কি নামে ডাকবো?পর্বঃ ২

লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ২২ জুন, ২০১৬, ১০:৩১:৪৬ সকাল

২১শে ফেব্রুয়ারি।

সংখ্যাটি শোনার সাথে সাথেই একটি বিষয় সামনে চলে আসে,"ভাষা দিবস,৫২,পাকিস্তান আর উর্দু"

গর্বের,দুঃসময়ের,ঘৃণার আর ক্ষোভের।উপরের ৪ টি শব্দের সাথে পরের ৪ টি শব্দের বেশ মিল।

ভাষা দিবস=গর্বের

'৫২=দুঃসময়ের

পাকিস্তান=ঘৃণার

উর্দু=ক্ষোভের।

আমি আপনি সবার কাছেই ব্যাপারগুলো কমবেশি সমান।তবে এই সমানের সম্মান টুকুকে পুঁজি করে চেতনার পুঁজিবাদ দের দুর্বিষহ চেতনাবাজির গ্যাঁড়াকলে দেশ।আর এ কথা বললে সফলতার কথা নয়,এক ঝাঁক ব্যার্থতা আর যন্ত্রণার চিত্রই ভেসে উঠে।যাই হউক ব্যার্থতা নিয়ে আমার আলোচনা না আজ।

আমার আলোচনা এই কয়েকটি দিবসের রাজনীতি,আর খুনাখুনি,মারামারি,হানাহানি নিয়ে।যে গর্বের অংশীদার হয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের গড়নে ব্যাস্ত থাকতাম সেটি না হয়ে এই কিছু দিবস দিয়ে দেশকে করা হয়েছে ভাগভাগ,ঘরে ঘরে লাগানো হয়েছে আগুন আর মানুষকে বানানো হয়েছে গোলাম।

রাজনীতিবিদদের কাজ দেশের উন্নয়ন করা কিন্তু তারা সেই কাজ না ক্রে কয়েকটি দিবসের চেতনার ট্যাবলেট খাইয়ে মানুষকে ঘুম পারিয়ে যে গাল গল্প সাজিয়ে রেখেছে আর মানুষ তা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে পর্যন্ত রক্তারক্তি করছে।

প্রতিদিন কোন কথা হলেই বাঙ্গালী জাতি এই বাঙ্গালী জাতি সেই,আমাদের আছে ৫২,আমরা বাংলার জন্য জান দেই,দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে,অমুক দেশের বাচ্চাটি বাংলায় জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে,অমুক দেশে(সিয়েরা লিওন) ভাষা দিবস অমুক ভাবে পালিত হয়েছে।সাথে আরেকটি লাইন জুড়ে দেয়া হয় এই পাকিস্তানি উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল,এটা এই,এটা সেই।

সব কথার শেষে এক দলকে খোঁচা দিয়ে রাজনীতির ময়দান ঠিক করা,আর জনগণের ইমশনের জায়গায় হিট করে জনগণকে অন্ধ করে রাখা যেন চেতনাবাজদের সবথেকে ফরজ কাজ হয়ে গিয়েছে।

বোকা জনগণ যে ধারার পিছনে নাচো আর বাংলা বাংলা করো তার ইতিহাস শোন,বাইরে যারা থাকে মানে দেশের বাইরে যারা থাকে তারা এই বিষয়টা ভালো বুঝতে পারবে।

পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন আর বাংলা বাংলা করো না কেন,এবং অত্যান্ত ক্ষোভের সাথে উর্দুকে ঘৃণা করো না কেন আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশের জনগণ বাংলা শিখে নাই বাঙ্গালীদের সাথে কথা বলার জন্য বরং বাঙ্গালীরা হিন্দি,তামিল,ইংলিশ তো আছেই এমনকি উর্দু শিখে পাকিস্তানিদের সাথে কথা বলার জন্য।এই শ্রেণীতে ভাগ করে দেয়া বাঙ্গালীরা না শুধু বরং চেতনার ফেরিওয়ালারাই পোলাও রোস্ট খাওয়ার মত মজা ক্রে হিন্দি উর্দু শিখে এবং এই ভাষায় কথা বলতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করে এবং বাংলাদেশে গিয়ে বাঙ্গালীদের চেতনা শিখায়।যে পাকিস্তান কে এত ঘৃণা আর উর্দুকে তাচ্ছিল্য করা হয় সেই পাকিস্তানিরা কিন্তু বাংলা শিখে বাঙ্গালীদের সাথে কথা বলে না বরং বাঙ্গালীরা উর্দু শিখে পাকিস্তানিদের সাথে কথা বলে।

আপত্তি নেই তবে চেতনাধারিদের অবয়ব আর পশ্চাতদেশের অভিন্ন ছবিটা ভেসে উঠে দু চোখে।

তারপর আসি,সাধারণ জনগণ এখনো বাংলা কে অনেক কিছু মনে করলেও চেতনাধারিরা ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে ছাড়া কোথাও পড়ায় না,এমনকি বাংলাকে তারা বাস্তবিক অর্থে ঘৃণার চোখেই দেখে।ইংলিশ বা হিন্দি উর্দু বলতে পারলে যেন তৃপ্তির ঢেউ উঠে।এটা বাইরে নয় দেশের অভ্যন্তরের কথা বলছি।

বাংলায় পড়াশোনা করা একটা ছেলের দাম আমরা কতটুকু দেই?অনেকে তো তাকে ছাত্রের কাতারেও রাখতে ছায় না।এই কি ভালোবাসা?

এ এমন এক ভালোবাসা যে বেশিরভাগ মানুষ শুদ্ধভাবে ঠিক মত বাংলাই বলতে পারে না এবং শিক্ষিত জনগণের বিশাল অংশ তো বাংলায় কথাই বলতে পারে না।ইউটিউবে গিয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারির একটি সাক্ষাতকার দেখলে দেখতে পারবেন এক বিদেশিনী পরিপূর্ণ বাংলা বললেও বাঙ্গালী সেটা পারেনি।

অতীতের বাঙ্গালী কেমন ছিল জানি না,তবে বর্তমানের বাঙ্গালী যে চরম নির্লজ্জ একটা জাতি তা হয়তো আমাদের উপলব্ধির মধ্যেও নেই,যারা এসব ফালতু বিষয় নিয়ে গর্বে গর্বে গর্বিত হয়ে সারদিন নাক ডেকে ঘুমায় আর ইন্ডিয়ার সরকারী ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চাকরীর বিজ্ঞপ্তি দেখে তাদের কে খুশী করতে মানুষ বলি দেয় তাদের মত অপদার্থ শাসক আর তাদের অনুসরণ করা এমন অপদার্থ জাতি পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা আছে কি না আমার জানা নাই।

পৃথিবী যখন এগিয়ে যাচ্ছে আমরা তখন কয়েকটা দিবস নিয়ে কি লঙ্কা কাণ্ডই না করছি।

যোগ্যতা ছাড়া শুধু বংশ চৌধুরী একথা বললে যেমন সম্মান বাড়ে না তেমনি কিছু দিবস শুধু সামনে আনলেই জাতি মাথা উঁচু করে দাড়ায় না।

দুইটা বিষয় ক্ল্যারিফাই করে রাখি,ব্যাক্তিগতভাবে আমি হিন্দি বা উর্দু বুঝলেও আমি এ ভাষা বলার চেষ্টা করি না,এবং সেই কারণে এক ইন্ডিয়ান আমাকে বলল হিন্দির মত ভাষা তুমি বলবা না?আর পরের দিন আমি তাকে বাংলায় ডেকে কিছু কথা বলছিলাম,তখন সে আমাকে বললে সে বুঝে না,আমি তাকে বললাম তুমি বাংলা পারো না?তাহএল আমি কেন হিন্দি শিখবো বরং তুমি এর পর থেকে আমাকে কখনো হিন্দিতে কিছু বলবা না,হয় বাংলায় নয়তো ইংলিশে।

এই হিম্মত কয়জন বাঙ্গালীর আছে?

এবং দ্বিতীয়ত আমি কিছু পাকিস্তানিদের সাথেও জব করেছি।আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি,পৃথিবীর অন্যতম বর্বর জাতি হল পাকিস্তানীরা।অত্যন্ত জঘন্য।

শেষের দুইটা উদাহরণ দেয়ার পিছনে কারণ হল উপরের লেখা নিয়ে চেতনাধারিরা আমার বিরুদ্ধেও চেতনার বাঁশী বাজানো শুরু করবে তাই নিজেকে ডিফেন্ড করলাম।

তারপর প্রশ্ন এরকম মাথা মোটা জনগণকে নি নামে ডাকবো?

বিষয়: বিবিধ

১০৪৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372850
২২ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:২৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ডিজিটেল মগজ খালি মেধাসূন্য বিরবিত্রম ডাকলে ভালো হয় ধন্যবাদ
২৬ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:০২
309797
তরবারী লিখেছেন : জী ভাই
১৬ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৮:৩৮
312035
কুয়েত থেকে লিখেছেন : مرحبا بكم بارك الله فيك وجزاك الله خيرا وشكرا لك Good Luck Good Luck
372867
২২ জুন ২০১৬ রাত ০৮:২৫
শেখের পোলা লিখেছেন : হাজার বছরের সেরা বাঙ্গালী যা মরহুম আব্বা হুজুর বলেছেন আর ঢাকার ভানু বলেছেন পূর্ব বঙ্গীয়রা বাঙ্গাল আর পশ্চিম বঙ্গীয়রা বাঙ্গালী মানে পুং লিঙ্গ আর স্ত্রী লিংগের তফাৎ। দুটোতেই আমরা জিতবো। সাহসের জন্য ধন্যবাদ।
২৬ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:০৩
309798
তরবারী লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File