ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:১৩:৩৮ সকাল
পুরু লেখাটা পড়বেন ইনশাল্লাহ।
যুবক হানযালা
চাচার কাছেই বড় হয়েছে,চাচার খেয়ে চাচার পড়ে।মুহাম্মদ নামের ব্যাক্তিটির নাম কানে আসছিল।
স্রস্টার কথা,সুন্দরের কথা ! কি চমৎকার। কিন্তু ঈমানের পথে চলার সুজুগ নেই।
এবার সাহস করে চাচাকে বলেই ফেললো।
কেমন লাগে মুহাম্মদ কে ?
শুনেছি ভালো , তবে লকজনকে নাকি পৈত্রিক ধর্ম থেকে নতুন ধর্মে ধিক্ষিত করছে।তবে লোক ভালো।-চাচার মন্তব্য।
তাহলে কি আমরা তার উপর ইমান আনতে পারি না?- বালক হানযালার উৎসুক চাহনি।
কি ? এত্ত বড় সাহস ? - চোখ বড় করে চাচার ধমক।
আমি ভেবেছিলাম আপনি তার উপর ইমান আনবেন সেই সাথে আমিও- কিন্তু নাহ আপনি সে পথে হাঁটছেন না। আমি আর পারছি না , আমি তার প্রতি ইমান আনলাম।- বালক হানযালা এবার এক বুক সাহস আর শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে বলল।
তুমি কি জানো তুমি কি বলছ ? তোমাকে সব ছাড়তে হবে,এই বাড়ি,এই ঘর,এমনকি তোমার পরনের কাপড়।
আল্লাহ্র কসম , আজই আমি সব ছেড়ে দিলাম।
নিজের পরনের কাপড়টুকুও খুলে মায়ের কাছে উপস্থিত নগ্ন যুবক হানযালা।
একই বাবা তোমার একী অবস্থা ?
আম্মা আমি মুহাম্মদের উপর ইমান এনেছি তাই চাচা আমাকে সব ছাড়তে বললেন।
বাবা আমার কিছু বলার নেই। আমি তোমার জন্য কি করতে পারি ?
আম্মা আমি মুহাম্মদ (সঃ) কাছে যাচ্ছি।
মা একটা কম্বল পুত্রের গাঁয়ে জড়িয়ে বিদায় দিলেন।
ক্রোশের পর ক্রোশ পাড়ি দিয়ে হানযালা পৌঁছে গেলো রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর দরবারে।
সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে পড়ে নিলো সেই কালেমা----- যার জন্য পৃথিবী ছাড়া যায় এক নিমিষেই।
যুদ্ধ শুরু হচ্ছে।
সবাই অনেক কিছু দিলো।বালক হানযালা কিছু দিতে পারলো না। তাই রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে আর্জি জানালো , আমি এমন হতভাগা যে কিছুই দিতে পারলাম না। আপনি আমাকে একটা অস্ত্র দিন এবং দোয়া করে দেন যাতে এই যুদ্ধে শহীদ হতে পাড়ি।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) আশেপাশে তাকিয়ে একটা খেজুরের পাতা দেখে সেটা আনিয়ে তা বালক হানযালার হাতে বেঁধে দিয়ে বললেন , হে আল্লাহ্ আমি হানযালার রক্ত কাফেরদের জন্য হারাম করে দিলাম।
বালক হানযালা এই কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে শেষ।আমি চাইলাম কি আর আপনি দিলেন কি ?
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন এখন যদি তোমার মৃত্যু ঘরেও হয় তবে তোমার শহীদি মৃত্যু হবে।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) হানযালা (রা কে একটা খেজুরের লাঠি যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে দিলেন।
যুদ্ধে এই অস্ত্র দিয়ে হানযালা (রা কয়েকজন কে জাহান্নামে পাঠিয়ে অসুস্থ হয়ে গেলেন।পড়ে নিজ ঘরে অসুস্থ অবস্থায় শাহাদাত বরন করলেন।
এই আমাদের ইতিহাস। শুধু এই ইতিহাস টুকুর শাহাদাতের কাহিনী শোনানোর জন্য আজ এই অবতারনা না।
চারিদিকে অশনি সঙ্কেত।যৌথ বাহিনী,কিলিং টীম,ভয়ঙ্কর মিশন।আমাদের তো অস্ত্র নাই।কিভাবে এই ময়দান পাড়ি দিবো ?
কেউ কেউ উৎসাহ দিচ্ছে অস্ত্র সংগ্রহে।সেটা চাইলেই করা যায়।তবে একবারও কি ভেবে দেখেছেন হযরত হানযালা (রা এর বিজয়ের উপর উনার শাহাদাত কবুল হয় নি,হয়েছে উনার ইমানি জজবার উপর।
ইসলাম বিজয়ী হতেই এসেছে,সেটা সময় হলেই হবে।তবে তার জন্য ত্যাগ তিতিক্ষার চরম উদাহরন সৃষ্টি করতে হবে।
স্রষ্টা কি দেখছেন না ? হযরত সুমাইয়া (রা এর গুপ্তাঙ্গে বর্শা লেগে উনি যেদিন শাহাদাত বরন করলেন সেইদন ও স্রষ্টা দেখেছেন।হজরত ইউসুফ (আঃ) কে যখন উনার ভাইয়েরা কুয়ায় ফেলে দিয়েছেন তখনও স্রষ্টা দেখেছেন।হযরত ইয়াকুব (আঃ) কে যখন করাত দিয়ে দুভাগ করে ফেলা হয়েছিল তখন ও উনি দেখেছিলেন।
কিন্তু এটাই ঈমানের পরীক্ষা।
"তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুণ্য নেই।বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক–বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী। (সুরা বাকারা-১৭৭)
রক্ত দিতে হবে,আর জজবা দেখাতে হবে।
অস্ত্র নেয়ার জন্য যারা খুব উৎসাহিত করছে তারা ঘুঘুর ফাঁদে আপনাকে রেখে মই সরিয়ে নিলে একদিন এদেশ থেকে সংগঠন যদি সন্ত্রাসীর প্রমানভিত্তিক অস্ত্রের ভিডিও দিয়ে নিষিদ্ধ হয়ে যায় তবে আল্লাহ্র দরবারে শহীদ নয় অপরাধী হয়েই উঠতে হবে।
অস্ত্র হাতে নেবার সময় এখনো আসেনি,তবে সময় আসলে সেটা নেয়ার হিম্মত ও থাকতে হবে।ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস আমরা সবাই জানি।নাজরানা পেশ করতে করতে সাহাবীদের মুখেই ফোটে উঠেছিল কবে আল্লাহ্ তোমার সাহায্য আসবে ? সরবউচ্চ পরিক্ষার পর ইসলাম বিজয়ী হয়েছিল।
আর বদর যুদ্ধে যে আল্লাহ্ হানযালার খেজুরের লাঠিতে বরকত দিয়ে কাফিরদের ধারালো তরবারির বিরুদ্ধে দুর্বার করে দিয়েছেল হানযালাকে সেই আল্লাহ্ এখনো সেই অবস্থায় আছেন।তিনি তার মদদ দান করবেন,করবেন-ই ইনশাল্লাহ।এই বিশ্বাস শুধু বিজয় না,গাজী অবস্থায় ও শাহাদাতের মৃত্যু কবুল করে জান্নাত দান করবেন।ইনশাল্লাহ।
মিশরের আন্দোলন বা তুরস্কের আন্দোলন না,সাবেক দায়িত্বশীলদের আর শহীদ গাজী ভাইদের ইতিহাস দেখুন।আল্লাহ্র সাহায্য যে কতটা আমাদের প্রতি তা অবিশ্বাস্য।আলহামদুলিল্লাহ্।
আমরা মাঝে মাঝে ভাবি,একজন হত্যার পর আল্লাহ্র গজব নাজিল হবে বা আল্লাহ্ আর প্রাণ নিতে দিবেন না,এটা আসলে ভুল।
কোন ইতিহাস বলে না যে আল্লাহ্র গজব চলে এসেছে এক নিমিষেই।তাই এত দ্রুত কল্পনার বাসা না বেঁধে নিজেদের ভুল ত্রুটি আর অযোগ্যতার কথাই প্রথমে বিবেচনায় এনে আল্লাহ্র ক্ষমা প্রার্থনাটাই মুখ্য হওয়া উচিত।
আল্লাহ্ আমাদের প্রচেস্তাকে কবুল করুন।আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন