পড়োবাড়ীর বদ্ধ কুঠিরে..... (প্রথম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫২:৫৪ বিকাল
বৃদ্ধ বটগাছের নিকট অসংখ্য মানুষের ভীড়। সকলের মুখে একই কথা , অাজও মানুষ খুন ! এভাবে প্রতিদিন মানুষ খুন হলে তো গ্রাম শূণ্য হয়ে যাবে। কিন্তু কারা এই ঘাতক বাহিনী? তারা কেন মানুষ হত্যা করে, তাদের উদ্দেশ্যই বা কি? সকলের মনে একই প্রশ্ন।
জনতার ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেল অাজীম ও ফারুক। সম্মুখে দৃষ্টি ফেলতেই তাদের চোখ ছানাবড়া। বটগাছের ডালে ঝুলছে একজন মধ্যবয়সী পুরুষের লাশ। সম্ভবতঃ গলায় ফাঁস দিয়ে মারা হয়েছে লোকটিকে।
জিঙ্গাসা করে তারা জানতে পারল- লোকটির নাম অাবদুর রহীম। এই গ্রামে তার বাড়ী। সে গত চারদিন যাবত নিখোঁজ ছিল। কারা তাকে অপহরণ করেছিল কেউ জানেনা। হঠাৎ অাজ ভোরবেলা লোকজন দেখতে পায় - তার মৃত দেহ গাছের ডালে ঝুলছে। ঘটনাটি কিছু সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করলো তারা দু'জন।
অাজীম ও ফারুক উভয়ই চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাড়ী ফতেহপুর গ্রামে। ছোটবেলা থেকে একই সাথে লেখা-পড়া করছে। একারণে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দুজনের মধ্যে বেশ ভাব। যেখানেই যায় একসঙ্গে যায়।
দুদিন হল তারা বাড়ীতে এসেছে। অাজ ফজরের নামায পড়ে হাঁটাহাঁটি করার জন্য নদীর তীরে এসেছিল। কিন্তু মাঝ পথেই তারা দেখতে পেল হত্যাযঙ্গের নির্মম চিত্র। ব্যথায় তাদের হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠল। সেই সাথে এর প্রতিকারের স্পৃহা তাদের রক্তকে উত্তপ্ত করে দিল।
কিছুক্ষণ চলার পর তারা নদীর তীরে পৌছে কোমল ঘাসের বিছানায় বসে পড়ল। নীরবতার মধ্য দিয়ে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। উভয়ের হৃদয় অাজ শোকাহত। কি শুরু হল এই সোনার বাংলায়? সন্ত্রাসী নামক ঘাতক বাহিনীর হাতে বাংলার মেহনতী মানুষ অাজ জিম্মী ! তাদের মুক্ত অাকাশে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বান নেয়ারও অবকাশ নেই। এর জন্যই কি স্বাধীন করা হয়েছে এই দেশকে?
ত্রিশ লক্ষ প্রাণ অার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাধ কেন অাজ এভাবে খর্ব হতে চলেছে?
অাচ্ছা ফারুক , এই হত্যাকান্ড কারা ঘটাতে পারে? নীরবতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করল অাজীম।
ঃ অামার চাচাতো ভাই মিজানের কাছ থেকে জানতে পারলাম- এই এলাকায় নাকি সন্ত্রাসীদের বড় অাখড়া রয়েছে। তাই অামার মনে হয় , এটা সন্ত্রাসীদের কাজ।
ঃ অামারও তা-ই মনে হয়। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন এভাবে খুন হচ্ছে অার প্রশাসন মুখে কুলুপ এটে বসে অাছে?
ঃ কি করবে প্রশাসন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রশাসনই কাঁপে থরথর করে।
ঃ কিন্তু কোথায় তাদের অাস্তানা? এরা থাকেই বা কোথায়?
ঃ মিজানের কাছ থেকে অামি শুনলাম- অামাদের পাশের গ্রামে নাকি অনেক পুরাতন একটা বাড়ী অাছে, বাড়ীটি "পড়োবাড়ী" নামে পরিচিত। ইংরেজরা যখন অামাদের দেশ শাষণ করত, তখন নাকি তারা বসবাসের জন্য এই প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু কালের অাবর্তে ঐ বাড়ীটা এক সময় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
তারপর থেকে ঐ বাড়ীকে নিয়ে মানুষ অাঁকড়ে থাকে কল্পনা-জল্পনার নানা চিত্র। কেউ বলে, ওখানে ভূত-পেত্নী বাস করে। অবার কেউ কেউ বলে, সেখানে প্রাণ সংহারক এক দানব থাকে। অাশ্চর্যের বিষয়- যে ঐ বাড়ীতে প্রবেশ করে, সে অার ফিরে অাসতে পারে না। এই ভয়ে বাড়ীতে কোন মানুষ প্রবেশ করে না।
কিন্তু অামার দৃঢ় বিশ্বাষ , ঐ বাড়ীতেই সন্ত্রাসীরা অাখড়া গেড়েছে। ভূত-পেত্নী বা দানব-টানব কিছুই নেই সেখানে।
ঃতাই ! বিস্মিত হয়ে বলল অাজীম। তাহলে তো অার চুপ করে বসে থাকা যায় না। যেভাবেই হোক, ওদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ফারুক অাজীমের কথায় পূর্ণ সমর্থন জানাল। অতঃপর দু'জন প্রতিঙাবদ্ধ হল- যেভাবেই হোক সন্ত্রাসীদের এই এলাকা থেকে উৎখাত করবেই। তারপর দুজন নিজ নিজ বাড়ীর পথ ধরল।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
১৩৬০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো হয়নি বুঝি.?
জুবায়ের হোসাইন,রকিব হাসান...চমতকার লিখতেন।
আশা করছি তাদের মতো আর একজনকে পাওয়া যাবে।
আবার রাতুলের সাথে আমরা আ্যডভেন্চারে যেতে পারব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন