সোনালী সংসার-২
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৫:২৯ রাত
সময় যেমন বসে থাকে না, সময়ের হাত ধরে সামাজিক কর্মকান্ডও থেমে থাকে না। মাওলানা অাব্দুল মান্নান সাহেবও বড় মেয়েটিকে সুপাত্রস্থ করার কথা একসময় ভাবতে থাকেন। যতই অাদুরে হোক, ঘরে রেখে দেয়ার নিয়ম তো অার নেই।
ভাল ঘর পাওয়াটা সমস্যাই বটে। সমাজে একটা প্রচলন রয়েছে, ছেলেটা যেমনই হোক , মেয়েটা সবাই ভাল চায়।
তাহমিদা এমনই একটি গুণবতী মেয়ে , যাকে পুত্রবধু করে নেয়ার জন্য তার পিতা-মাতার নিকট এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু নিজেদের পরিবারের অনুকূলে নয় বলে কোনটাকেই মেনে নিতে পারছিলেন না তারা। অাবার অালেম ছেলে অনেক পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের অনেকেরই পরিবারে থাকে না ইসলামী কৃষ্টি-কালচার। তদ্রুপ বহু ইসলামী ভাবধারা সম্পন্ন পরিবারে সূপাত্রের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়।
মাওলানা অাব্দুল মান্নান সাহেব অন্য সবার মত বিঙাপন কিংবা ঘটকালীর দিকে না গিয়ে ভেতরে ভেতরে অনুসন্ধান চালাতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তাঁর অাস্থাভাজন একজন মুসল্লীর মাধ্যমে পেয়ে গেলেন তার মনমতো একটি ছেলে। মাওলানা উমর ফারুক নামে এ ছেলেটি দেখতে যেমন মাননসই, অাচার-ব্যবহারও তেমন মার্জিত ও সুন্দর।
মাওলানা অাব্দুল মান্নান এমন সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাইলেন না। কারণ, এমনটিই তিনি মনে মনে খুঁজছিলেন। এক্ষেত্রে যদিও জানেন- তার মত-ই অাদূরে মেয়ে তাহমিদার মত তথাপি তার সম্মতি নিয়ে এবং স্বীয় স্ত্রীর পরামর্শক্রমে যথাশীঘ্র সবকিছুর ব্যবস্থা করতে লেগে গেলেন তিনি।
মাওলানা উমর ফারুক ও অালেমা তাহমিদা অাখতারের শুভ বিবাহ উপলক্ষে কনের পিতা নিজ বাড়ীতে কিছু অায়োজন করতে চাইলেন। কিন্তু বরপক্ষ তা করতে দিলো না। বরং তারাই কনেকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে ঘটা করে ওয়ালিমার অায়োজন সম্পন্ন করলো। মাওলানা অাব্দুল মান্নান সাহেব মেয়ের জামাইকে অনেক পীড়াপীড়ির পর একটি হাতঘড়িই শুধু হাদিয়া স্বরুপ দিতে পেরেছিলেন। উপরন্তু বরপক্ষ নিজেরাই কনেকে ঘরে নিয়েছিল নানা অলংকারে সজ্জিত করে এবং ঘরের যাবতীয় অাসবাবের ব্যবস্থা তারাই করেছিল।
সমাজে এ বিবাহটি একটি বিস্ময় হিসেবে প্রকাশ পেল। কেননা সবাই জানে- বিবাহ উপলক্ষে কনের পিতাকে বিশাল একটি বরযাত্রীসহ কয়েকশত মানুষের খাবার-দাবারের অায়োজন করতে হয়। বরকে দিতে হয় উপর্যুপরী যৌতুক। অার কনেকে স্বর্ণালংকারে সজ্জিত করার এক বৃহদাংশ কনের পিতাকেই বহন করতে হয়। অথচ ইসলামে যৌতুক জাতীয় কিছুই নেই, নেই কনেপক্ষের ওপর বিবাহ উপলক্ষে খাবারের অায়োজনের কোন চাপ। বরং বরপক্ষকে বলা হয়েছে বিবাহোত্তর ওয়ালীমার অায়োজন করতে।
কনেপক্ষের এহেন দুরবস্থার জন্য অনেক ক্ষেত্রে কনেরাই দায়ী হয়ে থাকে। দ্বীনী শিক্ষা ও উপযুক্ত দীক্ষার অভাব, শরীয়াহ পালনে অনীহা , শালীনতার পথ পরিহার ইত্যাদী নারী জাতিকে করে তুলেছে বাজারের সাধারণ পণ্যের মত। যুগের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার দরুণ হাজারো কন্যা-নারীর জীবন ব্যবস্থা এমনই হয়ে থাকে। তাই সমাজের নানা রেওয়াজ-রীতির ধকল সহ্য করতে হয় মেয়ে পক্ষকে। এভাবেই কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার মিছিল প্রলম্বিত হচ্ছে দিনে দিনে।
* * *
তাযকিয়া অার দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। টলতে টলতে কোনমতে বড় অাপুর শূণ্য খাটে বসে পড়ল। কাল অনেক রাত পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিল। অাব্বু, অাম্মু, ভাই সবাই কাছে থাকা সত্বেও বিশাল একটা শূণ্যতা বিরাজ করছে তার চতুর্পার্শে। সুখে-দুঃখে বড় অাপুকে সবসময় কাছে পেয়েছিল সে। জীবনের বিভিন্ন তাগিদে তার থেকে পেয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা। কিন্তু এখন সে একা। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজে এখন অাপু বিহীন সারতে হবে তাকে। থাকবে না অার বড় অাপুর অাদর মেশানো শাষণ।
ওজু সেরে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যায় তাযকিয়া। নামায শেষে দু'হাত তুলে অা্তি জানায় মহান অাল্লাহর দরবারে- তাহমিদা অাপুর দেখানো সুন্নাহর গালিচা বাছানো পথ থেকে যেন সে কখনো বিচ্যুত না হয়। তার সেখানো নীতিকেই যেন সে অাঁকড়ে ধরে চলতে পারে জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটি পর্যন্ত। অার তাদের উভয়ের সোনালী জীবন যেন চলতে থাকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর পথে। সর্বপরি তাদের পরকালীন জীবন যেন হয় সাফল্য মন্ডিত।
*****************সমাপ্ত*************
সোনালী সংসার-১
বিষয়: সাহিত্য
১২৩০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাহক খুব ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন