এক রক্ত, এক বংশ, তবু কেন আলাদা?
লিখেছেন লিখেছেন কিছু ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৪৬:৪৯ দুপুর
আসাদুজ্জামান সাজু ঃ ইচ্ছে হচ্ছিল, দাদাকে ছুঁয়ে দেখি। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে অনেক চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ছুঁতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল দাদাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করি। তাহলে হয়তো দীর্ঘ দিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে রেহাই পেতাম। এক রক্ত, এক বংশ, তবু কেন আলাদা? নিজের মানুষকে দেখবো, কেনো এতো জটিলতা? এটা কেনো সহজ করা হয় না? এভাবে কথা বলে আমি শান্তি পাই না। ওপারের সীমান্তে আসা দাদাকে দেখতে গিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে কথা গুলো বলছিলেন নাতনি শাহানাজ। ওপারে দাদা আর এপাড়ে নাতনি শাহানাজ আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে দু’জন দু’জনের সঙ্গে কথা বলছেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে থাকলেও পারছেন না, মাঝখানে যেন অলঙ্ঘনীয় কাঁটাতারের বেড়া। শুধু দাদা আফসার আর নাতনি শাহানাজই নন। রোববার লক্ষধিক মানুষ তাদের স্বজনদের এক পলক দেখতে ছুটে যান লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গেন্দুকুড়ি-কালীবাড়ী সীমান্তে। শ্যামা পূজা উপলক্ষ্যে ওই সীমান্তে খরপো নদীর পাড়ে প্রতি বছরের মতো এবারও বসেছে দুই বংলার মানুষের মিলন মেলা। সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত চলে এ মেলা।
সুচী ও সায়েম’র বড় ভাই উত্তম থাকেন শিলিগুড়িতে। বড় ভাইয়ের জন্য পিঠা এনেছেন দুই ভাই। সরাসরি পিঠা দিতে পারে নাই, তাই কাঁটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে ছুড়ে মেরে পিঠা। তবুও আনন্দ নিয়ে বিদায় নিলেন তারা। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মাধবী রানী এসেছেন ভারতের বড়মরিচা গ্রামে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুভূতি বলতে গিয়ে মাধবী বলেন, বাংলাদেশে মামার বাড়ীতে আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের ২৯ বছর পর এই প্রথম মাকে দেখলাম। তবে তেমন কথা হয়নি। অসুস্থ মাকে এক নজর দেখে এলাম। বাচ্চারা তাদের নানী দেখে খুশিতে আতœহারা। তারা বেড়ার কাছ থেকে নানী ছাড়া আসতেই চায় না।
হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান ভেলু বলেন, দেশ বিভাগের পর আত্মীয় স্বজনরা দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর এদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারে না। অপেক্ষা করে থাকে এ দিনটির জন্য। দুই দেশের ভৌগলিক সীমা রেখা আলাদা করা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করে। কিন্তু সে কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি দুই দেশের মানুষের ভালবাসার টানকে। সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে, মিশে যান একে অপরের সঙ্গে ভালবাসার দুর্লভ ওমে।
অনেক দিন পর আপন জনের দেখা পেয়ে আবেগে কেঁদে বুকের কষ্টটা হালকা করেন অনেকে। বিনিময় করেন মনের জমানো হাজারো কথা। কিন্তু তারা জানেনা ভৌগলিক সীমা রেখাকে কবে হƒদয়ের দাবি দিয়ে ছিন্ন করতে পারবে। - লেখক ঃ সাংবাদিক ও ব্লাগার
বিষয়: বিবিধ
১১১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন