সব হারিয়ে হেরে যাওয়া এক মায়ের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:২৯:৪৯ সন্ধ্যা



বুম........... বিকট শব্দে ব্লাস্ট হলো বোমাটি। আফিয়া বেগম থেকে একটু দূরেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল আরো কিছু মানুষ সহ তার স্বামীর দেহ। তার ছোট্ট ছেলেটি বোমার শব্দে ভীত হয়ে তার মায়ের বুকে মুখ লুকিয়েছে। এদিকে আফিয়া বেগম নিজের স্বামীর ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন।

সরকারি সৈন্যদের বুটের শব্দে তার নিস্তব্ধতা ভাংলো। নিজে বাঁচার কোন ইচ্ছা নেই। বেঁচে কোন লাভও নেই। কারণ তারই সামনে তার জীবন সঙ্গির দেহ। কিন্তু এই নিষ্পাপ ছেলেটাকে তো বাঁচানোর চেস্টা করা দরকার। যদিও বাঁচানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ তবুও নিজের গর্ভের সন্তানকে বাঁচানোর চেস্টা তো করতেই হয়।

এমন নির্যাতন নতুন কিছু নয়। এরকম তাদের সাথে প্রতিনিয়ত হয়ে যাচ্ছে। কদিন আগে তার সদ্য বালেগ হওয়া তার ১৩/১৪ বছরের মেয়েটাকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে এসব কুকুরের দল। তাদের অপরাধ একটাই যে, তারা মুসলিম। সেদিন মেয়েকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করতে পারেনি। আজ স্বামীও হারিয়েছেন। এখন একমাত্র অবলম্বন ৫ বছরের এই ছোট্ট শিশু যে কিনা কথা বলতে পারেনা। বোবা।

স্বামীকে হারিয়েও ভেংগে পড়েননি আফিয়া বেগম। নিজেকে শক্ত রেখেছেন শুধু এই কথা বলতে না পারা ছেলেটার জন্য।

সৈন্যদের বুটের শব্দ পেয়েই ছেলেকে নিয়ে লুকিয়ে পড়লেন একটা ঝুপেড় আড়ালে। সুচীর লেলিয়ে দেয়া কুকুররা ছড়ানো ছিটানো অংগ প্রতঙ্গ দেখে উল্লাস করতে লাগলো। তাদের হাসিতে বোমার আওয়াজে নিস্তব্ধ হওয়া এলাকাটা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠলো। আফিয়া বেগম ঝুপড়ির ফাঁক দিয়ে দেখলেন ৫ টা সেনা। উনি নীরব হয়ে ছেলেকে ঝাপটে ধরে পরে রইলেন। একটু পর ওরা চলে গেল।

উনিও বের হয়ে ছেলেকে নিয়ে সীমান্তের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। যখন সীমান্তে আসলেন দেখলেন শুধুই পানি। নদী পাড়ি দিতে হবে। অনেক্ষণ চেস্টা করে আশপাশ থেকে বাঁশের টুকরা টুকরা এনে কোনরকম একটা ভুরা বানাতে সক্ষম হলেন। কিন্তু সবই ব্যর্থ। যখন নদী পেরিয়ে আসলেন তখন সব আশাভরসা শেষ হয়ে গেল। বিজিবিদের হাজার অনুরোধ করেও ঢুকতে পারলেন না।

অতঃপর আফিয়া বেগম যখন দেখলেন আর কোন পথ নেই।তখন আর কোন উপায় না দেখে ছেলেকে নিয়ে লাফ দিলেন মাঝ নদীতে। কারণ ওসব কুকুরের হাতে মরার চেয়ে নিজে মরাই ভালো। তারপর সব শেষ। অনেক্ষণ পর ভেসে উঠলো মা ছেলের লাশ। হ্যাঁ, ছেলেটা এখনো মায়ের বুকেই লোকানো ।

এভাবেই তিলেতিলে কষ্ট পেয়ে মরছে আমাদের পাশের রাষ্ট্র মায়ানমারের আরাকানি মুসলিমরা। কিন্তু আমাদের থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছেনা। জানিনা এরা শান্তির দেখা কবে পাবে কিংবা আদৌ পাবে কিনা। ওদের অপরাধ শুধু একটাই- ওরা মুসলিম।

বিষয়: বিবিধ

৯৯৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380447
০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:১৯
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : চোখের পানি ছাড়া আর কিই বা করার আছে!! নির্যাতন করা আর নির্যাতিনের মুখে ঠেলে দেয়ার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। জানিনা, আমরাই কতদিন স্বর্গসুখে থাকতে পারব!!
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১১
314854
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : আমরা স্বর্গসুখে আছি! মানতে পারলাম না।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১৬
314856
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : এটা আপনার আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধের অভাব। বাংলাদেশীদের উপর ব্যক্তিগত বা মতাদর্শগত অমিলের কারণে যেসব নির্যাতন হচ্ছে তা কোনভাবেই মায়ানমার, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, সিরিয়ার সাথে তুলনীয় না। কাজেই এটাকে স্বর্গসুখ ছাড়া আর কি বা বলা যায়?
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:২১
314857
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : না ভাই, আমি তাদের সাথে তুলনা করছিনা। হ্যাঁ আমরা আল্লাহর রহমতে তাদের চেয়ে অনেক ভালো আছি। কিন্তু স্বর্গীয়সুখে নয়।
380449
০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৫৬
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আপনার লেখার টাইটেলটা কাইন্ডলি বদলে দিন|কোনো মা-ই পৃথিবীতে হারে না | আর এই মা তো নয়ই | আমি আশাবাদী যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর এবারের এই জঘন্য অত্যাচার একটা স্বাধীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আরাকান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ভবিষ্যতে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে ইতিহাসের বিচারে |
০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:২১
314845
আবু জান্নাত লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা সহায় হলে সবই সম্ভব।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১১
314855
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : সময় আর পরিস্থিতির কাছে হার মানতে হয়

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File