দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর……
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৫৪:৪১ রাত
সারাক্ষণ একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করে আমেনা বেগমের মনে। ভয়ে সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেন না তিনি। না জানি কখন তার দরজায় কেউ কড়া নেড়ে বসে।
বড় একটা উঠানের চারপাশে চারটি বড় দোচালা টিনের ঘর। বাড়ির পেছনে বিশাল বাগান। বাগানটার দিকে দিনের বেলায় তাকালেও গা ছমছম করে ওঠে। অথচ এই জঙ্গলঘেরা এত বড় বাড়ীতে আমেনা বেগম এবং তার দুই যুবতী মেয়ে বুশরা ও তাবাসসুম ছাড়া আর কেউ নেই। প্রায় ছয় মাস হলো আমেনা বেগমের স্বামী আবু সাঈদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। বীরত্বের সাথে লড়ে চলেছেন দেশের জন্য।
একদিকে স্বামী বীরত্বের সাথে যুদ্বের জন্য লড়ছেন দেশের জন্য,একটি লাল-সবুজের পতাকার জন্য,একখন্ড স্বাধীন সার্বভৌম পাওয়ার জন্য। অন্যদিকে স্ত্রী কৌশলে লড়ে চলেছেন নিজের ও কন্যাদের ইজ্জত-আবরু রক্ষার জন্য।
রাতে চারদিক যখন নিরব হয়ে যায়,তখন একটা গাছের পাতা পড়লেও গা শিউর ওঠে আমেনা বেগমের। এই বুঝি হায়েনার দল এসে পড়েছে।
একরাতে হঠাৎ পাশের এলাকায় চেঁচামেচি শুনে আঁৎকে উঠলেন আমেনা বেগম। আজ বুঝি আর রক্ষা করতে পারবেন না আদরের পুত্তুলিদেরকে। কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। ডুঁকরে কেঁদে উঠলেন আমেনা বেগম। সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে জানা সব দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলেন।
ঘন্টখানেক পর চেঁচামেচি আরও কাছে শোনা গেল। মনে হলো যেন বাড়ীর পেছনের বিশাল বাগান ভেঙ্গেচুরে উঠে আসছে হায়েনার দল।
আর স্থির থাকতে পারলেন না আমেনা বেগম। যুদ্ধে যাবার আগে স্বামী আবু সাঈদ স্ত্রী-কন্যাদের ইজ্জতের কথা ভেবে ঘরের বিশালকার মাচার নিচে একটি গর্ত খুঁড়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন , কোনো বিপদ দেখলে আল্লাহর উপর ভরসা করে এই গর্তে আশ্রয় নিবে। তাই আমেনা বেগম তৎক্ষণাৎ মেয়েদের নিয়ে সেই গর্তে ঢুকে পড়লেন। আর মনে মনে স্মরণ করতে থাকলেন আল্লাহ তা’আলাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যে হায়েনার দল ঘরের একেবারে কাছে চলে এলো। এরপর উঠানে এসেই ক্ষুধার্ত হিংস্র জন্তুর মতো গর্জে উঠে হাঁক ছাড়লো- কোন্ ঘর মে , ঘর ছে বাহির নেকাল আ।
এভাবে কয়েকবার হাঁক ছাড়ার পরও কোন সাড়া না পেয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল ঘরের মধ্যে। ঢুকেই চারদিকে লাইট মেরে দেখতে লাগলো। কিন্তু গর্তটা এমনভাবে করা ছিল যে , সেটা হায়েনাদের দৃষ্টিগোচর হলো না। তাই তারা ঘরে কাউকে না পেয়ে মনের ক্ষুধা মেটাতে ঘরের সব আসবাব পত্র লন্ডভন্ড করে দিয়ে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো তর্জন-গর্জন করে বের হয়ে আসলো।
তাদের চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে আমেনা বেগম মেয়েদের নিয়ে বেড়িয়ে আসলেন এবং সাথে সাথে আল্লাহর সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন।
এভাবে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন আর দীর্ঘ প্রতিক্ষার প্রহর শেষে হঠাৎ একদিন আমেনা বেগম দেখলেন , তার স্বামী আবু সাঈদ দৌড়ে আসছেন বাড়ীর দিকে। স্বামীকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে তার মনে আশংকা জাগলো, হয়তোবা হায়েনার দল স্বামীকে দাওয়া করেছে। তাই তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন স্বামীর আশু বিপদাশংকায়।
কিন্তু না! স্বামী দৌড়ে এসে তার সব ভয়-শংকা মুছে তাকে জাপটে ধরে আবেগ কন্ঠে বললেন- আমেনা,আমরা এখন মুক্ত , আমরা এখন স্বাধীন। আজ থেকে আমরা স্বাধীন দেশের অধিকারী।
কথাগুলো শুনেই আমেনা বেগম খুশীতে কেঁদে ফেললেন। আর তার মুখ থেকে অবলীলায় বেরিয়ে আসলো, আলহামদুলিল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১০৪২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
very nice..
মন্তব্য করতে লগইন করুন