পড়োবাড়ীর বদ্ধ কুঠিরে... (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৩১:০৯ রাত
পড়োবাড়ীর বদ্ধ কুঠিরে...... (প্রথম পর্ব)
পড়োবাড়ীর বদ্ধ কুঠিরে........ (দ্বিতীয় পর্ব)
চতুর্দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। চারপাশে ঘর। তার মধ্যে একটি ঘরের বাতায়ন দিয়ে অালোর রশ্মি ঠিকরে বের হচ্ছিল। বাকিগুলো অন্ধকার। অালোকিত ঘর থেকে চাপা কথাবার্তার শব্দ ভেসে অাসছে।
তারা দুজন খুব সতর্কতার সঙ্গে সেই ঘরের একদম দরজার নিকট পৌছে গেল। অাজীম উঁকি দিয়ে দেখল- চারজন লোক তাস খেলছে অার মাঝে মাঝে অট্টহাসি দিচ্ছে।
একজন বললঃ কিরে, চুন্নু তো গেল, কিন্তু এখনও ফিরতেছে না ক্যান? কোন সমস্যা-টমস্যা হলো না তো?
অারেকজন বললঃ ওরে, তোর মনে যে এতো ডর শালা, মাইয়্যা হইয়া জন্মাইতে পারস নাই?
প্রথমজন বললঃ ডর না, ডর না। এইসব করতে হইলে সাবধানে থাকতে হয়। কহন কোন অসুবিধা হইয়া যায়, বলা তো যায় না।
দ্বিতীয় ব্যক্তি উঠতে উঠতে বললঃ অারে থো তোর সাবধান, অামিই দেখতাছি চুন্নু কোথায় গেল।
তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ দেহিস, তুইও অাবার উধাও হইয়া যাইস না।
অারে রাখ' বলে লোকটি গর্বের সাথে উঠে দরজার দিকে পা বাড়াল।
অপ্রত্যাশিতভাবে লোকটির অাগমণে কিছুটা চমকে উঠল অাজীম ও ফারুক। পরক্ষনেই নিজেদের সামলে দুজন দাঁড়িয়ে গেল দরজার দু'পাশে। লোকটি যখন দরজা পার হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরল অাজীম। লোকটির মুখ থেকে সামান্য গোঙ্গানী বেরিয়ে এল। তারপর রুমাল চেপে ধরল নাকে। ঙান হারিয়ে ফেলল লোকটি।
গোঙ্গানীর শব্দে তার সাথীরা তৎপর হয়ে উঠল। ঘটনা জানার জন্য যখন তারা বের হতে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে ফারুক রিভলবার উঁচিয়ে বললঃ একজনও নড়াচড়া করতে পারবে না। পালানোর ব্যর্থ চেস্টা করলে গুলী করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিব।
ঘটনার অাকস্মিকতায় লোকগুলো ভেবাচেকা খেয়ে গেল। কোন কর্তব্য স্থির করতে না পেরে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেল।
ওদিকে অাজীম প্রথম লোকটিকে বাঁধার কাজে ব্যস্ত ছিল। তাকে বাঁধা হয়ে গেলে, সে বাকী তিনজনকেও ঝটপট বেঁধে ফোলল।
তারপর অাজীম জিঙ্গাস করলঃ বল্ ! তোরা এখানে কি করিস? তোদের সঙ্গে অার কারা থাকে?
প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করল লোকগুলো। কিন্তু যখন উত্তম মাধ্যম শুরু হল, তখন সবকিছুই স্বীকার করল।
সর্দার গোছের লোকটি বললঃ অামরা দীর্ঘদিন এখানে অাস্তানা গেড়ে অাছি। অামরা অাশ-পাশের গ্রামের লোকদের অপহরণ করে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেই। কিন্তু কেউ যদি মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করে , তাহলে তাকে হত্যা করি।
লোকগুলোর সংক্ষিপ্ত জবানবন্দী নিয়ে অাজীম সমস্ত ঘরে তল্লাশী চালাল। যে ঘরে সন্ত্রাসীরা ছিল, সে ঘর থেকে পাওয়া গেল, পাঁচটা স্টেনগান, কয়েক রাউন্ড গুলী, কয়েক বোতল মদ ও বেশ কিছু টাকা-পয়সা। পাশের কক্ষে থেকে উদ্ধার করা হল পাঁচজন বন্দীকে। তারা মুক্তি পেয়ে কৃতঙ্গতায় ভেঙ্গে পড়ল অাজীম ও ফারুকের প্রতি।
রাত যখন প্রায় শেষ, অাজীম ও ফারুক সন্ত্রাসীদের এবং উদ্ধারকৃত সকল অস্ত্র-শস্ত্র ও বন্দী গ্রামবাসীদের নিয়ে গ্রামের পথ ধরল।
তারা যখন গ্রামে পৌছল, তখন ফজরের অাজান হচ্ছিল। অাজীম নিজের ঘরে সন্ত্রাসীদের অাটকে রেখে গ্রামবাসীদের নিয়ে নামায পড়তে গেল মসজিদে।
বন্দী গ্রামবাসীদের দেখে মসজিদের মুসল্লীরা অবাক হয়ে গেল। কেননা, তারা গত তিন-চারদিন যাবত নিখোঁজ ছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ কোথা থেকে অাগমণ করল?!
নামাযের পর তারা সবকিছু খুলে বলল।
কাহিনী শুনে সকলেই বিস্মিত হল। তারা অাজীম ও ফারুকের প্রশংসায় ব্যস্ত হয়ে উঠল।
কিছুক্ষণ পর থানা থেকে পুলিশ অাসলো। ফারুকের নিকট থেকে সবিস্তারে সবকিছু জেনে নিলেন পুলিশ অফিসার অাকরাম খান। তারপর উদ্ধারকৃত সকল অস্ত্র-শস্ত্র এবং সন্ত্রাসীদের নিয়ে গেলেন থানায়।
গ্রামবাসীদের সকল শংকা দূর হয়ে গেল। তারা শান্তিতে দিন কাটাতে লাগল। সরকারের পক্ষ থেকে অাজীম ও ফারুককে পুরস্কৃত করা হল।
বিষয়: সাহিত্য
১২৬৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দরকার। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।যাযাকাল্লাহ
পড়ে নিব সময় করে!
অনেক অনেক ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম!
মন্তব্য করতে লগইন করুন