শীতে ত্বক ফাটার কারণ ও প্রতিকার
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৫৮:৩১ রাত
শীতকালে বাতাসের অার্দ্রতা কমে যায়, ফলে বায়ুমন্ডল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এই শুষে নেয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফেটে যেতে থাকে।
অামাদের দেহের ৫৭শতাংশই হলো পানি। অার এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগ। ফলে ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে , ত্বক হয়ে পড়ে দূর্বল অার অসহায়। ত্বকের যে সমস্ত গ্রন্থি থেকে তেল অার পানি বের হয়ে থাকে , তা অার অাগের মত ঘর্ম বা তেল কোনটাই তৈরি করতে পারে না। ফলে ত্ক অরো শুকিয়ে যেতে থাকে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অামাদের দেহে থাকে ঘর্মগ্রন্থি, থাকে তেলগ্রন্থি- যেখান থেকে অনবরত তেল অার ঘাম বের হতে থাকে। এই ঘাম অার তেল মিলে দেহের উপর একটি তেল অার পানির মিশ্রণ বা অাবরণী তৈরী করে - যা দেহকে শীতল করে রাখে এবং ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের ফাটা ভাব প্রতিরোধ করে। শীতকালে বাতাসের অার্দ্রতা কমে যাওয়ায় বায়ুমন্ডলের সেই তেল ও পানি শুষে নেয়ার ক্ষমতা জন্মায়। তাই এই সময় দেহ ও ত্বকের শুষ্কতা দূরীকরণে তেল ও পানির মিশ্রণ বা বডিলোশন কিংবা ময়েশ্বরাইজার ক্রীম উপকারী।
শীত এলে ত্বক ছাড়াও সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয় ঠোঁট নিয়ে। কম-বেশী ঠোঁট ফাটা সকলেরই হয়। সেক্ষেত্রে তৈলাক্ত প্রলেপ ঠোঁটে ব্যবহার করলে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক্ষেত্রে ভেসলিন, লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ঠোঁট ভাল রাখা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো কখনোই উচিৎ নয়। এতে ঠোঁট ফাটা অারো বেড়ে যেতে পারে।
অার এক শ্রেণীর লোকের এই শীত এলেই পা ফাটার প্রবণতা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পা শুকিয়ে যাওয়া মাত্র ভেসলিন মেখে দিন। এছাড়াও গ্লিসারিন ও পনির দ্রবণ পায়ে মাখলে , পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অার পায়ের ফাটা কম হলে অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেল ব্যবহারেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
তবে এখন বাজারে অনেকরকমের ময়েশ্বারাইজার পাওয়া যায়। এটা অাসলে তেল অার পানির একটা মিশ্রণ। এতে থাকে ত্বক কোমলকারী পদার্থ যেমন- পোট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল ওয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকয়িড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন, প্লাইকল ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহারে বেশ উপকার হয়।
এখন শীতকালে বাড়ে এমন একটি রোগের ভ্যালগ্যরিস নিয়ে কিছুটা অালোচনা করবো। এটি একটি জন্মগত রোগ এবং রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ্য করা যায়্ । এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হাজারে অন্ততঃ এ রোগে একজন ভোগে থাকে। এ রোগে যারা অাক্রান্ত হয় , তাদের হাত ও পায়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ত্বক ফাটা এবং ছোট ছোট গুড়ি গুড়ি মরা চামড়া বা অাঁইশ পায়ের সামনের অংশের বা হাতের চামড়ায় লক্ষ্যণীয়ভাবে ফুটে উঠছে। তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকে সম্পূর্ণই স্বাভাবিক।
তাদের কাছে প্রশ্ন রাখলে তারাই বলবে যে, এ রোগটি তাদের দেহে ছোটবেলা থেকেই অাছে। এদের ক্ষেত্রে শীতকাল এলেই প্রতিবছর এর ব্যাপকতা বেড়ে যায়্ । এদের হাতের ও পায়ের দিকে তিকালে দেখা যাবে যে, হাতের রেখাগুলী খুবই স্পষ্ট এবং মোটা - যা কিনা সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। এরই সাথে তাদের থাকে এ্যালার্জিক সমস্যা। তাদের কাছে প্রশ্ন রাখলে তারাই বলবে যে, তাদের প্রায়শঃই নাক দিয়ে পানি পড়া অর্থ্যাৎ সর্দি সর্দি ভাব থাকে। তাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে অারো দেখা যাবে যে, তাদের পরিবারে এ্যালার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনো অাছে।
এ রোগটি একেবারে কখনই ভালো হয় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শীত এলেই বেশী বেশী করে তৈলাক্ত পদার্থ ত্বকে মাখলে, ত্বক ভাল থাকে এবং ফাটা ভাব পরিস্ফুট হয় না।
তবে যাদের ফাটা অবস্থা খব বেশী , তাদের ক্ষেত্রে অালফা হাইড্রোক্সি এসিড মাখলে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়। অার এটি পেতে যদি অসবিধা হয়, তাহলে গ্লিসারিন এর সাথে সমপরিমান পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮১ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শীত কালে এ সমস্যার মুখোমুখী অনেকেই হয়!
এ বিষয়ে সাবলীল সুন্দর উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান আপনাকে!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন