বিয়ে কি বোঝা নাকি রহমত !
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫৭:৩১ বিকাল
ইমাম সুহাইব ওয়েব একদিন এক আলোচনায় বলেছিলেনঃ “বিয়ে ইসলামে সবচেয়ে সহজ এবং আমাদের সংস্কৃতিতে সবচেয়ে কঠিন একটি বিষয়”।
গতকালের একটি স্ট্যাটাস থেকে নানারকম কমেন্ট দেখে আজ লেখাটির অবতারনা করলাম।বিয়েকে আমি ধ্বংসের কারন মনে করি না বরং আমি বর্তমান জাহেলিয়াতের বিয়ের কথা মনে করে বিয়েকে আমাদের জন্য বোঝা বলে ভাবছিলাম।যদিও এটা ঠিক না তবে !!!
>আংটি পড়ানো
>দামী কার্ড ছাপানো
>শুধু শুধু বা আভিজাত্য জাহিরের জন্য দামী কমিউনিটি সেন্টার/হোটেল ইত্যাদি ভাড়া করা
>শুধু মাত্র বিয়ের দিনের জন্য দামী পোশাক কেনা যা আর কখনও পড়া হয় না
>গায়ে হলুদ
>কনের/বরের সাজসজ্জায় অপ্রয়োজনীয় খরচ।
>অনুষ্ঠানে নারী পুরুষ একসাথে অবাধে মেলামেশার সুযোগ, নাচ-গানের আয়োজন
>গেটে টাকার জন্য বর-কনেদের বিব্রত করা, বাদানুবাদ
>বিয়ের দিনে সাজুগুজু আর অতিথি আপ্যায়ন করতে গিয়ে নামায না পড়া
এখান থেকেই শুরু করলাম।আপনি জানেন বিয়ে মানে হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক পূর্ণ করা।কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে আপনি কি সেটা মোটেই নিজের জন্য বা আপনার ছেলে মেয়ের জন্য ভাবেন ?চরিত্র ঠিক রাখা বা সমাজের অশ্লীলতা বন্ধে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যখন তখন এসব করতে গিয়ে একটি ছেলে ভাবতেই পারে বিয়ে করতে যে খরচ সে খরচ টার পক্ষে যেহেতু মিটানো সম্ভব না তাহলে এখন বিয়ে করার দরকার নেই,আরও পরে ! এই পরের সময়টুকু কি আপনি পাপ থেকে মুক্ত হতে পারছেন ?
বাদ দিলাম এই কথা,উপরে উল্লেখিত বিসয়গুলু কে কি ইসলাম সমর্থন করে?ইসলামের কোন ধারা মোতাবেক আপনি উপরের এসব সাঁজসজ্জা বা অপচয় গুলু করেন?
আল্লাহ তো কুরআনুল কারীমে জানিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকেঃ
“কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ”। [আল ইসরাঃ ২৬-২৭]
“খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না”। [আল আরাফঃ ৩১]
একটা ছেলে যদি বিয়ে করতেও চায়, তার প্রতিবন্ধকতা আসে — “তুমি তো এখনো তেমন আয় করো না“ অথচ এই আয় না করা ছেলেটা জীবনের একটা কঠিন সময় অতিক্রম করে, যদিও কোনভাবে ভয়াবহ কঠিন মুহূর্তগুলো পাশ কাটিয়ে একটা চাকুরি করে বিয়ে করতে যায়, তার সামনে কমপক্ষে একবছরের বেতনের সমান খরচের বিয়ের আয়োজনের বার্তা আসে। আমাদের এই দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু, তবু এই সমাজের মানুষগুলো বিশাল ঢাক-ঢোল আয়োজন ছাড়া বিয়ে না করলে তাকে গ্রহণ করেনা।
একটা বিয়েতে যত কম খরচ হয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সেই বিয়ে বেশি পছন্দের। আমরা কি আল্লাহর পছন্দের বান্দা হতে চাই, নাকি সমাজের দাস?
আমাদের আদর্শ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“সবচাইতে নিকৃষ্ট খাদ্য হচ্ছে সেই ওয়ালিমাহ এর খাদ্য যেখানে কেবল ধনীরাই নিমন্ত্রন পায়, গরীবেরা নয়”। [সহীহ বুখারী]
“সবচাইতে উত্তম বিয়ে হচ্ছে সহজতম বিয়ে (মোহরানার দিক থেকে)”। [ইবন মাজাহ, আবু দাউদ]
একটা বিয়ে যেখানে জীবনের জন্য সেখানে বিয়ের ভাবনা যখন হয়ে যায় বিয়ের দিনের জন্য তখন এমন অনেক কেই দেখেছি লক্ষ লক্ষ টাকা কর্য করে বা সুদে ধার নিয়ে বিয়ে করছে।এটাই স্বাভাবিক এই কারনে যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু একটি দেশ যেখানে মানুষের গর আয় কত? সেই দেশে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা কোন মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব না।আর দ্বিতীয় হল এসব তো লোক দেখানো,যদি লোক দেখানোর ব্যাপার থাকে তবে নিশচয় সেটা আল্লাহ্র কাছে সমদৃত না।
আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে গায়ে হলুদের মত এমন অনইস্লামিক অনুষ্ঠান কিভাবে করেন যার কোন ভিত্তি ইসলামএ নেই ?
নিজেকে মুসলমান দাবী করে ইসলাম না মেনে গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে বিয়ে নামক সহজ এবং ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে এত কঠিন করে তোলা শয়তানের ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।আর বিয়ে নামক পবিত্র একটি কাজ যখন নানা হারাম জিনিষ জাঁকজমক দিয়ে অন্যায়ভাবে শুরু হয়ে তখন এটা কি মনে আসে না যে প্রতিটা হারামের প্রায়শ্চিত্ত আপনি নিজেকেই করতে হবে ।তাহলে এমন বিয়ে হবার পর আপনি নিজেকে আপনি সুখী হিসেবে দাড় করাবেন কি করে ?
আল্লাহ্ প্রত্যেক মানুষের রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন,যে আপনার ঘরে আসবে বা আপনার পুত্রবধু করে আনবেন বা আপনার মেয়েকে যার হাতে তুলে দিবেন টার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ্ করে রেখেছেন।তাহলে আপনি ভয় কেন পাচ্ছেন ?আপনার বিশ্বাস যদি হয় ইমান তবে আপনার বিশ্বাস যে আল্লাহ্র প্রতি নেই সেটা বুঝতে পারছেন ?
ইসলামিক ভাইয়েরা কি ওয়াদা করতে পারবেন যে কোন ধরনের গাঁয়ে হলুদ না আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ে আপনারা করবেন না ?
অনেক মানুষ না খেয়ে আছে আর আপনি এক শাড়ির পিছনে কত খরচ করছেন যা আর জীবনে পড়া হবে না !
একটা বিষয় না বললেই নয়
আল্লাহ বলছেনঃ
“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”। [সূরা আর-রুমঃ ২১]
সঙ্গিনীকে জীবনের দ্বারে নিয়ে আসার মধ্যে আল্লাহ্ শান্তি নিহিত রেখেছেন,এটা কিন্তু সামাজিক একটি শৃঙ্খলা ও বটে।
কিন্তু এর সাথে একটি বিষয় জড়িয়ে গেছে যে বিয়ের বেহুদা খরচ চিন্তা করে মানুষ বিয়ের যে ফরয বিষয় দেনমোহর সে কথাই ভুলে যায়,এবং সামর্থ্য যদি থাকে ১ লাখ টাকার দেনমোহর দেবার তাহলে সেখানে ন্যূনতম দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় ১০ লাখ,আপনি এই দেনমোহর দিচ্ছেন কেন ? আল্লাহ্র দেয়া বিধান মানার জন্য নাকি সমাজের সেবাদাস হিসেবে সমাজের নির্দেশ পালনের জন্য ?
এটা কি আল্লাহ্র আইনকে violet করা নয় ?দ্বিতীয়ত আপনি দেনমোহর পরিশোধ এ গুরুত্ব না দিয়ে নানা বাহারি রং আর খাবারের আয়োজন করছেন তার কোনটা আল্লাহ্র দরবারে কবুল হবে বা না করলে গুনাহ হবে ?
“আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী ও মুসলিম]
ফিতনার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ফিতনার মধ্যে পড়লেন, পাশ-ফেল কিছু একটা করলেন।
এর থেকে সেই কঠিন পরীক্ষার দিকে না যাওয়াই উত্তম নয় কি?
ইব্রাহীম ইবন মায়সারা বলেনঃ তাউস আমাকে বলেছেন, “ হয় বিয়ে করো, নইলে আমি তোমাকে সেই কথাই বলবো যা উমার বলেছিলেন আবুল যাওয়ায়িদ কে, ‘দুইটা কারণ ছাড়া তোমার অবিবাহিত থাকার আর কোন কারণ দেখি না। হয় তুমি অক্ষম, নইলে অসচ্চরিত্র লোক”।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন