সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর বাস্তবতা-জীবনের অভিজ্ঞতা।
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ০৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:৪৮:৪৭ রাত
অতিতের একটি স্মৃতি বারবার মনে হয়,হত।ভাবতাম কেন এমন হল না,এমন হলে ক্ষতি তো হত না,বরং কতই না ভালো হত।জীবনের ধারা বা পরিবারের ধারা বা সমাজের ধারা হয়তো অন্যরকম হত।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কথা বলছিলাম,এটা একদিনের বিষয় না,যুগ যুগ ধরে চলে আসার বিষয়,এটা এমন একটা জিনিষ যার তাপদাহ এত ভয়ঙ্কর অথচ তার জ্বলনের ধরন এমন যে কুল কাঠ যেমন জ্বলে,আস্তে আস্তে ঠিক সেরকম।
প্রমথ চৌধুরি তার সাহিত্যের খেলা প্রবন্ধে সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলেছেন,আর সাহিত্যের বড় রূপ হল সংস্কৃতি।এলাকা,ভৌগলিক পরিবেশ আর ধর্ম ভেদে সংস্কৃতির ধর্ম ও ভিন্ন ভিন্ন হয়,তবে প্রত্যেক জাতির একটা নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে,একটা কৃষ্টি।এটাই নিয়ম।
শিশু শ্রেণী থেকে ক্লাস টুঁ পর্যন্ত পড়েছি একটি ইসলামিক স্কুলে,মানে জেনারেল স্কুল কিন্তু নাম ছিল ইসলামিক একাডেমিক স্কুল।বাবার বন্ধুরা স্কুলের শিক্ষক।বাবারও ইচ্ছা ছিল সেখান থেকেই এসএসসি পরীক্ষা দিবো,কিন্তু মায়ের ইচ্ছার কারনে ভালো স্কুলে চলে গেলাম।তবে সেই স্কুল এখনো আমাকে ডাকে।কারন টা এরকম যে,আমরা যখন রোজার বন্ধের পরে স্কুলে যেতাম তখন স্কুলের শিক্ষকরা জিজ্ঞাসা করতেন,কে কে রোজা রেখেছ ? বা রাখলাএ কয়টা রোজা রেখেছ ?এসব প্রশ্ন শুনে অনেকেই হাত তুলতাম,যারা তুলত না তাদের মনটা বিষণ্ণ দেখা যেতো।আর যারা তুলতাম তাদের মধ্যে যারা কম রেখেছে এমন হত তারা লজ্জা পেত,পরের বছর বেশী রাখার নিয়ত করতো।প্রায় দিন নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো শিক্ষকেরা,যেদিন পরতাম না বা কম হত,খারাপ লাগতো,তাই নামায পড়ার একটা প্রতিযোগিতা থাকতো।
পরে যখন ক্লাস থ্রি তে অন্য স্কুলে চলে গেলাম তখন খুব আশায় আশায় থাকতাম,শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের কেউ কোনদিন বলবে হয়তো কে কয় ওয়াক্ত নামায পড়েছ বা কে কয়টা রোজা রেখেছ ? নাহ দিন যায়,মাস যায়,বছর ঘুরে আমি পাইনি সেই প্রশ্নের বান।
আর কলেজে উঠে তো বাংলা স্যারের রস মাখানো গল্প আর জীববিজ্ঞান ম্যাডামের রূপ দেখেই দুনিয়া শিখলাম।কেউ হয়তো কথাটায় মাইন্ড করতে পারেন,তবে এটাই বাস্তব।
এখন ? সেই স্কুল গুলুতে কি শিখানো হয় ? প্রথমেই মেয়ে বাচ্চাদের কে ছোট থেকেই বিকিনি পড়ানোর অভ্যাস,কে কোন মুভিটা দেখেছে ,বা কে নাচ শিখে বা কে নাচ শিখছে বা কে হারমোনিয়াম বাজাতে পারে এগুলু ছোট মনেই ঢুকে যায়,ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
শুধু তাই নয়,ইসলামিক পরিবার গুলুর বাচ্চাদেরকেও যুগের দোহায় দিয়ে এসবে অভ্যস্ত করা হচ্ছে,বা কেউ ভাবে বাচ্চা মানুষ তো সমস্যা নেই,বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আসলেই কি তাই ?
শিশুরা কাঁদা মাটির মত,আপনি যে শেইপ দিবেন,সে ঠিক সেই শেইপ নিবে।আর একটা ছোট গল্প মনে পরে গেলো।এক বাড়িতে একজন মারা গেলো,তো একজন কাঁদছে আর বলছে,মারা গেছে এটা তো সমস্যা না সমস্যা হল আজরাইল বাড়ি চিনে গেছে।মানে এই যে অভস্থতা এটা একবার যখন শুরু হয়ে যায় তখন সেই বাচ্চাটি একসময় তাকে এসব করতে না দিলে সে বিদ্রোহী হয়ে উঠে।আর দ্বিতীয় হল এপ্নি যখন একবার বিকিনি পড়বেন,তখন আপনার লজ্জা ভেঙ্গে যায়।সেটা পরে খুব সাধারন ব্যাপার হয়ে যায়।
তার ফলে সমাজে কি হচ্ছে ?একজন ঐশীকে দেখলাম,বাবা মা কে হত্যা করেছে,আজকে এই লেখাটি যখন লিখলাম তখন হাতির ঝিলে প্রেমিক প্রেমিকার আত্যহত্যা করা।বিয়ে ভাঙ্গন,পরকিয়া আর নানা সামাজিক অসঙ্গতি।যারা এসব করছে তারা পাপকে পাপ মনে করছে না।সামাজিক মূল্যবোধ কমে গিয়েছে।শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়ে গেছে।
এক সময় বোর্ডে ভালো রেজাল্ট করা ছেলে মেয়েদের তাদের আদর্শ কে এই প্রশ্নের জবাবে বেশীরভাগের জবাব ছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আর আজকে ? আজকে তারা আদর্শ খুঁজে ঋত্বিক রোশন,জেমস বণ্ড বা শাকিরার মাঝে।
এগুলু এসেছে ইন্ডিয়ার সংস্কৃতি থেকে,তারা বিষ দিয়ে আমাদের মারেনি,আস্তে আস্তে একটা জাতিকে তার ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে তার হাজার বছর ধরে চলে আসা ভৌগলিক সংস্কৃতি থেকে বের করে দিয়ে এক বিশৃঙ্খল সংস্কৃতিতে আবদ্ধ করে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে পুরো জাতিকে।এখন আলো কে আর দেখে না,আলেয়াকেই আলো ভেবে বুকে জড়িয়ে নেয়।
আজ যদি সেই স্কুলের মত জিজ্ঞাসা করা হত তবে হয়তো আমরা একটি এক জাতি পেতাম,বিভ্রান্ত মানসিক কতগুলু প্রতিবন্ধী নিয়ে আশঙ্কা করতেহত না।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম প্রথম তো একটু বে-লাইনের কথা বের হতেই পারে । অনেকক্ষন চুপ থাকার পর কথা বলা শুরু করলে গলাতে জমে থাকা লালাতে কথা আটকে যেতে চায় , পরে খাখারি দিতে হয় - ব্যাপারটা সে রকমই মনে করবেন ।
আর উনি এবং ব্লগার চোথাবাজ সবসময়ই সব পোস্টে প্রথম কমেন্ট করার কনটেস্টে থাকে । প্রথম কমেন্টকারি না হতে পারলে উল্টা পাল্টা কমমেন্ট করে বসে।
আসলেই বলতে পারবো না আমাদের আসল সংস্কৃতি কোনটা ?
পোস্ট ভালো লেগেছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন