ভারতের এমন আচারণ নতুন কিছু নয়
লিখেছেন লিখেছেন কিছু ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:১৬:০৯ সন্ধ্যা
আসাদুজ্জামান সাজু, ঃ বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যাকান্ডের বিচারে অভিযুক্ত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্য নির্দোষ প্রমানিত হয়েছে। দেশ নয়, গোটা বিশ্বের আলোচিত এই বিচার ব্যবস্থা ও রায় নিয়ে অনেকেই অবাক হয়েছে। উওর বাংলা ডট কম’র খোলা কলামের ‘আমি ফেলানী বলছি’ শিরোনামে কলামের লেখিকা আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী দিলরুবা সারমিন তার লেখায় এ অবাকের প্রকাশ ঘটিয়েছে। তিনি অবাক সেই মানুষ গুলোর একজন। লেখিকাতো অবাক হয়েছেন, তার পাঠক ওই লেখা পড়ে অবাক হয়েছে কি না তা জানি না। তবে এ কথা জোর গালায় বলা যায়, যারা ভারতের অতীত চরিত্র জানে না কেবল তারাই অবাক হয়েছে। ভারতের এমন আচারণ নতুন কিছু নয়। ১৯৫৮ সালে থেকে তারা প্রতিবেশীদের প্রতি এ ধরণের আচারণ করে আসছে। ছিটমহল বিনিময়, তিস্তা চুক্তি ও ফেলনী হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে ভারতের ভুমিকা রহস্যময় নাটকের একটি পুরাতন দৃশ্য মাত্র।
বলা প্রয়োজন, ১৯৫৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির পাকিস্তানী দূতাবাসে তৎকালীন পাকিস্তানী প্রধান মন্ত্রী মালিক ফিরোজ খাঁ নুন ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহরু’র জন্য এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। ওই সংবর্ধনার আলোচনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের বিষয়টি উঠে আসে। একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় ওই সংবর্ধনায়। কিন্তু কিছু দিন পরই নেহরু’র একান্ত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত তৎকালীন মুখ্য মন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় এর বিরোধীতা করেন। ১৯৫৮ সালে ৯ ডিসেম্বর লোকসভায় প্রধান মন্ত্রী সীমান্ত চুক্তি নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতি নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর পর ৪ বার মুলতবির প্রস্তাব আসে। তার নেপথ্য মুখ্য ভুমিকায় ছিলেন মুখ্য মন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়।
১৯৬০ সালের ১০ ডিসেম্বর নেহরু মুখ্য মন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়কে একটি পত্রে জানান, ওই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানীর জেনারেল আয়ুব খাঁন অপেক্ষা করছেন। এর পর লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়ে যায়। আবাক হচ্ছে, বিলটি পাশ হওয়ার সময় লোকসভা ও রাজ্যসভায় আইনমন্ত্রী আশোক সেনসহ কোন কংগ্রেস এম পি উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭৪ সালের ১৬ মে ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী’র সাথে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে নেহরু-নুন চুক্তিকে সমাধিস্থ করে নতুন একটি রুপ রেখা তৈরী করা হয় মাত্র। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে ৫ টি রাজ্য’র সীমান্ত আছে তার সমাধান হবে বলে উল্লেখ করা হলেও আর্শ্চয হওয়ার বিষয়, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি অসম, মেঘালয়, মনিপুর ও ত্রিপুরা’র সাথে বাংলাদেশের যে সীমানা রয়েছে, সেখানে কোন ভুমি বন্টনের বিষয় ছিল না।
এখানেই শেষ নয়, ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ভারত তাদের চরিত্র রাতা-রাত্রি পাল্টে ফেলে । ভারতীয় কর্তা ব্যক্তিরা বলতে থাকে, চুক্তি হয়েছে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে। কিন্তু আজ ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিদ্যামান। অতত্রব এ চুক্তি বাস্তবায়নের কোন সুযোগ নেই। ওই সময় ভারতীয় পররাষ্ট দপ্তর থেকে একটি পুস্তিকা বের হয়। এতে বলা হয়-তিনবিঘায় ভারতের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন থাকবে। সুতরাং এ নিয়ে আন্দোলন করার কোন কারণ নেই। অথচ চুক্তিতে আছে, তিন বিঘা বাংলাদেশ পাবে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এরশাদ তিনবিঘা নিয়ে ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী গান্ধীকে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানান। কিন্তু ভারত এতেও সাড়া দেয় নাই।
গল্পের সুরে বলতে হয়, এক স্বামী তার স্ত্রীকে প্রতিদিন মারধর করেন। স্ত্রী কান্না করে আর বলে আমাকে মারধর করছেন কেন ? না রাখলে বলেন, আমি চলে যাবো। তখন স্বামী বলেন, তোকে যে আমি রাখবো না মারধরে কি তা বুঝো না। যারা ভারতের আচরণে অবাক হয়েছেন, তাদের বলব আপনারা আর কি ধরণের আচরন আশ করেন ।
ফেলানী হত্যার কলম্বময় রায়ে মাসে বলব, যুগ যুগ ধরে ভারত তাদের কর্মে প্রমান করেছে, আমাদের স্বার্থ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বরং আমাদের নিয়ে তামশা করতে তাদের ভাল লাগে। তারা আমাদেরকে খেলনা পুতুল মনে করেন।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন