জন্মদিনের জন্ম ইতিহাস আর তার অনর্থকতা।
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৫৬:২৬ সকাল
জন্মদিন পালন আজকাল শুধু একটি নিছক মজা-ই না এটি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গেছে,হয়ে যাচ্ছে একটি ঐতিহ্য,সাথে জাতের মাপকাঠি বিচারের একটি উপায়ও বটে।হচ্ছে প্রতিযোগিতা বা বিশেষ আয়োজন।
প্রকৃত পক্ষে জন্মদিন পালন কবে থেকে বা কাকে উদ্যেশ করে প্রথম শুরু হয়েছিল এমন ইতিহাস অকাট্য বা প্রমাণিত কোণ তথ্য কোথাও পাওয়া যায় নাই,তবে যতদুর ইতিহাস পাঠ করে জানা যায় পূজা অর্চনায় লিপ্ত লোকসকল বা সম্প্রদায় এরকম একটি অনুষ্ঠানের উদ্ভাবক।শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোক বিশ্বাস অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই। এ দিনটি জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। ভাদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন।
হিন্দু ধর্মে দ্বাদশ অথবা ত্রয়োদশ বছরে জন্মদিন পালিত হয় ‘পৈত পরিধান উৎসব’ হিসেবে। বয়স পূর্তিতে শিশু একটি বড় সূতার কুণ্ডলী কাঁধের একপার্শ্বে ঝুলিয়ে রেখে পরিধান করে। এছাড়াও, এ উৎসবটি উপনয়ণ নামে স্বীকৃত। হিন্দুদের বর্ণপ্রথায় উচ্চতর বর্ণ হিসেবে ব্রাহ্মণ পরিবারের সংস্কৃতিতে এ উৎসবটি মূলতঃ বালকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
খ্রিস্টান সম্রপদায়ের মধ্যেও এই প্রথা মূর্তি পুজারকদের থেকে বিস্তার লাভ করেছে।এক সময় ইউরোপের দেশগুলোতে এই জন্মদিন পালন হতো মোটামুটি অনাড়ম্বর পরিবেশে,তবে আজকাল এই জন্মদিন নামক অনুষ্ঠানটি ইউরোপ,ভারত থেকে শুরু করে সারাবিশ্বেই আড়ম্বরপুর্ন ভাবেই পালন হয়ে থাকে।
ইসলাম এর দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মুসলমান হিসেবে বলতে হয় এই দিবস পালন সম্পূর্ণ বিদআত,ক্ষেত্র বিশেষ হারাম।তবে বিদআত কে ছোট করে দেখার উপায় নেই। কারণ প্রত্যেক বিদআত দূষণীয় এবং বর্জনীয় আর এর পরিণাম সম্পর্কে বলা হয়েছে প্রত্যেক বর্জনীয় কাজ-ই জাহান্নামের আগুন।
আবার এই বিদআত এক ধরনের পূজার মত হয়ে যায় যখন মোমবাতি জ্বালিয়ে অগ্নি উপাসকদের মত অবস্থার সাদৃশ্য অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এটা তো গেলো এক দিক,সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দেখা যায় এটা মুসলিম বাঙ্গালী সমাজের জন্যও মানানসই না।
তবে এ নিয়ে অনেকেই অনেক ভাবে অনেক সময় অনেক রকম আলোচনা করেছে।আমার আলোচনা সেসব নিয়ে না।
জন্মদিন পালন আসলে কেন বা এটা কোন দিক দিয়ে যুক্তিযুক্ত ?বিবেক দিয়ে প্রশ্ন করবেন নিজেকে আর উত্তর নিজেই ভেবে বলবেন।
@ আপনি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন সেই দিন কি কখনো ফিরে আসবে বা সে সেই দিনের মত সময় অবস্থান কি কখনো আসবে ?
@ সবচেয়ে বড় যে কথাটি সেটি হল এই জন্মের ব্যাপারে কারো ব্যাক্তির নিজের কোন যোগ্যতা বা বা ক্ষমতা নেই,এক মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে নির্মম কষ্ট সহ্য করে একটি সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করে অথচ সেই মানুষটি পড়ে উপেক্ষিত হয়ে একটি জন্মদিন পালন করা হয়।
এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভূমিকা স্রস্টার এবং বাবা মা এর মাধ্যমে পৃথিবীতে আগমন।
@ জন্মদিনকে একটি তারিখ বা দিনের সাথে মিলিয়ে স্মরণ করার অর্থ টা কতটুকু অর্থবহ!
-সামগ্রিক ভাবে যদি দেখা হয় তবে এরকম একটি দিন একটি ব্যবসা এবং মূলত অনর্থক কাজ।যদি কেউ মনে করে যে এই দিনটিকে আমি স্মরণ করতেই চাই তবে সে ছেলে অথবা মেয়েটির উচিত নিজের মা বাবার কাছে ছুটে যাওয়া এবং মা বাবা কে গিফট দেয়া বা তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো সেই সাথে স্রস্টায় আস্থাশীল হলে স্রস্টার শোকর আদায় করা।কারণ নিজের যোগ্যতায় নয় মা বাবার কল্যাণে স্রস্টার সৃষ্টিতে যেহেতু পৃথিবীতে আগমন তাই দিনটি নিজের জন্য নয়,বরং তাদের জন্যই হওয়া উচিত।
আবার অন্যদিকে একমাত্র বাবা মা-ই এই দিনটির কথা স্মরণ করতে পারে এই ভেবে যে আমাদের বুকের মানিক এইদিন আমাদের বুক জুড়ে এসেছিল।
যদিও প্রকৃত অর্থে জন্মদিন একটি অনাচারধর্মীয় অনুষ্ঠান তথাপি কেউ চাইলে উপরে উল্লেখিত দুইটি কাজ করতে পারে যা কৃতজ্ঞতার দিবস হিসেবে জীবন কে সুতোর টানে আবদ্ধ রাখতে পারে।
একজন মুসলমান হিসেবে এ কথাটুকু দিয়ে শেষ করতে চাই,জন্মদিন কোন উৎসবের দিন নয় বরং অসীম গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে ভয়ঙ্কর সঙ্কেত দিবস।তাই হাসির মাধ্যমে উদযাপন নয়,অনুশোচনা আর ক্রন্দনের মাধ্যমে পুন্যময় জীবনের জন্য নতুন করে শপথ নিয়ে দিনটিকে অতিবাহিত করাই অধিকতর অর্থবহ হবে।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন