নারীর শ্লীলতাহানির গোঁড়া কোথায় - শেষ
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২৪:৪৯ সকাল
আগের লিখা গুলোয় কিছু বাস্তব উদাহরন দিতে গিয়ে কিছু পর্ণ ধরনের কথা চলে এসেছে।যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দিতে হয়েছিল বাস্তবতা কে তুলে ধরতে।লেখাটি ও এমন এক বিষয়ে যে তার সাথে কিছু অগ্রহণযোগ্য অথচ বাস্তব কথা জুড়তেই হয়।
পাঠকদের বিভিন্ন মন্তব্য পাওয়ার পর লেখাটি নিয়ে শঙ্কিত হয়েছিলাম যে আসলেই কোন পথে হাঁটছি।তাই সাহস হচ্ছিল না যে এটিকে শেষ করি।তবে লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বিধায় সাহস করেই শেষ করতে নিলাম।অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আগের উদাহরন আর কথা গুলু জন্য শ্লীলতাহীনতার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।যদি নাই হবে তবে সুইজারল্যান্ড এ কয়েকদিন আগে মিনিস্কার্ট কে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা আসতো না।একটি পরিসংখ্যান ই যথেষ্ট এ কথা কে প্রমান করার জন্য যে কথিত নারীর প্রতি উদার হিসেবে পরিচিত পশ্চিমা বা অমুসলিম দেশ যেমন দক্ষিন আফ্রিকা,অস্ট্রেলিয়া,কানাডা,জিম্বাবুয়ে,খোদ আমেরিকার মত দেশগুলুতে ধর্ষণের হার এবং নারীর শ্লীলতাহীনতা পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় আশংকাজনক হারে বেশী।এ ধারাবাহিকতায় আমেরিকার অবস্থান পঞ্চম,যেখানে
প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে ৩০১ জন ধর্ষিত হয়।
অন্যদিকে ধর্ষণের কম হারের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ গুলুর প্রথম পাঁচটি-ই হল সউদি আরব,আজারবাইজান,ইয়েমেন,ইন্দোনেশিয়া,ওমান।যেখানে পঞ্চম স্থানে থাকা ওমানে প্রতি ১০ লক্ষ নারীতে মাত্র ১৮ জন ধর্ষিত হয়!
কথাগুলু কোন রূপকথার গল্প না,বাস্তব উদাহরন।
কেউ কেউ বলে যে ছেলেরা কেন একটা মেয়ের দিকে তাকাবে,সে যাই পরুক না কেন এটা তার ব্যাপার।এটা সত্য হত যদি কোন প্রাকৃতিক বিধান না থাকতো।সৃষ্টির দিক থেকে বিচার করলে ছেলে মেয়ে একজন আর একজনের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধন করবেই।একমাত্র হিজড়া আর নপুংসক ব্যাতিত এটাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।আবার বিজ্ঞান বলছে একটি ছেলের যৌন বাসনা জেগে উঠে তার দর্শন মস্তিষ্কে পৌছার মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে।যা কিনা ১০ সেকেন্ডের মধ্যে তাকে উন্মাদ বানিয়ে ফেলতে সক্ষম।এমন অবস্থায় তার চোখ যদি মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য একটি মেয়ের উপর পরে তবে ততটুকু সময়-ই যথেষ্ট ছেলেটিকে উন্মাদ করতে।সেক্ষেত্রে মেয়েটিকে তার নিজের সুরক্ষার্থে তার শরীর ঢেকে রাখাটাই শ্রেয়।তবে এক্ষেত্রে হয়তো আমার জন্য মৌলবাদ নামক শব্দটা প্রয়োগ করা হবে।কিন্তু আমি বলবো বোরখাই ঢেকে রাখা বুঝায় না।তবে বুকের উড়না গলায় রাখা কোন ঢাকাকে বুঝায় না।
কেউ বলে মনের পর্দাই বড়।সেটা অবশ্যই বড়,কারন এটা না থাকলে যত আবরন-ই দেয়া হউক না কেন কোন আবরন-ই ইজ্জত ঢেকে রাখতে পারবে না।তবে আবরন না দিয়ে তো আর মনের পর্দা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।যেমন একটি কলা খুব ভিটামিন যুক্ত।সেক্ষেত্রে যদি আমি বলি আমি কলা ছিলে বিক্রি করবো।সেটা কি কেউ কিনবে?যদিও ভিটামিন একই থাকবে?
এখন প্রশ্ন হল মেয়েদের এই শ্লীলতাহানির জন্য কি শুধু মাত্র মেয়েরাই দায়ী?নাহ,তা মোটেই না।তাহলে প্রশ্ন হল তাহলে কি আর সেই দায়ীগুলো?
প্রথমতই যে কথাটি আসবে,তা হল নৈতিক শিক্ষার অভাব।দ্বিতীয়
হল উপযুক্ত শাস্তি বাস্তবায়নের অভাব।
প্রতিটি ধর্মই নারীকে সম্মানের চোখে দেখতে শিখিয়েছে।কিন্তু ক্রমান্বয়ে আমরা যখন ধর্মীয় এইসব শিক্ষাকে বাদ দিয়েছি তখন সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।তবে ধর্মীয় এই কথাগুলো যদি বাদ ও দেই,তবে সামাজিকভাবেও আমরা দেখব এই সব অপকর্ম গুলোকে কেউ-ই ভালো বলবে না।কিন্তু সামাজিকভাবে আমরা এইসব অনৈতিকতার বিরুদ্ধে জোরালো কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না।যা সামাজিক অবক্ষয়ের নামান্তর-ই মাত্র।
আবার ধর্ষক বা ইভটিজারদের শাস্তি না দেয়াটা নারীদের সতীত্ব আর সম্মানের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।এক্ষেত্রে ইসলাম এইসব ধর্ষকদের জন্য শাস্তির বিধান রেখেছে।সেক্ষেত্রে কথা বলাটা এক শ্রেণীর কাছে মৌলবাদীর অংশ হলেও আমি শুধু একথা বলবো যে সমাজকে কিছু ভালো উপহার দিতে হলে ধর্মের কিছু নিতে তো দোষ নেই।পাশ্চাত্তে ইসলাম থেকে অনেক কিছুই নিয়েছে।যদিও তারা সেভাবে এটাকে প্রকাশ করে না।তাহলে আমাদের নিতে সমস্যা কোথায়।আর যদি নিতে সমস্যাই থাকে তবে নিজেরাই কঠিন কোন শাস্তির উপায় কেন আমরা বের করছি না এবং তা কেন বাস্তবায়ন করছি না?
ভারতে কয়েকদিন আগে আলোড়ন সৃষ্টি করা এক ধর্ষণের মৃত্যুর পর ধর্ষণের শাস্তি কি হতে পারে তার আলচনায় এক মন্ত্রী বলেছেন যে কোন ধর্ষণের পরে ধর্ষকের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলাই হবে তার উপযুক্ত শাস্তি।যদিও ধর্ষণের শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর পন্থাই ধর্ষণকে চিরতরে বিলুপ্ত করতে পারতো তার পরও ওই মন্ত্রীর শাস্তিও যদি প্রকাশ্যে করার ব্যাবস্থা করা হয় তবে এটাও হয়তো অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই,ধর্ষণ নিয়ে কোন রাজনীতি নয়,ধর্ষণ নামক সামাজিক একটি ব্যাধিকে ধ্বংস করতে একাত্মতা ঘোষণা করে ধর্ষণকে চিরতরে নির্মূল করাই হউক আমাদের অঙ্গীকার।নারী আমাদের মা,বোন,স্ত্রী।তাদের সম্মান রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব।সেই সাথে আর একটি কথা না বললেই নয়,বিজাতীয় সংস্কৃতি নয়,আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে পুনপদার্পন-ই আমাদেরকে ধর্ষণমুক্ত একটি সুন্দর সামাজিক ব্যাবস্থা উপহার দিতে পারে।নারীর শ্লীলতাহানির জন্য দায়ী পুরুষ নারী দুপক্ষই।তাই সবাইকে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন হয়ে এর প্রতিরোধ এবং উচ্ছেদের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
আগের লিখাটির লিঙ্কঃ
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/7640/onia/39450
বিষয়: বিবিধ
১০৬৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন