষ্টের জন্ম হলেও সেই পাকিস্থানে পুনরায় অন্ধকার জেকে বসে। বঙ্গভঙ্গের পর হিন্দুদের বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে সলিলুল্লাহ মুসলিমের দান করা জমিতে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় সেখানেও ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্বাবরনে ধর্মহীনতা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরে।
অন্ধকারচ্ছন্ন সেই সমাজে ছাত্রদের কাছে সত্যের আলোকে পৌঁছে দেয়ার জন্য যে মানুষটি জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে কাজ করেছেন তিনি হলেন শহীদ আব্দুল মালেক । সত্যের পতাকা উড্ডিন করতে গিয়ে ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট তাকে মেরে আহত করা হয় ,৩ দিন পর ১৫ আগস্ট দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে । এরপরে অনেকের কাছে জানতে পারি এই মালেক ভাইয়ের সম্পর্কে। তার সম্পর্কে যত জানতেছি ততোই যেন আরো জাসতে ইচ্ছা করতেছে...
সবাইর নিকট হতে শুধু একটা কথাই জানতে পারি যে, মালেক ভাই ছিলেন একজন ভাল মানুষ,ভাল ছাত্র এবং ভাল দ্বায়ীত্বশীল।
এরপরে বুকভরা স্বপ্ন আর মালেক ভাইয়ের আন্দোলনের চেতনা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম শহীদের প্রিয় ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার ক্যাম্পাসে কাটলো অকে সময়... এরপরে সেই ক্যাম্পাস থেকেও বিদায় হতে হলো.. শহীদের কাজকে অসমাপ্ত রেখেই জীবনের বাস্তবতার আলোকে সেই ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিলেও জীবনের প্রতিটি মহূতে অসমাপ্ত কাজের দ্বায়বদ্ধতা নিজের বিবেকের কাছে নিজেকে অপরাধী হিসেবে দাঁড় করায়। অরক্ষিত সেই ক্যাম্পাসের টিএসসি, হল গুলো আর শহীদের রক্তাক্ত সহরাওয়াদি উদ্যান (তৎকালীন ) রেসকোর্স ময়দানের সৃতি গুলো নিজেদের অনেক বেশি পীড়া দেয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটা সিটের জন্য যখন একজন ছাত্রের জীবন দেয়ার ঘটনা ঘটে তখন মনে পরে মালেক ভাইয়ের সেই কথা যখন তিনি নিজে পত্রিকা বিছিয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের ফ্লোরে ঘুমাতেন আর অন্য ছাত্রকে তার সিটে ঘুমিয়ে দিতেন ।নষ্ট ছাত্র রাজনীতির কবলে পরে মা-বাবার প্রিয় সন্তান গুলো যখন বিপথগামী হয়ে যায় তখন মালেক ভাইয়ের দাওয়াতী কাজের কৌশল ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য পথের পাথেয় হিসেবে কাজ করে।
বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞান , শিক্ষাজীবনে সেরা ফলাফল, নিজের আন্দোলনের কাজ আর জনশক্তিদের জন্য পেরেশানী, আল্লাহর সাহায্যের প্রতি ভরসা, দাওয়াতী কাজের কৌশল এবং মালেক ভাইয়ের ত্যাগের মহিমায় উজ্জবিত এ প্রজন্মের লক্ষ লক্ষ জনশক্তি প্রমান করে দিয়েছে একজন মানুষকে হত্যা করে কখনোই একটা আদর্শকে ধ্বংস করা যায়না ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হয়েও আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে আন্দোলনের প্রয়োজনে নিজেকে ত্যাগের মহিমায় পেশ করার আদর্শকে বুকে ধারন করে এ দেশের প্রতিটি ছাত্রের কাছে সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌছাতে পারলে অন্ধকারের অমানিশা ভেদ করে ইসলামের আলোয় আলোকিত হবে এ বাংলার প্রতিটি ছাত্র।
বিষয়: বিবিধ
১২৪২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন