রাত্রি যত গভীর হয়,ভোর ততই নিকটে চলে আসে
লিখেছেন লিখেছেন তরবারী ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:১৪:২৩ সকাল
উত্তপ্ত রাজনৈতিক ময়দান।এমনটা পূর্ব অনুমিত ছিল।তবে সেটা যে শুধু জামাত-শিবির বনাম আওয়ামীলীগ হবে তা এরকমভাবে কেউ কল্পনাতে আনতে পারেনি।সবার ধারনা ছিল বিএনপি ফ্রন্টে থেকে নেতৃত্ব দিবে আর জামাত তার হবে মুল হাতিয়ার।কিন্তু হটাত কীসে কি যেন হয়ে জামাত আর আওয়ামীলীগ খেলছে আর বিএনপি রেফারীর ভুমিকা পালন করছে।মাঝে মাঝে এ কথা থেকে ওকথা,ওকথা থেকে একথা। তারউপর ভারত সফর শেষ করে এসে নানা সুরে গান গাচ্ছে তারা।তবে তারপরও আন্দোলন বাংলার আনাচে কানাছে ছড়িয়ে পড়েছে।জামাত শিবির তার শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে আস্তে আস্তে সকালের সূর্য যেভাবে উঠে ঠিক সেভাবে উঠতে শুরু করলে সরকার পাগল পারা হয়ে যায়।শুরু হয় মিথ্যাচারের ফুলঝুরি আর সেই সাথে অত্যাচারের ষ্টীম রোলার।তাদের সাথে যোগ দেয় মিডিয়া।চতুর্মুখী চাপের মধ্যে এক জামাত মাঝে বসে ক্রমেই দুর্বার হয়ে উঠছে। যেখানে দলিত হয়ে চুপসে যাওয়ার কথা সেখানে বীর প্রতাপে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। নৈতিকভাবে আন্দোলনের প্রতি ১০০% সমর্থন থাকায় সারাদিনের ভাবনায় বিষয়টি কোন না কোনভাবে চলে আসে।তারই সুত্র ধরে চলমান আন্দোলনকে পরিপূর্ণ আন্দোলনে রূপ দিতে ছোট্ট কিছু পরামর্শ দিতে আকুপাকু করা মনকে হাত দিয়ে লিখে শান্ত করার নিমিত্তে এই উপস্থাপনা।
আব্দুল মুত্তালিব পৌত্তলিক ছিলেন,একত্ববাদে তার বিশ্বাস ছিল না,তবে স্রষ্টার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। তাই আবরাহা যখন হস্তি বাহিনী নিয়ে কাবা ঘরের ধংসের জন্য মক্কা আসলো তখন মুত্তালিব একটা কথাই বলল কাবা ঘর স্রষ্টার ঘর,তাই তার রক্ষার দায়িত্ব স্রষ্টার,তা নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে না। আমি মেষ পালের মালিক,আমি সেগুলু উদ্ধার করতে যাই।স্রস্টা তার দায়িত্বকে নিজের মত করে নিয়ে আবরাহাকে ছোট্ট কঙ্কর দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে।মহা শক্তিধর তুমুল ঝড়ের বেগে ছুটে আসা আবরাহা সেদিন মহাপরাক্রমশালির কাছে কথিত ঝড় বাষ্পের মত উড়ে গেছে।শয়তানের চক্রান্ত বড়ই জটিল দেখতে,তবে স্রষ্টার জন্য তা শুধু "খুলে যা" কথার সমান।এত সহজ যে ফলাফলের পর মানুষ ভাবতে শুরু করে কি কঠিন আর ভয়ঙ্কর-ই না ভেবেছিলাম আর কত সহজ ভাবে হয়ে গেলো।
আল্লাহ্ বলেন,"শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল (সুরা:নিসা,৭৬)"
আন্দোলনের সকল কর্মীভাইদের একটি কথাই বলতে চাই,জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য কোন আন্দোলনের প্রয়োজন নেই,তারা কণ্টকময় ইসলামী আন্দোলনের পরীক্ষিত সৈনিক,এদেশের হাজারো আলেমের উস্তাদ,ইসলামী মনা মানুষদের প্রানের স্পন্দন,অবশ্যই বিশ্বাস করি আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাদের একেকজন।তাদের রক্ষা করা আল্লাহ্র দায়িত্ব,যদি তাদের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় তবে তাদের শহীদী মৃত্যু দিবেন,এতে হতাশ হবার কিচ্ছু নেই,এতে ভেঙ্গে পড়ার কিচ্ছু নেই।একটি মৃত্যু কখনো সত্তের ঝাণ্ডাকে ভুলন্ঠিত করতে পারে না,একটি মৃত্যু কোন অপমানের বিষয় নয়।
আল্লাহ এভাবেই বান্দাদের পরীক্ষা করেন।শয়তানের অপপ্রচার আর প্রোপাগান্ডা সবসময় ঝাঁঝালো।তা দেখে আতঙ্কিত হবার কিচ্ছু নেই,বরং এ এক সম্মানের বিষয় যে আল্লাহ্ তার বান্দাদেরকে শুদ্ধ করে দিচ্ছেন।হযরত জাকারিয়া (আঃ) কে চিড়ে দুভাগ করা হয়েছিল,ইসলামের প্রথম মহিলা শহীদ হযরত সুমাইয়া (রঃ) কে গুপ্তাঙ্গে বর্শা নিক্ষেপ করে শহীদ করে দেয়া হয়েছিল,হযরত ইমাম হানিফা,হযরত বুখারি,হযরত হাসানুল বান্না,সায়্যেদ কুতুব প্রমুখ কেউই শয়তানের লালসা আর চক্রান্ত থেকে রেহাই পায় নি।তাই বলে তারা অপমানের পাত্র না,বরং যুগ যুগ ধরে সত্যাশ্রয়ীদের প্রাণ পুরুষ হিসেবে আল্লাহ্র কাছে দোয়ার অংশীদার হয়ে গেছেন।
তাই জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির আন্দোলন শুধু না,আজ সময় এসেছে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়ার,প্রকৃত ইসলামের জন্য বিলিয়ে দেবার।জামাত শিবির এদেশের মানুষের শেষ আশার প্রতীক,আর শয়তানী চক্রের অতিব জ্বালার একটি বিষয়।তাই তারা যদি আজ ভেঙ্গে পরে তারা যদি আজ পিছিয়ে পরে তবে এদেশে ইহুদি লবি আর হিন্দু লবি চিরস্থায়ী আসন গেড়ে নিবে।এদেশের অস্তিত্তকে ধূলিসাৎ করে দিবে।
সেই চক্রান্তকে বাস্তব রূপ দিতে সাড়াশি অভিযান,নির্মম অত্যাচার,আর চরম মিথ্যাচার করে চলছে সরকার।আজ সময় এসেছে জামাত শিবিরের কর্মীদের প্রমান করার যে তারা হল সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।মৃত্যুভয় যাতনাকে জয় করতে হবে,এ হল চির সুখের জান্নাতের বিনিময়ে।অবধারিত মৃত্যু যদি শহীদী মৃত্যু হয়,তার চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে।
বদর দেখিনি কেউ,তবুও যেন চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে তার মহিমা।অত্যাচারের সীমা ভেঙ্গে বাংলার আকাশে কালিমার পতাকা উড়বেই।আজো সেই কোরআন আছে,সেই হাদিস আছে,সেই ঈমানের প্রতিফল ও আছে।
একটি কথা না বললেই নয়,হাজারো দুঃখী মানুষের আকুতি মুক্তির,শান্তির।তার দরখাস্ত আল্লাহ্র কাছে তারা সবসময়-ই করে।আর আল্লাহ্ জমিনে কাউকে সে দায়িত্ব দেয় এই মুক্তি আর শান্তি কায়েমের।বাংলার জমিনে জামাত আর শিবিরকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আজ তারা যদি এই দায়িত্ব থেকে পিছুটান দেয়,পালিয়ে যায় তবে রোজ কিয়ামতে এর কঠিন জবাব দিতে হবে।
আন্দোলনরত ভাইদের প্রতি একটি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,প্রতিদিন রাস্তায় বের হবার আগে অবশ্যই দুই রাকাত নামায পরে আল্লাহ্র কাছে একটা মোনাজাত করে বের হবেন।দুর্গায় চড়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে বেরিয়ে আসা হায়েনারা এই দোয়ার কাছে বিলীন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।মুমিন বান্দাদের দোয়া কবুল করা আল্লাহ্র জন্য ওয়াজিব।আল্লাহ্ তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ করেন।তিনি তো সবচেয়ে বেশী ওয়াদা রক্ষাকারী।
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়,ওহুদের যুদ্ধের কথা স্মরণ করুন।বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না।এক সাথে সীসা ঢালা প্রাচিরের মত দাঁড়িয়ে যেতে হবে,বিচ্ছিন্ন বাঘ দলগত মেষপালের চেয়েও দুর্বল।
বিজয় সুনিশ্চিত,ভোরের আলো ফুটতে আর বেশী সময় বাকি নেই,রাত্রি যত গভীর হয়,ভোর ততই নিকটে চলে আসে।আল্লাহ্ সবাইকে হেফাযত করুন।ইসলামী আন্দোলনকে বাংলার জমিনে কায়েম করে দিন।আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৪০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন