গল্পঃজানাজা

লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ২৪ মে, ২০১৬, ০২:০৩:৩২ দুপুর

এই শুনছো আমাদের ছেলের জন্য কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ ঠিক করে রেখেছি-রান্না ঘর থেকে চিৎকার করতে করতে কথাগুলো বলছিল ছোট্ট বাবু তাহসান এর মা।

তাই নাকি,তা কি ঠিক করলে?-কিছুটা আদর,আগ্রহ আর তাচ্ছিল্য সব মিলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো বাবা।

-আমি ঠিক করেছি আমাদের বাবু বড় হলে অনেক বড় ডক্টরেট হবে,আমি একেবারে ছোট থেকেই তার পিছনে লেগে থাকবো।তাকে গান শিখাবো,আবৃত্তি শিখাবো।

ও আচ্ছা আরও আছে,অভিনয় শিখাবো।

-তাই নাকি?এত কিছু?তুমি কি সত্যই এসব ভাবছো নাকি?

-হুম,সত্যি সত্যি ভাবছি,মিথ্যা মিথ্যা ভাববো কেন?কেন তোমার কোন ভাবনা নেই?

-হুম,বুঝলাম,আছে কিন্তু সেটা অন্যরকম,তোমার ভাবনার বিপরীত।

-এই বল না শুনি,কি ভাবনা?

-এই ধরো,আমাদের তো একটা মাত্রই ছেলে,আমাদের সম্পত্তিও অনেক,বিয়ের প্রায় অনেক বছর এই একটা মাত্র ছেলেই হল।আমাদের তো আর কেউ নেই।একদিন মরতেও হবে,এই ছেলেই হবে সেইদিন আমাদের জন্য পুণ্যের।সে আমাদের জন্য দোয়া করবে,আমাদের জন্য সে আশীর্বাদ হবে,তাই তাকে একজন আলেম বানাবো,ভাবছিলাম।

-কি?তোমার মাথা ঠিক আছে তো?তুমি সত্যি সত্যি এরকম ভাবো নাকি?

- হুম,সত্যি সত্যি এরকম ভাবি।কেন বাবুর মা,তোমার পছন্দ হয় নি?

-মাথা খারাপ?জয়নাল সাহেবের ছেলের দিকে তাকাও,আসমা আপার মেয়েটা?আহ তাদের কত সুনাম,লেখাপড়া করছে,সবাই তাদের প্রশংসা করে।তাদের সাথে কম্পিটিশান করবো,এটা আমার অনেক শখ,আমার ছেলে তাদের উপরে থাকবে,আর তুমি এসব কি ভাবো?

-আচ্ছা এইসব পড়াশোনাও করবে,কিন্তু মুল পড়াশোনা থাকবে আলেম হওয়ার জন্য।

-কি আশ্চর্য !আলেম না কি বলছ?সেসব হতে কি পড়াশোনা করতে হয়?বয়স বাড়লে এমনি হবে।এখন দুনিয়াটা কম্পিটিশান এর যুগ।ওইসব ভুত মাথা থেকে ছাড়ো,আমি আমার ছেলেকে ওসব পড়াতে পারবো না।ওকে আমি ডক্টরেট বানাবোই।

-আচ্ছা আমি কি না করেছি,তবে সে কিছুদিন মাদ্রাসায় পরুক,কিছু ইসলামী জ্ঞান ও অর্জন করুক।

-দেখো আমি সাফ সাফ বোলে দিচ্ছি,আমি এসব পড়াতে পারবো না,আমার ছেলে আমার মুখ উজ্জ্বল করবে,আমি অন্যকিছু বুঝি না।

প্রচণ্ড জেদ আর বিরক্ত নিয়ে তাহসানের মা ক্ষেপে উঠলো।

আচ্ছা আচ্ছা,তাই হবে তুমি যা বল,তাও রাগ করো না।এই বোলে তাহসানের বাবা তাকে সান্ত্বনা দেয়।

আস্তে আস্তে ছেলে বড় হয়,খুব ভালো সে পড়াশোনায়,পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এও খুব পারদর্শী হয়ে উঠে।জীবনের তাগিদে একসময় দুনিয়ার সব কিছুতে প্রথম হতে তাকে।তাহসানের মা তাহসান কে নিয়ে সে কি গর্ব।

দেখতে দেখতে ছেলে একদিন সত্যি ডক্টরেট করতে যায় আমারিকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড এ।

তাহসানের বাবা ও ছেলেকে নিয়ে গর্ব করে তবে মনের গভীরে পুষে রাখে একঝাক দুঃখ।ছেলেটা নামাজ পড়েনা এমনকি পড়তেও ভুলে গেছে।এই দুঃখ সে কাউকে বুঝাতে পারে না।

নানা ভাবনা ভাবতে ভাবতে একদিন তাহসানের বাবা মারা গেলো।

একই দিনে তাহসান ও ডক্টর হয়ে দেশে আসলো।

কিন্তু ভাগ্যরে নির্মম পরিহাস,বাবাকে আর সে ডক্টরেট ডিগ্রী উপহার দিতে পারলো না।

লাশ দাফন কাফন শেষ।জানাজার জন্য মসজিদে নেয়া হল।মসজিদের হুজুর বলল বাবার জানাজা ছেলে পড়ালেই সবচেয়ে কবুল হয়।

তাহসান দুঃখের মাঝে চরম ভয় পেয়ে যায়।জানাজা?সে পড়াবে?মানে কি?কিভাবে?

সে তো নামাজ পড়তেই ভুলে গেছে।

তৎক্ষণাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে সে বলল,হুজুর আমার এত কষ্ট হচ্ছে যে জানাজা পড়ানোর মত শক্তিও পাচ্ছি না।

হুজুর বলল,কোন সমস্যা নাই,ভাতিজা,তুমি দাড়াও আমিই পড়াচ্ছি।

তাহসান যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।যেন এক বিশাল বাঁধার পাহাড় সে সরিয়ে ফেলেছে।

জানাজা শুরু হল।কিন্তু জানাজার নামাজ ও সে কখনো পড়ে নাই।তাই আন্দাজে করতে করতে প্রতি তাকবীরে সে রুকু সিজদা করে বসে গেলো,হুশ ফিরে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।সেই একমাত্র বসে।

কতক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে সবার দিকে তাকিয়ে থেকে বাবার লাশ ফেলেই তাহসান বাড়ির দিকে দৌড় দিলো।

আম্মু,আম্মু ও আম্মু তুমি আমাকে কি শিখালে আম্মু?আমার মত হতভাগা ছেলে বাবার জনাজাটাই পড়তে পারলাম না-বলে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।

তাহসানের মা ফিরে গেলো ২৬ বছর আগের স্মৃতিতে-আহঃ আমারই কারণে আজ এই সব!

আফসোসের প্রহর বাড়তে লাগলো,লাশ কবরে শুয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করলো।রাত ও হয়ে এলো।

বিষয়: সাহিত্য

১১২৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369980
২৪ মে ২০১৬ দুপুর ০২:২১
আফরা লিখেছেন : গল্প হলে ও একেবারেই বাস্তব । বর্তমান সমাজের বেশীর ভাগ বাবা, মাই তার সন্তানকে ডক্টর , ডাক্তার, ইন্জিনিয়র বানানোর স্বপ্ন দেখে ।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।



২০ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৯
309332
তরবারী লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
369982
২৪ মে ২০১৬ দুপুর ০২:৩৮
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝ দান করুক, আমিন।
২০ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৯
309331
তরবারী লিখেছেন : আমীন
370002
২৪ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
আফরা লিখেছেন : গল্প হলে ও একেবারেই বাস্তব । বর্তমান সমাজের বেশীর ভাগ বাবা, মাই তার সন্তানকে ডক্টর , ডাক্তার, ইন্জিনিয়র বানানোর স্বপ্ন দেখে ।

পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকুমুল্লাহ..
২০ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৯
309330
তরবারী লিখেছেন : ওয়ালাইকুমাসসালাম,জাজাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File