আহাঃ দেশপ্রেম !
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ০৮ মার্চ, ২০১৬, ০১:১৪:৪৮ দুপুর
বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান ম্যাচ গুলো আমেজের,চেতনার,রাজনীতির আর উন্মাদনার।৩ টি দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে খেলা নিয়ে খেলার বাইরেও বাড়তি উন্মাদনা সৃষ্টি করে,করতে পছন্দ করে।স্পেশালি ব্যাপারটি ক্রিকেটের মধ্যেই বহুলাংশে সীমাবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও আসলে তা নেই।
আসলে প্রতিযোগিতা মূলক কোন কিছুতে শুধু উপমহাদেশের এই দেশগুলুই যে উন্মাদনার উত্তেজনাতে কাঁপে তা শুধু নয়,ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে এক দ্বৈরথ তৈরি করেছে,ফুটবলে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড এরকম নানা খেলায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী বলে কিছু শব্দ এবং তার উত্তেজনা বিরাজমান।
যখনই এসব দেশগুলো একে ওপরের বিরুদ্ধে খেলে তখন মনস্তাত্ত্বিক বিজয়ের জন্য খেলার পূর্বেই দর্শক থেকে শুরু করে খেলোয়াড় পর্যন্ত সকলেই কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি করে,বাক্য বিনিময় করে,কথার তীর ছুঁড়ে দেয়।খেলার মাঝেও এরকম বেশ কিছু উত্তেজনা দেখা দেয়।
তবে পাক-ভারত-বাংলাদেশে এই ব্যাপারগুলো এসব নিছক উত্তেজনার চেয়েও কিছু বেশী।এখানে ধর্ম একটি বিষয়,জাতিসত্তার অবস্থান একটি বিষয় আর বিষয় কিছু বিষ।
এই বিষবাষ্প এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে বাংলাদেশ সরকার এটাকে পুঁজি করে দেশীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি শুরু করেছে,যা নিতান্তই হাস্যরসের উপাদান হয়ে গেছে।
৭১ এর সাথে পাকিস্তান আর নানা কারণে ভারতের সাথে জনগণের যে দ্বৈরথ এমন আজব দ্বৈরথ পৃথিবীর কোথাও নেই।নিজের ঘরের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়ে অন্য দেশের প্রতি ভালোবাসা,অপবাদ এসব করে দেশপ্রেমের যে নিদর্শন বাংলাদেশ করে তা ঘৃণ্যই শুধু না ভয়ঙ্কর অসুস্থ মানসিকতাও বটে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার সময় ৭১ এর পুনরাবৃত্তির মিথ তৈরি করা আর ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় ভারতের চলমান জুলুমের জবাব দেয়ার মিথ তৈরি করা যেন এক ফ্যশন এ রূপ নিয়েছে শুধু তাই নয় এখানেও দুইটা ভাগ হয়ে দেশের চেয়ে দশ বড় করার নির্লজ্জতা করতেও কেউ ছাড়ছে না।
কিন্তু কেন?পাকিস্তান যদি এতোটাই ঘৃণ্য হয় তবে তাঁদের সাথে খেলার বা তাদেরকে এদেশে আসার অনুমতি দেয়াই তো বেআইনি হবে,অপরাধ হবে,আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি হয় তবে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ কি সত্যিই ঠুনকো অথচ বর্তমানের প্রচারিত গল্পের মিথ্যা কল্পনার নাম?
ভারতের বিরুদ্ধে খেলার মানে কি ফারক্কা বাঁধ বা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিজয়ের নাম?যদি তাই হয় তবে ২০১৫ তে তো নিশ্চয়ই আমরা আমাদের স্বাধীনতার অস্তিত্ব কে টিকিয়ে ফেলেছি বা হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতির ক্ষতি পুষিয়ে ফেলেছি,তাই নয় কি?
প্রধানমন্ত্রী যখন সম্মানের আসনে বসে বাস্তবতা,উন্নয়ন আর বিবেকের রাজনীতি কে গলা টিপে হত্যা করে আবেগের দুর্বল অংশ নিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতে উঠে শুধু মাত্র পাকিস্তানের সাথে খেলার দিন মাঠে উপস্থিত হয় তখন খেলা যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের একটি মোক্ষম হাতিয়ার করে বানিয়ে দেয়া হয় তাতে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকে না।
জার্মানি ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেছিল বেহুদা খেলা বলে,বাঙ্গালী জাতি সেই বেহুদা কে গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে এক হয়ে যায়,এক সূতায় গেঁথে যায়,আর আহ্লাদে আটখানা হয়,তাতে কার পেটে ভাত জমল আর কার ঘর আলোকিত হল?ইন্ডিয়ার কি ক্ষতি হল দেশের কি এমন লাভ হল?
মাশরাফি অনেক ভালো বলে,ভালো নেতা,তাকে অনুসরণ করা যায়,তবে মাসরাফি যে বলেছে খেলাধুলা শুধুই বিনোদন এর মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক সত্ত্বার বিকশনের তেমন কিছু নেই এই কথা কি আপনাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না?
ভারতের সাথে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি,উন্মুক্ত আকাশে ভারতের সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিয়েছে দেশকে আর অবৈধ চোরাইপথের অস্ত্র,মালামাল দেশের আইনশৃঙ্খলা,অর্থনীতিকে যেভাবে ধ্বংস করছে জাতি হিসেবে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেন কয়জন?শুধু ক্রিকেটে ১১ জনের পিছনে তেল ঘষে দেশপ্রেম?
বিষয়: বিবিধ
১০৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন