আমার কোলে একটি মেয়ের মৃত্যূ…

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১৭ জুলাই, ২০১৫, ০৪:১২:০৮ রাত

- ভাইয়া ! আপনি একটু পরে যান না! আমার আব্বু আমার জন্য মার্কেটে অপেক্ষা করছেন যেতে হবে। প্লীজ……

- মেয়েটিকে নিরাশা করলাম না। বললাম , ঠিক আছে বোন যাও। বলে সিএনজি থেকে নেমর পড়লাম।

মেয়েটি বোরকা পরা। সম্পূর্ন পর্দার সাথে বের হইছে। তাই আরো একটু সম্মান দিলাম। তাছাড়া প্রথমেই ভাইয়া বলে দূর্বল করে ফেলছে কারণ আমার কোন ছোট বোন নাই।

মেয়েটি সিএনজিতে উঠে বললো ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ। তারপর গাড়ী চলে গেল।

আমি পরের গাড়ীতে যেয়ে বসলাম। অনেক কিছু ভাবছিলাম বসে। ভাবনার কারণ দুদিন পরেই তো ঈদ। ঈদকে ঘিরেই আমার ভাবনা।

ঐদিকে কে জানতো , মেয়েটি মৃত্যূর সিট থেকে আমাকে নামিয়ে নিজেই চড়েছে ।

ঐ গাড়ীর কিছুক্ষণ পরেই ছাড়লো আমার গাড়ী। কিছুদূর এগিয়ে গিয়েই দেখলাম বড় একটা ট্রাক। আর কয়েকজন মানুষ রাস্তা সম্পূর্ণ ব্লক করে রেখেছে। খোলা ময়দান , আশপাশে তেমন ঘর-বাড়ী বা মানুষ নেই। রাস্তার পাশে খাদের দিকে নজর গেল, দেখলাম সেই সিএনজিটা উল্টে পড়ে আছে। হঠাৎ আমার মনে ঠাস করে একটা বারি মারলো। লাফ দিয়ে নামলাম।

নেমেই দৌড় দিলাম খাদে পড়ে থাকা সিএনজিটার দিকে । ড্রাইবারসহ ৬জন ছিল। ড্রাইবারসহ আরো ৩জনের তেমন ক্ষতি হয়নি, ওরা নিজেরাই উঠে এসেছে। কেউ বা আগেই লাফ দিছিল। আর একজন ব্যাক্তিকে দুজন তুলে এনেছে।

কিন্তু মেয়েটাকে দেখছিনা। চিৎকার দিলাম এই গাড়ী সোজা করো। আমিসহ কয়েকজন মিলে সোজা করলাম গাড়ীটা। মেয়েটা গাড়ীর নিচে পড়ে ছিল। ধরলাম গিয়ে মেয়েটাকে। ডাকলাম, এই বোন ! বোন ! কোন সাড়া নেই। পাঁজাকোলে করে তুলে আনলাম একাই। দু‘চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অঝোর ধারায়। মেয়েটিকে নিয়ে সিএনজিতে উঠেই বললাম ড্রাইবার হসপিটাল, তাড়াতাড়ি। নাকের কাছে আঙ্গুল নিয়ে দেখলাম শ্বাষ কিছুটা আছে। আবারো ডাকতে লাগলাম বোন ! বোন ! বলে। না সাড়া নেই।

হসপিটাল পৌছলাম। কোলে করেই নিয়ে গেলাম। নিয়ে ট্রলিতে তুললাম। ডাক্তার এসে মেয়েটার হাত ধরেই মৃত ঘোষণা করলো।

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ডাক্তারকে বললাম ভালো করে দেখুন।

এবার আর নিঃশব্দে কাঁদতে পারলাম না। একটা নার্স এসে বললো আপনিও কি আহত? আপনার সারা শরীরে রক্ত !

চেয়ে দেখলাম গায়ের পান্জাবী রক্তে লাল হয়ে গেছে। নার্সকে বললাম না আমি ঠিক আছি। এ রক্ত ওর।

মেয়েটার সারা শরীরে তেমন কোন আঘাত নেই। শুধু কপালের এক পাশে বড় একটা আঘাত। এ আঘাতই তার মৃত্যূর কারণ। মাথায় রক্ত জমা হয়ে মারা গেছে। এখনও রক্ত পড়ছে।

এই একটা মৃত্যূই খুব কাছ থেকে দেখেছি। এমনকি মৃত্যূটা হয়েছে আমারই কোলে। সেদিন কেঁদেছি খুব। সেদিনের মতো আর কখনো কাঁদিনি। অথচ সে আমার আপন কেউ না। কিন্তু বারবার মনে পড়ছিল তার সেই ভাইয়া ডাক……

ক‘বছর আগে ঈদের দুদিন পূর্বের এই ঘটনা। আমার জায়গায় মৃত্যূ হয়েছিল সেই মেয়েটির। আমার হায়াত আছে তাই বেঁচে গেছি।

এরপর থেকে ঈদ আসলেই মনে পড়ে সেই মেয়েটির কথা। তার বাবার সেই করুণ কাঁন্নার কথা।

বিষয়: বিবিধ

১২২৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330337
১৭ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৭:১২
বাকপ্রবাস লিখেছেন : বিষাদে ভরে গেল মনটা
১৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫১
272597
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হুম…
330338
১৭ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৭:৩৫
মোঃআয়নাল হক লিখেছেন : অনেক কষ্ট ও বেদনাময় ঈদ এলেই মনে পড়ে যায়
১৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫২
272598
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হুম……
330340
১৭ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৮:১৩
হতভাগা লিখেছেন : সিএনজিতে ড্রাইবার বাদে ছিল ৫ জন ।
যদি সিএনজি বেবী ট্যাক্সি হয়ে থাকে এবং আপনার কাছে মেয়েটি সিএনজিটা চেয়ে থাকে তাহলে বাকী ৪ জন কারা ? সিএনজিটা কি শেয়ারে যাত্রী নিচ্ছিল ?

এরকম পর্দানশীন মেয়ে সিএনজি বেবী ট্যাক্সিতে অপরিচিতদের সাথে গাদাগাদি করে যাবে - এটা কেমন খটকা লাগছে ।
১৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
272600
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : প্রয়োজন খুব বেশী ছিল বোধহয়।
330375
১৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : সো সেড. ধন্যবাদ
১৮ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:১৭
272717
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
330396
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
হৃদয়কে আপ্লুত করে দিল।
১৮ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:১৫
272716
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ৃধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File