রাঈশার গল্প..... Love Struck Love Struck Love Struck

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১৩ জুন, ২০১৫, ১১:৪০:০২ রাত



রাইশা কলেজের ছাত্রী। কলেজে পড়া লেখা করে। নিয়মিত কলেজে আসা যাওয়া করে। খুব ভালো একটা মেয়ে। শান্ত শিষ্ট,ভদ্র এবং উত্তম আচরণের অধীকারীনি একটি মেয়ে। দেখতেও খুব সুন্দরী। তার রুপ ডানা কাটা পরীকেও হার মানাবে। তবে তার মাঝে ইসলামী শিক্ষাও ছিল। কলেজের অন্য ১০টা মেয়ের মতো সে নয় । ইসলামের বিধি-বিধান যতোটা সম্ভব মেনে চলতো। কলেজেও যেত হিজাব পরিধান করে।

রাহুলও কলেজের ছাত্র। পড়া লিখায়ও ভালো। তবে কিছুটা উশৃঙ্কল টাইপের ছেলে। আর আরেকটা খারাপ স্বভাব হলো মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করা বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে। তবে কোন মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করেনি। কিন্তু মেয়েদের পটানো ছিল তার কাছে অল্প সময়ের ব্যাপার।

রাহুল আর রাইশা একই কলেজে পড়তো। একদিন রাহুল আর তার বন্ধুরা কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিল। রাইশা সেদিক দিয়ে যাচ্ছিল। হিজাব পরিধান করা দেখতে সরল সহজ একটি মেয়েকে দেখে তারা বিদ্রুপের হাসি হাসতে লাগলো। রাইশা এসবে পাত্তা না দিয়ে সে তার ক্লাসে চলে গেল।

হঠাৎ রাহুলের বন্ধুরা রাহুলকে বলে উঠলো দোস্ত ! অনেক বাজীতে তো জিতলি, এবার এ মেয়েটাকে পটিয়ে বাজী জিতে দেখা। যদি ওকে পটাতে পারিস তবে আমরা প্রত্যকে তকে ১০০০টাকা করে দিব। আর না পারলে তুই আমাদের সবাইকে চাইনিজ খাওয়ালেই চলবে। বল রাজি??

রাহুল বললো, ধ্যূর এ মেয়েটাকে বাদ দে তো। অন্য কাউকে দেখা। বন্ধুরা বললো, ভয় পাচ্ছিস নাকিরে? আমরা আর কাউকে চাইনা, পারলে এটাকে পটিয়ে দেখা । রাহুল আর কিছু না বলে বললো, আচ্ছা রাজি।

শুরু হলো রাহুলে রাইশাকে পটানোর ধাঁন্ধা। অনেক ভাবে রাইশার নজর কাড়তে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। কোনভাবেই রাইশাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারছিল না রাহুল। অবশেষে, একদিন রাইশা কলেজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে তার পথ রোধ করে দাঁড়ালো রাহুল। রাইশা তাকে পাশ কাঁটিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু সে বারবার গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকে দিচ্ছে।

বিরক্ত হয়ে রাইশা বললো, পথ থেকে সরে দাঁড়ান । কিন্তু রাহুল সরলো না। রাহুল বললো, রাইশা ! আমি অনেকভাবে তোমার নজর কাড়তে চেষ্টা করলাম কিন্তু তুমি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না। আজ তোমাকে সরাসরিই বলতে এসেছি, রাইশা ! আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। তুমি আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছ। খেতে বসলে তোমার কথা মনে পড়ে। পড়তে বসলে তোমার কথা ভেবে পড়তে পারিনা। এক নাগাড়ে কথাগুলী বলে থামলো রাহুল।

রাইশা বললো, সরি ভাইয়া, আমি পারবোনা। আমার দ্বারা এসব সম্ভব নয়। বলেই রাইশা চলে গেল। আর এদিকে রাহুল প্রচন্ড ধাঁক্কা খেল । ভাবলো এই আমি কতো মেয়েকে নিমিষেই পটিয়ে ফেলেছি আর এতোদিন চেষ্টা করেও কিনা এই রাইশার একটু পাত্তাও পেলনা ! রাইশা পাত্তাই দিল না তাকে ! কাল আবার কথা বলবো।

পরদিন রাহুল আবার রাইশার পথ রুধ করে দাঁড়ালো। এবার রাইশা বললো, দেখুন ভাইয়া ! বিয়ের আগে এসব প্রেম ভালোবাসা হারাম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন নিষেধ করেছেন। তাই আমার দ্বারা এসব সম্ভব না। তবে আপনি যদি দ্বীনের পথে চলেন, নিয়মিত নামাজ কালাম পড়েন, ইসলামী বিধি-বিধান মানেন, খারাপ কাজগুলী থেকে বিরত থাকেন অতঃপর আমার পরিবারের কাছে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে যান আর আমার পরিবার রাজী হয় তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করবো এবং বিয়ের পর আপনাকে ভালোবাসবো। আর আমি যেভাবে বললাম সেরকম হয়ে যদি আমার পরিবারের কাছে যান তাহলে আমার পরিবার আপনাকে ফিরিয়ে দিবেনা। আর আজ থেকে যদি আপনি এভাবে আমাকে বিরক্ত করেন পথে ঘাটে তাহলে আমি কলেজে আসা বন্ধ করে দিব। বলেই রাইশা চলে গেল।

রাইশার গমন পথে হা করে তাকিয়ে রইলো রাহুল। রাইশার কথা শুনে সে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বললো কি মেয়েটা ………! ভাবতে লাগলো রাহুল। রাইশার কথাগুলী তার হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করেছে।

বন্ধুদের কাছে গেল রাহুল। গিয়ে বললো আমি হেরে গেছি। তোরা চাইনিজ খাওয়ার জন্য রেডী হ। আজ রাতে খাওয়াবো। রাহুলের কথা শুনে তার বন্ধুরা সবাই অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।

১বছর পর।

আজ রাহুলের বাসর রাত। হ্যাঁ রাইশা-ই তার স্ত্রী। রাইশাকেই বউ বানিয়ে এনেছে সে। আগের রাহুল আর এখনের রাহুলের মাঝে এখন অনেক পরিবর্তন। এখন সে নিয়মিত নামাজ পড়ে। তাহাজ্জুদও পড়ে। রাইশার কথা শুনে সে এক মসহিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে ইসলামী শিক্ষা নিতে শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান সমূহ জেনে নিয়েছে।

বাসর রাতে রুমে ঢুকতেই রাইশা তাকে সালাম দিল। সালামের উত্তর দিয়ে সে বললো, রাইশা ! আমি তোমার কথা রেখেছি এবার তোমার পালা।

রাঈশা বললো, আপনি কি আমাকে পাওয়ার জন্য মানে আমার জন্য এসব করছেন? রাহুল উত্তর দিলো, প্রথম দিকে তোমার জন্যই এসব করতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার মন থেকে সেটা চলে গেছে। আমি আল্লাহর সন্তুষ্টীর জন্য নামাজ পড়তে লাগলাম, ইসলামের বিধি-বিধান মানতে লাগলাম। খারাপ স্বভাবগুলী ত্যাগ করলাম।

রাঈশা বললো আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। চলুন এবার শুয়ে পড়ি। রাহুল বললো, আজ তো আমাদের বাসর রাত , চলো দুজনে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাই। রাঈশা হেসে বললো, আল-হামদুলিল্লাহ এবার আমার পুরোপুরি বিশ্বাষ হলো আপনি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতেই আল্লাহর পথে চলেন।

তারপর দুজনে অযু করে এসে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লো নফল নামাজের উদ্দেশ্যে। নামাজ পড়ে দুজনে একসাথে হাত তুললো দয়াময় প্রভূর দরবারে।



বিষয়: সাহিত্য

৩৯৪৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

325654
১৩ জুন ২০১৫ রাত ১১:৪৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসছি.........
১৪ জুন ২০১৫ রাত ১২:৩৭
267801
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : কই যান?
325662
১৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৬
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৯
267809
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : গরিবের বাড়ীতে হাতির পারা। Tongue

ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck
১৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:২০
267810
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : Crying Crying
325665
১৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : চমৎকার তো, দারুন হয়েছে, জাযাকাল্লাহ খাইর
১৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৮
267814
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
325704
১৪ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:১০
আবু জারীর লিখেছেন : ভালো সব ছেলে মেয়েরাই যদি এভাবে ভাবতে পারত তাহলে দুনিয়াটাই জান্নাত হয়ে যেত।
১৪ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৯
267951
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন অনেক ধন্যবাদ
325721
১৪ জুন ২০১৫ সকাল ১০:৩৯
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
হুমম, ভাল লাগল, আর নামায, তা যেন মন থেকে সব অস্থিরতা দূর করে দেয়...

১৪ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৯
267952
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হুম। অনেক ধন্যবাদ
325722
১৪ জুন ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সাধারণ গল্প কিন্তু সত্যিই খুবই অসাধারণ হয়ে মনে গেথে গেল। জাজাকাল্লাহ খায়রান। সুন্দর গল্প বলেছেন
১৪ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৯
267953
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck
325769
১৪ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৩
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ভাল লেগেছে আপনার লেখাটি, আশা করি আরো লিখবেন । ধন্যবাদ আপনাকে
১৪ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:০০
267955
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ইনশাল্লাহ লিখবো। অনেক ধন্যবাদ
325789
১৪ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:৫০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!

সুন্দর টপিক নিয়ে লিখেছেন! বর্তমান ভুলের স্রোতে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা যেভাবে ভেসে যাচ্ছে নৈতিকতা সম্পন্ন লিখাগুলো প্রচার ও প্রসার হলে সমাজ অনেকটা উপকার হবে!

জাযাকাল্লাহু খাইর!

( কলেজ ? ইন্টার লেভেল? এক বছর পরেই বিয়ে? Thinking)
১৪ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৭
267976
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম।

হুম ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ
325824
১৪ জুন ২০১৫ রাত ০৮:৩৫
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : দারুণ এনজয় করেছি। অনেক ধন্যবাদ।
০৫ জুলাই ২০১৫ রাত ১২:৩০
270870
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File