পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আমার বোনের অভিজ্ঞতা এবং তার ভাবনা থেকে কিছু কথা ।

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:৪৩:২১ দুপুর



পড়ুন আমার বোনেরই ভাষায়ঃ-

এখন সময় s.s.c পরীক্ষার, এই পরীক্ষায় সব চাপিয়ে যেটা হয়ে উঠে টক অফ দ্যা কান্ট্রি, সেটা হলো ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। অনেক আলোচনা সমালোচনা হয় এটা নিয়ে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমারও ইচ্ছে নিজ ভাবনা আর অভিজ্ঞতা থেকে একটু লিখার। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে যতো সমালোচনা সব সরকারের বিরুদ্ধে। আমার প্রশ্ন, শিক্ষক,শিক্ষা প্রতিষ্টান,অভিবাবক, শিক্ষার্থীর কি কোন দায় নেই?? এবার একটু বলি নিজ অভিজ্ঞতা থেকেঃ-

১। আমার ছোট বোনটা তার J.D.C পরীক্ষার সময়, বিজ্ঞান পরীক্ষার রাতে আমাকে ডেকে অনেক প্রিয় একজন শিক্ষকের পাঠানো একটা মেসেজ দেখালো। মেসেজটা দেখেই আমি ডিলিট দিলাম। বোন তো এই বইয়ের সবই পারতো। সারা বছর পরিশ্রম করে মাত্র একদিন ঐ প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব সততা আর যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কেন?? ও তো ২০১৬তে স্কুল সাইন্সে s.s.c পরীক্ষা দিবে, যার জন্য এখন থেকেই পরিশ্রম শুরু । এই পরিশ্রমটার কি কোন মূল্য নেই? ওর মতো শিক্ষার্থীর পরিশ্রম আর যোগ্যতার কি কোন মূল্য নেই??

২। দাখিল পরীক্ষার আগে গণিত শিক্ষক বললেন, তোমরা যারা নাম্বার দিবে তারা প্রশ্ন পেয়ে যাবে। আমি জিঙাস করলাম, এভাবে পরীক্ষা দেয়ার কি কোন মানে আছে? এর জবাবে তিনি একটা বক্তৃতা দিলেন। যার সারমর্ম, অন্যসব প্রতিষ্টান এই পন্থায় ভালো রেজাল্ট করে প্রতিষ্টানের সুনাম বৃদ্ধি করতেছে। তাহলে আমার প্রতিষ্টান পিছিয়ে থাকবে কেন? প্রতিষ্টানের স্বার্থে আমি এটা করতেছি।

উনার কথা শুনে আমি বিস্মিত ! প্রতিষ্টানের স্বার্থে ……!!!

৩। দাখিল পরীক্ষার শেষের দিকে, যেহেতু আমার পাশের মেয়েরা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা দেয়, তো আমার এক সহপাটি একজন মেয়েকে বলল তোমার নাম্বারটা দাও, তুমি আমাকে প্রশ্ন দিবে, আমি দেখবো পরেরদিন এটা মিলে কিনা। আমি ওকে বললাম , তোর মেধাটা কি এতোই নিম্ন মানের?? যে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা দিবি !! তুই মাত্র একটা পরীক্ষা দিবি আর বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করবি সারাজীবনের জন্য। ও তখন আর নাম্বার নেয়নি।

৪। আলিমের ক্লাসে একদিন আমার ছোট ভাই মারুফকে নিয়ে গেলাম। ও ক্লাস ফাইভে পরীক্ষা দিছিল। ক্লাস টিচার ওর সাথে কথা বলে জানলেন ওর পরীক্ষা ভালো হয়নি। আমাকে বললেন , ওকে প্রশ্ন এনে দাওনি কেন?? আমি বললাম, এভাবে পরীক্ষা দিয়ে কি হবে?? এই শিক্ষকও একটা বক্তৃতা দিলেন। যার সারমর্ম, এভাবে চলছে সারা দেশ। সবাই এভাবে পাস করছে। তুমি বা আমি একজন যদি সৎ থাকতে চাই তো পিছিয়ে পরবো। যেভাবে সবাই চলছে সেভাবে আমাদেরও চলতে হবে।

এবারও শিক্ষকের কথা শুনে বিস্মিত না হয়ে পারলাম না !!

রাষ্ট্রের দায়িত্ব শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার নিজের সফলতা দেখাতে গিয়ে যা করছে তা চরম ঘৃন্নিত।

একজন শিক্ষক বললেন, এই হাত দিয়ে আমি একজন ছাত্রকে ৯৯দিয়েছি, আবার এই হাত দিয়ে ১৩পাওয়া এক ছাত্রকে ৪০দিতেও বাধ্য হয়েছি। ছি…… এ কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা !! আমি আশ্চর্য,হতাশ,বিক্ষুব্ধ, সংকিত শিক্ষকদের ভূমিকায়। আমি মনে করি ফাঁস হওয়া প্রশ্নের দায় সবার আগে নিতে হবে শিক্ষকদের। তারা বেতন বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করতে পারে আর ছাত্রদের এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য কি কিছুই করার নেই তাদের??? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তো শিক্ষকরাই এ প্রশ্নগুলী ছড়িয়ে দেয়।

আমি যে তিনজন শিক্ষকের কথা বললাম তাদের কি ভূমিকা? অথচ সমগ্র দেশও যদি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে চেয়ে যায় তারপরও শিক্ষকদের দায়িত্ব ছাত্রদের সাথে নিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া।

অভিবাবকদের কি কোন দায়িত্ব নেই নিজের সন্তানের নৈতিকতা ঘটনের?? ফাইভের ছাত্ররা এইসব প্রশ্ন কোথায় পায়? কে এনে দেয়? অভিবাবক নয় কি !!

নিজের নৈতিকতা আর বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকার কোন দায়িত্ব কি ছাত্রের নেই? ভালো ছাত্রও আছে প্রচুর, কিন্তু সমালোচনা আর অবহেলার স্বীকার হয় সবাই। এটা এখন একটা জাতীয় সমস্যা। নকলের বিরুদ্ধে যেভাবে জেগে উঠেছিল সবাই, সেভাবে আবারো জাগতে হবে। আমি মনে করি- রাষ্ট্র, শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্টান, ছাত্র, অভিবাবক সবার সম্মিলিত প্রচেস্টার মাধ্যমেই এটা বন্ধ হওয়া সম্ভব। আমি চাইবো এমন একটা পরিবেশ, যেখানে আমি, আমার বোন, এরকম আমরা যারা আছি সবাই যেন বলতে পারি,

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে নয়, পরীক্ষার হলে কারো সাহায্য নিয়েও নয়, আমি আমার নিজ যোগ্যতায় “জিপিএ৫” অর্জন করেছি।

বিষয়: বিবিধ

১৪০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

302789
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৮
হতভাগা লিখেছেন : বেশী পরিমানে পাশ না দেখাতে পারলে সেই স্কুল ছাত্র-ছাত্রী পায় না । আবার সরকারী অনুদানও বন্ধ হয়ে যায় ।

বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থা ১৯৭২ এর নতুন ভার্সন ।

প্রশ্ন পেয়ে গেলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভাল ছাত্র-ছাত্রীরা
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩০
244912
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হুম। দেশের পাশের হার বাড়ছে কিন্তু জ্ঞানীর হার কমছে। সুন্দর মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ
302812
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সব কিছু পরিসংখ্যান এ সরলি করন এর যে নিতি আমাদের দেশে চলছে তাতে এই অবস্থা হওয়াই স্বাভাবিক। গ্রামের স্কুল কলেজ থেকৈ কম পাশ করলেই তার এমপিও বন্ধ সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অথচ সেখানে কিভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় কারা শিক্ষা নেয় সেটা খুজে দেখা হয়না।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫১
244961
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হুম। আপনার সাথে একমত। সরকারের ক্ষরা নজর দিতে হবে এদিকে।
302879
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:৩৪
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:০৮
244995
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File