দুষ্প্রাপ্য দামী
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:২৬:৫৫ রাত
অনবরত কান্নার ঢেউ,মেয়েটি ও পাশ থেকে কেঁদেই যাচ্ছে।
আরে হল টা কি নীলা?এই কি হল,কোন কথা নাই শুধু কেঁদেই যাচ্ছ,কিছু একটা বল তো-ছেলেটি মোবাইলের এপার থেকে বারবার জিজ্ঞাসা করছেই।
আমি এখন রাখি,কথা বলতে ভালো লাগছে না বলেই মেয়েটি লাইন কেটে দিলো।
এই দাড়াও,শোন,কি হয়েছে বলে ...... বলতে বলতেই ওপাড় থেকে মোবাইল রাখা হয়ে গেছে।
স্বপ্নিলা আর রাতুল।এভাবেই মাঝে মাঝেই তাদের মধ্যে কথোপকথন চলে।
রাতুল স্বপ্নিলা কে অনেক ভালোবাসে,দিনের পর দিন সে স্বপ্নিলার স্বপ্নেই বিভোর হয়ে নিজেকে স্বপ্নিলার রাজকুমার আর স্বপ্নিলাকে বানায় তার রাজকুমারী।
কিন্তু স্বপ্নিলা রাতুলকে কখনোই ভালোবাসে না,তবে রাতুল কে সে খুব পছন্দ করে।যখনই সে কষ্ট পায় বা তার মন খারাপ থাকে তখন সে রাতুলের কাছে ছুটে আসে আর কান্না করে রাতুল কে শেয়ার করে।রাতুল খুব মন দিয়ে স্বপ্নিলার কথা শুনে,স্বপ্নিলার মন ভালো করার জন্য রাতুলের সে কি সারাদিন ব্যাস্ততা।যেন পৃথিবীতে এই একটি কাজের জন্যই সে এসেছে।স্বপ্নিলার জন্য কৌতুক বেড় করে তাকে শোনায়,তার জন্য মজার মজার কথা শিখে,তার জন্য নানা সুর শিখে,ঢং শিখে।
স্বপ্নিলাও এগুলুকে খুব পছন্দ করে।তাই সে রাতুলকে খুব পছন্দ করে।রাতুল স্বপ্নিলা কে খুব চেষ্টা করে তার করে নিতে।স্বপ্নিলা ও রাতুলকে মাঝে মাঝে বলে আমি তোমার বউ হতে চাই তবে পরক্ষনেই বলে নাহ,অসম্ভব তোমার বউ হওয়া সম্ভব না।
রাতুল আশায় বুক বেঁধে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।রাতুল ভাবে যোগ্যতায় সে স্বপ্নিলার যোগ্য না,তাই হয়তো স্বপ্নিলা তাকে নিয়ে মজা করে,তার আবেগ নিয়ে খেলে।
রাতুল সারাদিন সব কাজের মাঝে এক ভাবনায় ডুবে থাকে কখনো হয়তো স্বপ্নিলা তাকে এসে বলবে "এই রাতুল,আমি না তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি"।
কিন্তু এই ঘটনাটি কখনোই ঘটে না।তবুও রাতুল স্বপ্নিলাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কিছু ভাবতে পারে না।
এর মাঝে আবার যখন স্বপ্নিলা তার দুঃখ নিয়ে রাতুলের কাছে আসে তখন রাতুল দুনিয়ার সব ছেড়ে স্বপ্নিলার খুশীর জন্য আবার সেকেন্ড সময় ও কাজে লাগানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে।
স্বপ্নিলা সব বুঝে কিন্তু আবার বুঝেই তার সাথে আবার খারাপ ব্যাবহার শুরু করে।কয়েকদিন পড় যখন কান্না একটু কমে যায় তখন সে আবার উধাও হয়ে যায়।
বেচারা রাতুল সারাদিন কাঁদতে কাঁদতে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,ওই বুঝি তার রাজকুমারী ওই আকাশ থেকে তাকে ডাকছে,ফিরে আসছে তার কাছে।কিন্তু ঘণ্টা যায়,দিন যায়,সপ্তাহ কখনো মাস যায়।স্বপ্নিলা আর ফিরে আসে না।
রাতুল আল্লাহ্র কাছে বিচার দেয় কেন সে আমাকে এত কষ্ট দেয়।মনে হয় এই বিচার করার জন্যই বিধাতা ওই আকাশে বসে আছে।
এভাবেই রাতুল আকাশের পানে চেয়ে আর বিছানার সাথে কথা বলে স্বপ্নিলার স্বপ্নে বিভোর থাকে।
এইদিন ও স্বপ্নিলা আবার ফোন দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো।রাতুল খুশীতে কাঁপতে কাঁপতে স্বপ্নিলার ফোন ধরে আর কান্না শুনেই সে নিজেই কাঁদতে থাকে।তার মাঝে কথা না বলেই লাইন কেটে দেয়ায় রাতুল পুরো পাগলের মত হয়ে যায়।
রাতুল একের পর এক কল দিয়ে যায়,কিন্তু স্বপ্নিলা কোনভাবেই কল ধরে না।এক সময় কল দিতে দিতে রাত অনেক গভীর হয়ে যায়।রাতুল অনেক গুলো টেক্সট ম্যাসেজ পাঠায়।কিন্তু কোন উত্তর নেই।
রাত ২ টার দিকে স্বপ্নিলা রাতুল কে মিসকল দেয়।রাতুল সব কাজ ছেড়ে দৌড়ে খোলা মাঠে চলে যায় স্বপ্নিলা কে কল দেয়ার জন্য।
ফোন দিয়েই সে স্বপ্নিলা কে বলতে থাকে,কি হয়েছে,আন্সার দেও না কেন?আমি তো ... বলতে না বলতেই স্বপ্নিলা ধমক দিয়ে উঠে তুমি পেয়েছ টা কি?
এত বার কল দিচ্ছ কেন?
আমি তো ফেমেলিতে থাকি,মানুষ আছে,তোমার কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নেই?এত বড় হয়েছ কিন্তু মাথায় কি কিছুই নেই গাধা?
রাতুল হা করে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে স্বপ্নিলার কথা শুনতে থাকে,একটারও জবাব দেয় না,পাছে না স্বপ্নিলা আবার কষ্ট পায়।
স্বপ্নিলা এক টানা কতক্ষণ ঝাড়তে ঝাড়তে থামে এবং রাতুল কে জিজ্ঞাসা করে হুম এইবার বল কি হয়েছে এত কল কেন?
-রাতুল বলল তোমার কি হয়েছে?তুমি কাঁদছিলে কেন?
-কই না তো কিছু হয় নাই-স্বপ্নিলা কিছুটা না শোনার ভাব ধরে জবাব দেয়।
-কিন্তু তুমি তো কাঁদছিলে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
-মানে কি ?আমি কি কোন কারণে একটু কাঁদতেও পারবো না ?আমার লাইফ কি তুমি কিনে নিয়েছ নাকি?ন্যেকামি করো না।তুমি এখন বাচ্চা না।
-হুম জানি,আমি বাচ্চা না,কিন্তু বল না কেন কাঁদছিলে?
-আরে বললাম না যে এমনি।
-প্লীজ বল না,আমি সে থেকে এখনো খাই নাই,কি হইছে ?বল প্লীজ আমি তোমার পায়ে ধরি।
-বললাম না কিছু না এমনি,ভালো লাগছিলো না তাই।
-শুধু ভালো লাগছিলো না তাই ?
-তুমি আমাকে বিয়ে করবা ?
- আমি তো এক পায়ে দাড়া,রাতুল যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলো।
-এত খুশী হবার কি আছে?
-নাই মানে?রাজকুমারী আমাকে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
-কি করো?খাওয়াবে কি?রাখবে কোথায়?
-দেখো আমি যা করেছি যতটুকু করেছি সব তোমার জন্য,আমি ব্যবসা করবো,তুমি যাই বলবে তাই করবো,তোমাকে পেতে আমি এমন কিছু নাই যে করতে পারবো না।
- হুম।
-হুম কি ?
-মানে বুঝলাম,তুমি আমাকে বিয়ে করো।এই শোন শোন আব্বু আসতেছে বোধ হয় আমার রুমের দিকে,তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি।
রাতুল হ্যালো হ্যালো বলতে বলতে লাইন কেটে গেলো,মোবাইলটাও বন্ধ হয়ে গেলো।রাতুল যতবারই কল দেয় বার বার একই কথা "এই মুহূর্তে আপনার মোবাইলটি সংযোগ দেয়া সম্ভব না" ( চলবে )
-
বিষয়: সাহিত্য
১১০৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সপ্নিলা কে কেন রাতুল এতো ভালবাসে ??
সপ্নিলা কি মিস করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না
মন্তব্য করতে লগইন করুন