রাজনৈতিক মেরুকরন এবং দল ও দেশের ভবিষ্যৎ

লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:২১:১৭ সকাল

গভীর সঙ্কটের অতল গহবরে বাংলাদেশ।দেশ যাচ্ছে কোনদিকে আর ভবিষ্যৎ কি? মানুষ ভাবছে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দলগুলু ভাবছে তাদের ভবিষ্যৎ।কিন্তু বর্তমান এমন এক চাকতির ঘোরে ঘুরপাক খাচ্ছে যে তার কোন উত্তর মিলানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার বটে।

শত প্রতিকুলতা,প্রতিবন্ধকতা,আশঙ্কা কেউ সামনে রেখে আশার প্রদীপ মনে করে সরকার নির্বাচনে যাওয়ার উপর স্থির,নির্বাচনের আয়োজন ও ইতিমধ্যে চলছে।তবে নির্বাচন হবে কি হবে না এ প্রশ্ন বিশাল।সর্বমহলে যখন এই গুঞ্জন তখন তোড়জোড় কিন্তু বিশাল চলছে,চাই কি দেশে বা বাহিরে।

শাসকদল নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর হলেও পরিস্থিতি কোনোক্রমেই অনুকূলে আসছে না।নানা ছক নানা পরকল্পনা নেয়া হয়েছে,কখনো টনিকের মত কাজ করেছে আবার কখনো বা সেটা বুমেরাঙ্ঘয়ে গেছে।এরশাদ সাহেবকে বিরোধী নেতা বানানোর চূড়ান্ত কাজ যখন প্রায় সম্পন্ন তখন খুশীর ঝলকানিকে হঠাৎ অমবস্যার কালো অন্ধকারে ঢেকে দেয় এরশাদ সাহেবের নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা।গনেশ গেলো উল্টে,যদিও নাটকের এখনো শেষ দৃশ্য বাকী,তবুও এক অনিশ্চয়তা শাসক দলের জন্য,এক আশার কিরন বিরোধী পক্ষের জন্য হয়েই এখন ঝুলে আছে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি।

এর মাঝেই চলছে দেন দরবার,আতাতের চেষ্টা,ভাঙ্গনের খেলা,টাকার ছড়াছড়ি।রাজনীতির ভিতরে আরেক কঠিন রাজনীতি।তাদের কেউবা কখনো সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে,কিন্তু কেন যেন ব্যাটে বলে আর শেষ পর্যন্ত কোনটাই হচ্ছে না।কিন্তু তবুও কেউ আশা ছাড়ছে না।নিজ নিজ অস্তিত্বের উপর স্থির থাকার ছল কলের চেষ্টা করেই যাচ্ছে।

কিন্তু এত কিছুর পর একটা প্রশ্ন আদৌ এই নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটুকু বা এই নির্বাচন হওয়া না হওয়া জাতিকে বা রাজনৈতিক দলগুলুকে কি দিতে পারে বা কি কি কেড়ে নিতে পারে?

২০০৭ এর পর ২০০৯ এর নির্বাচন ছিল দেশের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট,কিন্তু ২০০৯ এর পর ২০১৩ তে এসে বাংলাদেশ এখন দ্বিধাবিভক্ত আর রাজনৈতিক দলগুলু এক চরম পরিক্ষার সন্মুখিন।

শাসকদল নিজেদেরকে অনেক উন্নয়েনের অংশীদার দাবী করলেও বিভিন্ন জরিপ বলে জনগন এর একটি বিরাট অংশ তাদের বিদায়কেই সাধুবাদ দিতে প্রস্তুত,সেটা তারা আঁচ করতে পেরেছে অনেকভাবেই,তবে সেখানে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা খানিকটা কাজ করলেও বিরোধী শক্তির কাছে পরবর্তীতে জীবন নাশ বা দল নাশের আশঙ্কা তাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে ব্যাপক।যার ফলে সেইফ এক্সিটের কোন উপায় না পেয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার মানসিকতাকেই তারা শক্ত করেছে।যে জিদের কারনে একতরফা নির্বাচন দিতে যাচ্ছে,সেই জিদ আজ তাদের জন্য কিছুটা কাল হয়ে যাচ্ছে।সামনে আগানো ছাড়া এখন তাদের পিছু হটার রাস্তা বন্ধ বলা চলে,নানা আশঙ্কার সাথে জিনিষটার সাথে প্রেস্টিজ এক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরশাদ সাহেব নিজেকে এইসব বেড়াজাল থেকে বের করবেন বা এসবে থাকবেন এই করতে করতে শেষ মুহূর্তে এক নাটকের জন্ম দিয়েছেন।যা আজ তার অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।দলের ভাঙ্গন নদী ভাঙ্গনের রূপ নিয়েছে।নির্বাচনে যাওয়ার সুজুগ উনার নেই বললেই চলে তবে যদি কোন কারনে যান তাহলে হয়তো ব্যাক্তি অস্তিত্বকেই উনাকে হারাতে হবে।আর যদি শেষ কথা মত নির্বাচনে না যাওয়ার কোথায় অবিচল থাকেন তবে তিনি দলের ভাঙ্গন ঠেকাতে পারবেন বলে মনে হয় না,কিন্তু ব্যাক্তি এরশাদ হয়তো আরও কিছুদিন মানুষের অন্তরে স্থান করে নিতে সক্ষম হবেন।

নানাদিকে মুখ চাওয়াচাওয়ী করে যাদের রাজনীতি চলছে সেই প্রধান বিরোধী দল বিনেপি আছে অস্তিত্বের হুমকিতে।২০০৭ এর পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়া বিএনপি রোগ সারানোর ব্যাবস্থা গ্রহন না করে কুঁকড়ে কুঁকড়ে আজ বিপর্যস্ত।৫ টি বছর কোনরকম পার করে দিয়ে ৫ টি সিটিকর্পোরেশনের ফলাফলের মাদ্ধমের কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল।কিন্তু কিছু অবিশ্বাস,সিনিয়র নেতৃবৃন্দের গা ছাড়া ভাব বিএনপিকে সময়ের আস্তাকুরে নিক্ষেপ করেছে।তবুও জনগন আওয়ামীলীগের বিপরীতে এখনো বিএনপির বিকল্প কাউকে ভাবছে না।কিন্তু আন্দোলনের ভাব ধরতে না পাড়া দলটি জনসমর্থন নিয়েও অস্তিত্ব সঙ্কটে পরে নানা ছক কষে যাচ্ছে।অসমর্থিত সুত্রে কিছু আতাত বা সিট ভাগাভাগির কথা শোনা গেলেও একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই নির্বাচন হলে আর বিএনপি না গেলেও তাদের জন্য বিপদ আর গেলেও তাদের জন্য বিপদ।মানে এই নির্বাচন বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের নির্বাচন।

বিএনপির সাংগঠনিক যে দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে তাতে বিএনপি যদি আতাত করে নির্বাচনে যায় তবে তারা হয়তো আরও বেশী আসন নিয়ে বিরোধী দোলে যাবে,তবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে অন্তঃ অবিশ্বাস নিয়ে চলা দলটির শেষ বাধন টুকু-ও বাকী সময়ে ছিঁড়ে যাবে এতে সন্দেহ নেই আবার তারা নির্বাচন প্রতিহত না করতে পারলে আবার আরেকটি ৯৬ হবে না,এটা ১০০% শিউর।তাই বিএনপির সামনে মাঠে থাকার বিকল্প নেই।

বাকী থাকলো জামাতে ইসলামী।ধর্মের নামে তাদের যে রাজনীতি আর ৭১ এর ভুমিকা সব জনগনের কাছে স্পষ্ট নয় এখনো।সবাই এটা মানে যে তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে তবে তাদের বেশীরভাগ এখনো এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারে নি,কারন দল হিসেবে তারা এখনো জনগনের কাছে যেতে পারেনি,তবে বর্তমান সরকারের কিছু ভুমিকা জামাতকে কিছুটা জনগনের সহানুভূতি অর্জন করতে সফল করলেও সামনের রাজনৈতিক মেরুকরনে তাদের সামনের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে।আঁতাতের নানা কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়,তবে যদি রাজনীতির খাতিরে জামাত এই কাজটি করেই ফেলে তবে মানুষের শেষ পরিক্ষায় তারা শুন্য মার্ক্স নিয়ে রাজনীতির ময়দান থেকে বিদায় নিবে এতে সন্দেহ নেই।৮৬ এর মত শেষ বিকেলে জামাত নেতাদের মুক্তির বিনিময়ে মাঠ পরিবর্তন করলে ঘ্রিনার যে পাত্র উপহার হিসেবে তারা পাবে সেইটা হয়তো তাদের উদ্দেশ্যকে মিথ্যা এবং ছল-ই প্রমান করবে।যা আত্মহত্যার শামিল হবে আর নির্বাচন বর্জনে অটল থাকলে হয়তো টানেলের শেষে এসে দিনের ঝলমলে আলো কিছুটা তারা দেখতে পারে(যদি জনগন চায়)।

দেশ যেহেতু এই রাজনীতির উপর বেঁচে আছে,তাই এ কথা নির্দিধায় বলা যায়,সামনের কয়েকটা দিন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমরা সংঘাত নয়,সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ চাই।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File