সোনালী সংসার-১
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:২২:৫৮ রাত
এলার্ম ঘড়ির ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাযকিয়ার। অবশ্য ঘড়ির অাওয়াজ না পেলেও প্রতিদিন এ সময়ে জেগে ওঠে সে। তারপর ছুটে যায় বড় অাপু তাহমিদার কক্ষে। ততক্ষণে তিনিও জেগে ওঠেন। অতঃপর দুজনে মিলে ওজু সেরে অাট রাক'অাত তাহাজ্জুদ নামায অাদায় করে ফজরের অাযান পর্যন্ত কুরঅান তিলাওয়াতে বসে যায়। এরপর কিছুটা অালো-অাঁধারিতে ফজরের নামায শেষ করে দুজনে মিলে নিজেদের বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে। গায়ে প্রভাতের স্নিগ্ধ মনোরম বাতাসের পরশ বুলিয়ে ঘরে ফিরে অাসে।
তাযকিয়ার বয়স দশ বছর। তবে শুধু এখন নয়, বুঝ হবার পর থেকেই বড় অাপুর এমন মধুময়ী সান্নিধ্য পেয়ে অাসছে সে। শিক্ষালয়ে অাবাসিক থাকাকালীনও শেষ নিশিতে জেগে উঠে একসঙ্গে তাহাজ্জুদ, তিলাওয়াত , জিকির প্রভৃতি ইবাদত-বন্দেগী করা ছিল তাদের প্রতিনিয়ত অভ্যাস।
রীতিমত অাজো জেগে উঠে প্রথমেই ছুটে যায় বড় অাপুর কক্ষের দিকে। কিন্তু অন্যদিনের ব্যতিক্রম। অাজকে হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠলো। বিছানাটা খালি পড়ে অাছে। পাশের অালনাটিতে সবসময় বেশ ক'জোড়া কাপড় সাজানো থাকতো, সেখানে অাজ দু-একটি কাপড় অাগোছালোভাবে পড়ে অাছে। মনে পড়ে যায় সবকিছু। চোখের পাতা দু'টি তার ভিজে ওঠে তার।
গতকাল এ বাড়িতে একটি উৎসব বয়ে গিয়েছিলো। উৎসব মানেই তো অানন্দের কিন্তু, সে অানন্দ বিরহ ও বেদনার বার্তা হয়ে হাজির হয়েছিল তাযকিয়ার জন্য। সে জানে- এমন একটি দিন অাসবে , যে দিনটি দু'বোনের বন্ধুত্বের দেয়ালে ফাটল ধরিয়ে দিবে। দেখতে দেখতে সে দিনটি সহসাই তার সামনে এসে গেল। অার বড় অাপু তাহমিদাও যেন পাষাণের মত দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের জাল ছিঁড়ে নতুন দিনের পথ ধরে চলে গেছেন, অার তাযকিয়ার জন্য রেখে গেছেন পেছনের দিনগুলোর অশ্রুভেজা স্মৃতি।
হবিগন্জ জেলার এক গ্রামে বাস করেন মাওলানা হাফেজ অাব্দুল মান্নান সাহেব। জেলা সদরের অদূরে একটি মসজিদে ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দুই মেয়ে ও তিন ছেলে বিশিষ্ট তার পরিবারের অায়ের উৎস এই খিদমত। তবে সেখানে অল্পেতুষ্টি ও তাওয়াক্কুল অালাল্লাহ-ই প্রাধান্য পায়।
অাব্দুল মান্নান সাহেব স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসারটিকে শুরু থেকেই তৈরী করে নিয়েছিলেন ইসলামের মহান অাদর্শে লালিত একটি ব্যতিক্রমধর্মী জান্নাতী কানন হিসেবে। তার এ কাননে একে একে ফুটে ওঠে পাঁচটি ফুল। তারা শিশুকাল থেকেই ইসলামী পরিবেশ পেয়ে সুষ্টুভাবে বেড়ে উঠেছে। এজন্য ইসলামী নিয়ম-কানুনকে তারা নিজেদের মধ্যে প্রতিষ্টিত করতে সদা নচেষ্ট।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি বাবার অাদরের মাত্রাটা কিঞ্ছিত বেশী। বড় মেয়ে তাহমিদা শিশুকাল থেকে বাবার হাত ধরে মাদরাসায় অাসা-যাওয়া করতো। এক সময় সর্বোচ্চ শিক্ষা শেষ করে সেখানেই দ্বীনের খিদমতের দায়িত্ব পালন করতে লাগলো। তখনও বাবার হাত ছাড়েনি। বাড়ীতে অাস-যাওয়ার জন্য সবসময় বাবাকেই মাধ্যম বানায় সে। এরই মাঝে সে নিজেকে একজন অাদর্শ মহিয়সী নারী হিসেবে গড়ে নিয়েছে।
অালেমা তাহমিদা অাখতার এখন একটি মহিলা মাদরাসার শিক্ষিকা। একমাত্র ছোটবোন তাযকিয়াকে তিনি তার মত করেই গড়ে নিয়েছেন। তাযকিয়াও অন্তরঙ্গ বন্ধৃ ও সার্বক্ষনিক শিক্ষিকা বড় অাপুর প্রতিটি পদক্ষেপই নিজের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে চেস্টা করে প্রাণপণে। উভয়ের এমন গুণই পিতা-মাতার অাদরের বিশাল ভাগটা তাদের দখলে এনে দিয়েছে।
মাওলানা অাব্দুল মান্নান সাহেবের বাড়ীতে খানিকটা দৈন্যদশা বিরাজ করলেও পাঁচ ভাই-বোনের (পঞ্চরত্ন) কারো মাঝেই এর ছাপ পড়েনি কখনো। যখন যা পেয়েছে তারা, নির্ভাবনায় তা গ্রহণ করেছে। সর্বদাই হাসি-খুশীতে ভরে থাকে তাদের অাঙিনা।
এমনিতেই ভাই-বোন সবাই উচ্ছ্বলপ্রাণের অধিকারী , বাড়ীর অাঙিনায় খেলাধুলা-দৌড়ঝাঁপে কেউ কাউকে হারাবার নয়। কিন্তু যখন কোন পুরুষ মেহমানের অাগমন ঘটতো, তখন দু'বোন বাড়ীর অভ্যন্তরে এমনভাবে সেটিয়ে যেত যে, সেই মেহমান অবলীলায় স্বীকার করতে বাধ্য হতেন যে , বাড়ীতে শুধু চারজন পুরুষেরই বসবাস।বাড়ীর অন্দরের কোন অাওয়াজ তো দূরের কথা , বহির্বাড়ীতে কোথাও তাদের কোন কাপড়ের চিহ্নও থাকতো না।
অারো অাসছে দ্বিতীয় পর্বে............
বিষয়: সাহিত্য
১৮৪৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিন!
ধন্যবাদ উৎসাহ দেয়ার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন