প্রবাদ বাক্য !! নাকি হিপক্রেসি !!
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৮:০০:৪০ সকাল
গতকাল এক প্রবাদ বাক্য নিয়ে লিখেছিলাম।প্রেক্ষিত বাংলাদেশ।আজ আরেকটি প্রবাদ বাক্য নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হল, ”পাপকে ঘৃণা করো,পাপীকে নয়”
-------------------------------------
চমৎকারিত্বের অন্যতম একটি প্রবাদ হল এই পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়।মীর মশাররফ হোসেন এর বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসেও উনি নবী দৌহিত্রের উধৃতি দিয়ে এই কথাটি বলেছেন।
আবার ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীও - 'পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কারা প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকার সব সময় কারাগারের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় কারা সপ্তাহ ২০১৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কোন রাজনৈতিক প্রভাবিত কথা নয় জাস্ট উপরের স্তরের লোকজনের মন্তব্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য কোট করা হল।
এখন আসি মুল কথায়।
কোন এক লোক ভগবান লোকনাথ ব্রহ্মচারিকে প্রশ্ন করলেন, পাপ কি?
তিনি উত্তরে বললেন, যাহা মানুষের অন্তরে তাপ সৃষ্টি করে তাহাই পাপ।
তাহলে গুরু তাপ কি? তিনি বললেন, সুখ এবং দুঃখের সময় অন্তরে যে অনুভুতি হয় তাহাই তাপ। পাপ কি? এই প্রশ্নের জবাবে সূফী বলেন, পাপ হচ্ছে নিজের উপর জুলুম করা। কারণ পাপ ক্রিয়ার প্রতিটি ফল প্রত্যেক পাপী ব্যাক্তির নিজের উপর এসে পরে এবং তাঁকে অবশ্যই তা ভোগ করতে হয়। পাপ হচ্ছে নফসের কলুষতা। পাপ হচ্ছে ষড়রিপু। যাহার মধ্যে ষড়রিপুর আধিক্য যত বেশি তাঁহার পাপ ও ততবেশি। পাপের আছে জাহের ও বাতেন রূপ। মনের মধ্যে ষড়রিপুর আধিক্যকে পাপের বাতেন রূপ বলে আর তা কর্মে রুপান্তর হওয়াকে তাঁহার জাহের রূপ বলে। তাই কোরআনের নির্দেশ, “পরিত্যাগ করো পাপের জাহের ও বাতেন অংশ” পাপ যদি কোন গৃহ হয় তবে সেই গৃহে প্রবেশ করার আছে ৬ টি দরজা, ১। কাম ২। ক্রোধ ৩। মোহ ৪। লোভ ৫। অহংকার এবং ৬। হিংসা ।
অর্থাৎ ষড়রিপু বেতিত কোন পাপ নেই এবং তা থাকতে ও পারে না ।
একটু বিশ্বভ্রম্মান্ড যদি ঘুরে আসি তবে,উসামা বিন লাদেন অথবা সাদ্দামকে কেন মারা হল?কথিত তাদের পাপের কারণে কেন বোমা মেরে কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া হল?
বা তাজা খবর যদি বলি তবে কেন গতকাল নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামালায় ফাঁসীর আদেশ দেয়া হল?
পাপ তো সত্ত্বাহীন আর পাপী পাপকে সত্ত্বা দেয় তবে কেন এই হিপক্রেসি কথাবার্তা সমাজে প্রচলিত আছে?
যদি পাপকেই ঘৃণা করার কোন রেফারেন্স বা দলিল বা ভিত্তি থাকে তবে কেন ফেরাউনকে ঘৃণা করা হয়,কেন তাকে ভালোবেসে তার পাপকে ঘৃণা করা হয় না!কেন আইন আর আদালত!
একই মুখে পাপীকে ঘৃণা না করার আদেশ দিয়ে আইন আদালত বানিয়ে পাপীকে শাস্তি দেয়ার বিধান কতটা যুক্তিসঙ্গত!
অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সকল ধর্ম যেমন এক বাক্যে স্বীকার করেছে তেমনি পৃথিবীর কোন আন্দোলন সংগ্রাম ও কিন্তু তার আন্দোলন চলা অবস্থায় বলেনি যে অমুককে ভালবাসতে আন্দোলন বরং অমুক কে শেষ করে দাও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দাও- এর জন্যই আন্দোলন হয়।
পাপের বিপরীত শব্দ বা অবস্থা যদি হয় পুণ্য এবং তার অস্তিত্ব যদি পৃথিবীতে থেকেই থাকে তবে পাপকে লালনকারীকেই ঘৃণা করতে হবে কারণ সে পুণ্যের পথ থাকা সত্ত্বেও পাপকে লালন করেছে।সে লালন না করলে পাপ তো সত্ত্বা পেতো না।
“গাব্বার ইজ ব্যাক” মুভিতে নায়ক তার শেষ ভাষণে বলল,কেন আমি দুর্নীতিবাজ একজন একজন করে খুন করেছি তোমরা জানো?
“কারণ তাদের মৃত্যু দেখে যেন বাকীরা সাবধান হয়ে যায় যে গাব্বার আসতেছে”- তারমানে পাপীকেই পাপ ধ্বংসের জ্বালানী হতে হবে অন্যথায় সারাদিন বসে পাপকে ঘৃণা করলেও পাপের টিকিটিও ছেঁড়া যাবে না।
সমাজে ঘুষ সবাই অপছন্দ করে কিন্তু ঘুষ দিন দিন বাড়ছে।পক্ষান্তরে আজ যদি ঢাকা শহরে ২০ জন কুখ্যাত ঘুষ গ্রহণকারী কে শাস্তি দেয়া হয় তবে আগামীকাল থেকে ঘুষ হয়ে যাবে সোনার হরিণ।চাইলেই না কেউ দিবে না কেউ নিবে।
সব ভালোবাসাই ভালো না।ছেলে ভুলানো প্রবাদ দিয়ে হিপক্রেসি বাড়ছে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল কাজকে যেমন এপ্রিশিয়েট করা হয় ব্যক্তিকে পুরষ্কারের মাধ্যমে তেমনি পাপ বা মন্দ কাজকে তিরষ্কার বা ঘৃনা করা হয় ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন