শেকড়ের আকুতি
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ০৩ মার্চ, ২০১৬, ০৫:৩১:৫৫ সকাল
জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন আর বাস্তবতাকে,নিজের অস্তিত্বের পিছনের অংশকে অস্বীকার করা এক বিষয় নয়।সময়ের সাথে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে এটাই স্বাভাবিক।তবে জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পর তার চেয়ে ভিন্ন বা নিচ অবস্থার কোন অবস্থা দেখে উষ্মা প্রকাশ বা খেদ প্রকাশ সঙ্গত কারণে কোন মনুষ্যত্বের লক্ষণ নয়।
এই যেমন ধরেন,বাংলাদেশের সবাই মুটামুটি গ্রাম থেকে আসা অর্থ্যাত শিকড় গ্রামেই গ্রোথিত।সেই মানুষটাই শহরে এসে যদি কাঁদা দেখে বলে ছিঃ কাঁদা!কিভাবে সম্ভব বা কাঁদা মাখা কাউকে দেখে কি বিচ্ছিরি কি বিচ্ছিরি বলে গালি দেয়া শুরু করে তবে এটা নিতান্তই নিজের সাথে নিজের প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় এবং বস্তুতপক্ষে এটা নোংরামি এবং অসভ্য কাজ।
একটা মেয়ে শহুরে পাড়ায় নতুন এসেছে।থাকছে কিছুদিন।গ্রাম থেকে তার স্বামীর এক খালাতো বোন এসেছে তাঁদের বাসায় বেড়াতে।খালাতো বোন মাথায় তেল দেয়।শ্যাম্পুর সাথে খুব বেশী পরিচিত না।সে গোসল করে এসে মাথায় তেল দিলো।ভাই বউ কয়েক দিন ব্যাপারটা লক্ষ্য করে দেখল।রাতে স্বামীর সাথে ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ শুরু করলো তোমার বোন এমন ক্ষেত ছিঃ,মাথায় তেল দেয়।আমি এসব মানুষকে রাখতে পারবো না,তার সাথে এক সাথে থাকতে পারবো না।অথচ ভাবী কিন্তু তেল দিতে দিতেই শৈশব থেকে কৈশোর,কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করেছে,গ্রাম কে আলিঙ্গন করেছে।আজ সে পাশেই থাকতে পারছে না।
গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা এক ব্যাক্তির সাথে গ্রামের এক লোক দেখা করতে এসেছে।এসে ফোন দিলো ভাই কিভাবে আসবো একটু পথটা বলে দেন।নব্য শুহুরে বলা শুরু করলো ধুর মিয়া এইটাও পারেন না?অথচ একদিন সে তার মামার হাত ধরে এই শহরের অলিগলি চিনেছে।
স্বভাবগতভাবেই মানুষ ফুটানি দেখায়,এই যেমন কেউ কারো বাসায় বেড়াতে গেলো,গিয়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে বলতে মুখের অঙ্গভঙ্গি এমনভাবে করতে থাকে যেন সেই একমাত্র এই ভাষার ঠিকাদার বাকীরা তার পেয়াদা,গোমস্তা।
কোন এক অনুষ্ঠানে শুনছিলাম এক অতীব ভদ্র মহিলা তার কাজের মেয়ের ব্যাপারে মুখ বাকীয়ে বলতেছে গেলাম গা,খাইতাম না এইসব কোন ভাষা!আমি প্রথমদিনেই বকেছি এসব ভাষা বলা যাবে না।অথচ যদি খোঁজ নিয়ে দেখা যায় উনার বাবা মা বা দাদা দাদি কিন্তু আঞ্চলিক ভাষায়ই কথা বলতেন।
বড়লোক কেউ যখন গরীব কোন আত্মীয়ের বাসায় যায় তখন বসা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ায় এমন সব ভাব ধরে যে মানে এই গরীব বাড়িতে যেন কোন মানুষ থাকে না,সব পশুপাখির পাল থাকে।
মেলামাইন প্লেইটে ভাত!সাদা কালো টেলিভিশন!স্টিলের গ্লাসে পানি!
ওহ মাই গড !
এরাই কিন্তু রাস্তার পাশে ফুটপাত থেকে মেলামাইনের বাটিতে ফুচকা খায়,স্কুলের সামনে ভেল পুড়ি,কাগজের ঠোঙ্গায় ঝালমুড়ি,আর ময়লার টিনে তৈরি আইসক্রিম খায় খুব মজা করে।
আমার এক চাচাতো ভাই তখন লন্ডন থাকে,আমাদের বাসায় গেলো।আমার আম্মা তাকে ভাত মাছ ভাঁজি,গরুর ভুনা আর সম্ভবত কি জানি খেতে দিয়েছিল।হুট করে চেল আসায় অন্য তেমন কিছু ছিল না।যাই হউক দেয়ার পর সে কতক্ষণ কোন কিছু না বলে এদিক সেদিক তাকানো শুরু করলো।ইতস্তত বোধ করা দেখে আম্মা তাকে জিজ্ঞাসা করলো কিছু লাগবে কি না।সে বলল আসলে চাচী নাইফ এন্ড ফর্ক(ছুড়ি এবং কাঁটা চামচ) হবে?
স্বভাবতই খাঁটি বাঙ্গালী পরিবার,কাঁটা চামচ থাকলেও খাওয়ার ছুড়ি ছিল না।তাকে কাঁটা চামচ আর একটা নরমাল স্পুন দেয়া হল।সে কিছুক্ষণ গুঁতাগুঁতি করে মাছের কিছু অংশ খেলো,কিছু ভাত আর এক দুই টুকরো মাংস খেয়ে বাকী টুকু রেখে উঠে গেলো।আমি বেশ অবাক হয়ে ভাবলাম বিদেশ গিয়ে কি পরিবর্তন হয়ে যেতে হয়?
কথা সেখানেই শেষ আসলে না।আমিও একদিন লন্ডন আসলাম।দেখি ভাত প্লেইটে,থালা ভর্তি,হাত দিয়ে কচলিয়ে কচলিয়ে মুট ভরে খাচ্ছে।
দেখলাম শেয়ালের গাঁয়ে চাদর চড়িয়ে সিংহ সেজেই এরা দেশে যায়,করে অপমান,ধুলিস্যাত করে মানবতা,নিচ করে সত্ত্বা,পাগল করে মানব আত্মা কে।
আবার কেউ কিছুদিন বিদেশে থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ ভারী ভারী কথা বলে।
বাংলাদেশ ! একটা থাকার জায়গা হল!ধুলা,ময়লা,সিকিউরিটি নাই।অথচ জীবনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় এই বাংলাদেশই তার সব কিছুর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।সেই ধুলা মেখেই যৌবনে পাল তুলে তাল ধরেছিল।শুধু তাই নয়,তারই জন্মদাতা পিতা,মাতা,ভাই বোন আত্মীয় স্বজন সবাই সেই মাটিতে বেঁচে আছে দিব্যি সুখের হাসি নিয়ে।
মানুষের দিব্যি ছুটে চলা হল জীবনের মানোন্নয়নের জন্য,জীবনের পরিবর্তনের জন্য।তবে সেই পরিবর্তন তো এমন নয় যে,মানুষ মানুষকে মুখোশের আড়ালে বন্দী করবে।যত মুখোশ তৈরি হয় মনুষ্যত্ব ততই বিলীন হতে থাকে।আলো নামক আলেয়া সব মানুষকে ঘিরে ধরে।মানবতা হয় ভুলন্ঠিত।
আমজনতা আম পারে,গুটি জনতা খেয়ে যায়,আম জনতা জ্বালায় পুড়ে,গুটি জনতার গুটির চালে।
সত্যিকারের মানুষ তো তারাই যারা শেকড়ের সাথে বন্ধন অটুট রাখে,বুক ফুলিয়ে বলে রোগা হলেও ওটাই আমার শেকড়।
বিষয়: Contest_priyo
১৪৭৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি সেই আগের মতই....।
যদি সেই মানসিকতা তৈরি করা যায়, আধুনিকতা মানে ঘৃণা নয়, আধুনিক মানসিকতা তাকে বলা যায় যিনি সেকড় মনে রেখে অন্যকে সম্মান দিয়ে এগিয়ে যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন