সুখী দম্পতি
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:১৫:২৩ রাত
সবে মাত্র রাত সাতটা বাজে। মোবাইল হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অাছে রুকসানা। তাল গাছের মাথার উপর বসে চাঁদের অালো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। অপলক নেত্রে অবলোকন করছে সে প্রকৃতির এই সজীবতা, স্রষ্টার নিপুন কারুকার্যতা। অার ভাবছে কত কী।
কিছুক্ষণ অাগে যুবাইরের সাথে কথা হয়েছে ওর। এতেই যেন সারাদিনের পেরেশানী অার ক্লান্তি উবে গিয়েছে। খুব ফ্রেশ লাগছে নিজেকে। চেয়ারটা টেনে নিয়ে গ্রিল ধরে বসে পড়ে ও।
গত বছর রুকসানা অার যুবাইরের বিয়ে হয়েছে। বিবাহের মাধ্যমে তাদের মাঝে একে অপরের প্রতি জন্মেছে প্রাণভরা প্রেম-ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর এই প্রেম-ভালোবাসাই তো পবিত্র, অকৃত্রিম ও নিষ্কলুষ। পক্ষান্তরে অনেক ছেলে মেয়েরা যে বিবাহহীনভাবে একে অপরকে ভালোবাসে,মন দেয়া নেয়া করে, তা কদর্যপূর্ণ, হারাম ও কবীরা গুনাহ, তা সম্পূর্ণই অপবিত্র, ঠুনকো ও নষ্টামীগ্রস্থ।
প্রচন্ড ভালোবাসে ওরা একে অপরকে। রুকসানা তো যুবাইরকে ছাড়া থাকতেই পারে না। কি এক কাজে চার মাসের জন্য বাইরে গিয়েছে যুবাইর। প্রতিদিনই কথা হয় ওদের। মাঝে মাঝে ব্যস্ততা কিংবা অন্য কোন ঝামেলার জন্য যদি যুবাইর ফোন করতে দেরী হয়, তখন রুকসানার পেরেশানীর অন্ত থাকে না। অাজও কি কারণে যেন দেরী হয়েছে। সারাদিন তাই রুকসানা মনটা খারাপ করেছিল ।
ছোটবেলা থেকেই রুকসানা দ্বীনদার পরিবেশে পালিত হয়েছে। ২বছর অাগে মেট্রিক পাশ করেছে ও। বোরকা পরেই স্কুলে গিয়েছে। যুবাইরও বেশ দ্বীনদার ছেলে । সরকারী চাকরী করে সে।
যেদিন থেকে রুকসানা যুবাইরকে স্বামী হিসেবে বরণ করেছে, সেদিন থেকেই রুকসানা তার দেহ মনকে যুবাইরের জন্য বিলিয়ে দিয়েছে। যুবাইরও রুকসানাকে তেমনি গ্রহণ করেছে। বড়ই সুন্দর ওদের প্রেম। বড়ই চারুময়। ওদের নয়নে নয়নে যে হাসি, চাহনিতে চাহনিতে যে ব্যাকুলতা, তা অাসলেই অবর্ণনীয়। যুবাইরই যেন রুকসানার জীবনকে মধুময় করে তুৃলেছে। অার যুবাইরের জীবন স্বর্ণময় উজ্জ্বল হয়েছে এই রুকসানাকে পেয়ে।
বিশেষ কোন কারণে রুকসানা কিছুদিনের জন্য মা-বাবার কাছে থাকে। যখনই যুুবাইর বাসায় অাসে , রুকসানা তার অাপন হৃদয় উজাড় করে দিয়ে যুবাইরকে কাছে টেনে নেয়। যুবাইরও দু'নয়ন ভরে দেখে নেয় তার প্রেম-প্রেয়াসীকে।
রুকসানা কিন্তু দেখতে অতটা সুন্দরী নয়, তবুও যুবাইরের দৃষ্টিতে সে যেন জান্নাতের হুর। রুকসানার দৃষ্টিতে যুবাইর যেন ফেরেশতা। যুবাইরকে কাছে পেয়ে রুুকসানা অাত্মভোলা হয়ে যায়। চলতে থাকে ওদের মাঝে কুশল অার প্রেম বিনিময়।
যে কোন কাজে যুবাইরই রুকসানার অনুপ্রেরণা দাতা। প্রতিটা কাজে রুকসানা যুবাইরের কথা চিন্তা করে। যুবাইর কাজটা দেখে অখুশী হবেনা তো? এ চিন্তাটা সামনে রেখেই রুকসানা প্রতিটি কাজ সমাধান করে। মাঝে মাঝে কোন কাজে ত্রুটি হলে , যুবাইর সুন্দর করে মিষ্টি ভাষায় ভুলটা শুধরিয়ে দেয়। তখন যে রুকসানার কত ভাল লাগে।
যদি যুবাইর রুকসানার কোন কাজের প্রশংসা করে , তখন রুকসানা অানন্দে অাত্মহারা হয়ে যায়। যুবাইর হয়তো ব্যপারটা বঝতে পারে , তাই সামান্য কাজেও সে রুকসানাকে বাহ্বা দেয়।
কখনও যুবাইর কোন বিষয়ে রাগ করলে, রুকসানা প্রতিউত্তর না করে চুপ করে থাকে এবং সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে ক্ষমা চায়। তাতে যুবাইর অনুতপ্ত হয় এবং রুকসানার প্রতি অারো অাকৃষ্ট হয়। অাবার কখনও রুকসানা কোন ব্যপারে অভিমান করলে, যুবাইর এমন ভাব করে যে রুকসানা না হেসে পারে না। তাতে তার মান-অভিমান সব ধুলোয় মিশে যায় এবং যুবাইরের প্রতি তার অনুরাগ বহুগুণে বেড়ে যায়।
ওদের মধ্যে মাঝে মাঝে ঈমানের অালোচনাও চলে। রুকসানা অনেক নতুন নতুন কথা তখন শিখে নেয়। ওদের এই দ্বীনী অালোচনার মজলিসে হয়ত অাল্লাহর রহমতের সকীনা নাযিল হয় । তাই তখন ওদের এতটা শান্তি লাগে।
যুবাইর নানা সময়ে নানা কিছু রুকসানার জন্য কিনে অানে। যা-ই অানুক যুবাইরের কেনা প্রতিটি জিনিষই রুকসানার খুব ভালো লাগে। একটা সামান্য জিনিষও রুকসানার কাছে বড় কিছু হয়ে দেখা দেয়। বার বার নেড়ে-চেড়ে দেখে নেয় জিনিসগুলো। যুবাইরকে এতো ভালো লাগে বলেই হয়তো তার প্রতিটা জিনিষ রুকসানার কাছে এতো ভাল লাগে।
রুকসানা কিন্ত যুবাইরের সাথে একেবারেই ফ্রি। এতটা ফ্রি হওয়ার ক্ষেত্রে যুবাইরের ভূমিকাই বেশী। এমনিতেই মেয়েটা বেশ হাসি-খুশী,অার যুবাইরের সামনে অারও বেশী। এই গুণটা ও ওর মায়ের কাছে শিখেছে। যুবাইরও ওর প্রফুল্লতা দেখে প্রফুল্ল হয়। যুবাইর মাঝে মাঝে বলে, জান রুকসানা, তোমার কাছে অাসলে অামার সব কষ্ট-ক্লান্তি কোথায় যেন উড়ে চলে যায়। খুব ভাল লাগে তখন রুকসানার , নিজের জীবনটাকে সার্থক মনে হয়।
রুকসানা কখনো কখনো যুবাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবে- দুনিয়াতেই এত সুখ। যুবাইরও রুকসানার দিকে তাকিয়ে ভাবে- অাহ ! এখানেই বুঝি অামার শান্তির নীড়। সত্যিই ওদের প্রেম-ভালোবাসা রুপ সমুদ্র এত গভীর যে, যে-ই সেটা পরিমাণ করতে যাবে, সে-ই হাঁফিয়ে উঠবে, কিন্তু গভীরতা খুঁজে পাবে না।
রুকসানা ওর শশুর বাড়ীর সবাইকে খুব ভালোবাসে। শশুর-শাশুড়ীকে নিজের মা-বাবার মতই অাপন করে নিতে সদা সচেস্ট। যুবাইরের কোন বোন নেই। চার ভাই ওরা। যুবাইরই বড়।
রুকসানা অার ওর শাশুড়ীর মাঝে সম্পর্কটা এত নিবিড়, যে কেউ দেখলে বলবে মা-মেয়ে। যুবাইরের মাও রুকসানাকে খুব স্নেহ করেন।
শশুর বাড়ীকে রুকসানা নিজের বাড়ীর মত মনে করে। বেশীর ভাগ সময় শাশুড়ীর সাথে সাথে থাকে সে।না জানা কাজটা শিখে নেয়। ওর শাশুড়ীও তেমনি , নিজের মেয়ের শত অন্যায় যেমন মায়ের দৃষ্টিতে কিছু না, তেমনি তিনি তার এই বউটির কত ভুল যে শুধরিয়ে দেন, কত অজানাকে জানিয়ে দেন তার ইয়ত্তা নেই। রুকসানাও বেশ অাগ্রহ ভরে শিখে নেয়।
রুকসানা ওর দেবরদের সাথে পর্দা করে। কিন্তু এর মাঝেও সে তাদের অাপন ভাইয়ের মত স্নেহ করে। রুকসানা ওর বাবাকে খুবই ভালোবাসে, ওর শশুরের প্রতি তাই শ্রদ্ধা পরিমাণে একট বেশী। যুবাইর অার যুবাইরের পরিবারের সবাই রুকসানার প্র্রতি সন্তষ্ট।
মাঝে মাঝে যুবাইর রুকসানাকে নিয়ে শশুর-শাশুড়ীকে দেখতে অাসে। তখন রুকসানাদের বাসায় অানন্দের বন্যা বয়ে যায়। রুকসানা ও তার মা-বাবার তখন খুুশীর অন্ত থাকে না।
রুকসানা জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়াকে পেয়েছে। অার কিছু ওর চাওয়ার নেই। অাজ বেলকনীতে বসে বসে রুকসানা এসব কথাই ভাবছিল। ওর মা-বাবাই ওকে জন্ম দিয়েছেন, কিছুটা হলেও দ্বীন শিখিয়েছেন। সুন্দর পরিবেশে বড় করেছেন। ওর বাবা অার ছোট চাচাই ওকে যুবাইরের জীবনে প্রবেশ করিয়েছেন। তাই দু'ফোঁটা কৃতঙ্গতার অাঁসু ওর চোখ দিয়ে বেয়ে পড়ে।
এই যুবাইর ও রুকসানার মত অাদর্শ স্মামী-স্ত্রী রুপে জীবন যাপন করাই তো সকল দম্পতির কর্তব্য। দুনিয়ার সুখ ও অাখেরাতের শান্তি ও কল্যাণ এরকম পবিত্র জীবনেই নিহিত।
বিষয়: সাহিত্য
১৩১১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রুকসানা! তুমি বড় হ্যাংলা
তোমার স্বাস্থ্যের দরকার আছে।
আমার মামাতো বোনের নাম রোকসানা।
ভালো লাগলো
মানুষের লাইফ কি আসলেও এত সুন্দর, এত সহজ, এত ঝামেলা মুক্ত হয়?
আহ এমন গল্পের মত লাইফ ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে যায়!!!!!!!!!
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লেখনীর জন্য
বউটা যদি হতো আমার
রোকসানারই মত
হতো এই গল্পেরই মতো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন