আশুরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আর তার মুল পটভূমি
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:৩১:৫২ দুপুর
মহরম মাসের দশ তারিখকে বলা হয় ‘আশুরা।’ কারণ, আরবি ‘আশারা’ থেকে এর উৎকলণ। যার অর্থ হচ্ছে দশ। তাই এ মাসের দশ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলে অবহিত করা হয়। আদিকাল থেকেই যুগে যুগে আশুরার এই দিবসে বহু স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।সংক্ষেপে তা একটু তুলে তারপর অন্যদিকে যাচ্ছি।
> এ দিন সমগ্র জগত সৃষ্টি হয়েছিল।
> এই দিন হজরত আদম(আঃ) এবং বিবি হাওয়া(আঃ) উভয়কেই পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল।
> এ দিন কিয়ামত অনুষ্টিত হবে।
> এই দিন হযরত আইয়ুব (আঃ) দুরারোগ্য থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
> হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহন করেছিলেন এই দিনে এবং পরবর্তীতে এই দিনেই আল্লাহ্ তায়ালা উনাকে উর্ধাকাশে তুলে নিয়েছিলেন।
> হযরত দাউদ (আঃ) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন।
> হযতর সোলেমান (আঃ)এর হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধার হয়েছিল এই দিনে।
> হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন।
> হযরত ইয়াকুব (আঃ) তার হারানো পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) কে চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন একই দিনে।
> ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া পানিতে ভেসে আসা শিশু মুসাকে গ্রহন করেছিলেন এবং এইদিনে ফেরাউন কে নীলনদে ডুবিয়ে আল্লাহ্ তায়লা মুসা(আঃ) কে বিজয় দান করেন।
> হযরত নূহ (আঃ) এইদিনে কিশতীতে তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিলেন।
> মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম(আঃ)এইদিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে এইদিনেই তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
> এই দিনে ইয়াজিদ নবিজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দৌহিত্র হযতর ইমাম হোসাইন (রাঃ) কে সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
এই ঐতিহাসিক যা ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত সবগুলো ঘটনাই অবশ্যই আল্লাহ্র পরিকল্পনায় সংগঠিত হয়েছে - আর তাই দিবসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু বর্তমানে যেভাবে এই দিনটিকে একটি বিদআতি আদলের রূপ দিয়েছে তা ভয়ঙ্কর এবং প্রতারণামূলক।
এর মুল পটভূমি হল,
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন ঈহুদী সম্প্রদায়কে আশুরার দিনে রোযা পালন করতে দেখলেন। তাই তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন:
“এটা এমন কোন্ দিন, যে দিনে তোমরা রোযায় আছো? তারা বললোঃ এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তায়ালা এই দিনে মুসা (আঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের লোকজনকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার অনুসারী লোকজনকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। তাই মুসা (আঃ) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোযা রাখেন। অতএব আমরাও রোযা করি। তার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তাহলে তো মুসা (আঃ) এর ব্যাপারে তোমাদের তুলনায় আমরা বেশি হকদার। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রাখেন এবং রোযা রাখার আদেশ দেন।[মুসলিম, সিয়াম, নং ২৬৫৩ ]
এমনকি ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে অর্থাৎ জাহেলিয়াতের যুগেও রোযার প্রচলন ছিল। “আশুরার দিনে কাবা শরীফে গিলাফ চড়ানো হতো; তাই আরবরা ঐ দিন রোযা রাখত।” (মুসনাদে আহমদ)।
আর এর ঐতিহাসিক ভিত্তি এখান থেকেই মুসলমানদের জন্য আশুরার দিবস পালনে গুরুত্ব এসেছে।তারপর একদিনের রোজা ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় বলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুইদিন রোজা রাখতে বললেন।
আদিকাল থেকে মানে হজরত আদম (আঃ) থেকে মুটামুটি প্রায় সব নবীগণই এই দিনটিতে রোজা রেখেছেন।
কিন্তু মুসলমান রা স্পেশালি শিয়ারা আসল পটভূমিকে ছুড়ে ফেলে তারা কারবালার প্রান্তরে হজরত হোসাইন(রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনাকে এর মুল প্রতিপাদ্য বিষয় বানিয়ে ফেলেছে এবং দেশে দেশে বিশেষ করে শিয়াদের পা পড়েছে এমন অঞ্চলগুলোতে বিদআতি পন্থায় মিথ্যা পটভূমিতে এই দিনটি পালিত হচ্ছে। অথচ এই ঘটনা রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর ওফাতের পরের ঘটনা যা একটি ঐতিহাসিক কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না।
ইতিহাসের দিকে তাকালে প্রথমত এই দিনটি কাকতালীয় ঐতিহাসিক ঘটনা,
দ্বিতীয়ত আল্লাহ্র পরিকল্পনাই এরকম ছিল আর সেই জন্যই ইসলামের অনেক বড় বড় ঘটনার সাথে মহরমের একটা যোগসূত্র আছে এবং কিয়ামত ও এই দিন সংগঠিত হবে।
এর পর যে কথাটি আসে সেটি হল এইদিনে রোজা রাখা বা ইবাদত এর পটভূমি কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় ইসলামের পিছনের ইতিহাসকে সামনে রেখে গুরুত্ব পেয়েছিল -- তাই ইবাদতের পটভূমিতে ওই ইতিহাস স্থান না পেয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ওফাতের পরবর্তী সময়ের ঘটনা কোনভাবেই স্থান পেতে পারে না।কিন্তু বর্তমানে শিয়াদের কাছ থেকে চলে আসা ইতিহাস চর্চা করে দিনটির গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া হচ্ছে ----- তবে মুল ঘটনার সাথে এই ঘটনাটির শিক্ষাও দিনটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে --- মুল ঘটনাকে আমলে নিয়ে এই ঘটনাটি স্মরণ এবং এ থেকে শিক্ষা দূষণীয় নয় বরং তা আরও মহিমান্বিত হবে।
সবশেষে দুইটি বিষয় না বললেই নয়,
ইসলামের দালিলিক কোন সম্পর্ক নেই,এই ধারনাটি ইসলামে নতুন সংযোজিত অনর্থক অনুষ্ঠান।যা বিদআত এবং বাতিল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু আবিষ্কার করলো যা, এর অংশ নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী, মুসলিম]
তাই এই ব্যাপারে খুব সচেতন হতে হবে সেই সাথে এই দিনটির ফজিলত কে যেন আমারা আমাদের জীবনের ও আখিরাতের জন্য নিজের করে নিতে পারি সে কথাও স্মরণ রেখে ক্ষমা আর রহমত চাইতে হবে।
হযরত আলী রা. কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, রমযানের পর আর কোনো মাস আছে কী, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূল সা. এর নিকটও জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূল সা. বললেন, ”রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে,
যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন।” (জামে তিরমিযী, ১ ১৫৭)
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে কবুল করুন।
আর লিখাটি পড়ে অবশ্যই অন্যকে জানাতে ভুলবেন না।
বিষয়: বিবিধ
৯৩৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর বর্তমানে আমাদের দেশে যা হচ্ছে তার সাথে ইসলামের বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নেই.
এই কথাটা কতটুকু সঠিক??? বিষাদ সিন্দু পড়ে আসল ইতিহাস জানাযাবে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন