বোকা ভৃত্য
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:০২:০৫ রাত
এক মালিক এক ভৃত্য রেখেছিলেন। ভৃত্যটি ছিল অর্ধবোকা। একদিন পাশের বাড়ীর একজন লোক অাসলো তাদের কাছ থেকে একটি কাঁচি ধার নিতে। মালিককে না পেয়ে লোকটি ভৃত্যকে বললো- ভাই অাপনাদের কাঁচিটা একটু ধার দিন। ধান কাটার পর দিয়ে যাব।
লোকটির কথা শোনা মাত্রই ভৃত্যের চোখ যেন কপালে উঠে গেল। সে রেগে-মেগে অাগুন হয়ে লোকটিকে বললো- কাঁচি একটা কিনতে পারেন না? কয় টাকা অার হবে? কি যে মুশকিল ! সামান্য একটা কাঁচি এসেছেন ধার নিতে? অামার মালিক বাড়ীতে নেই। কাঁচি দেয়া যাবেনা।
লোকটি চলে গেল এবং মালিককে ভৃত্যের সকল কথা বললো। মালিক বাড়ীতে এসে ভৃত্যকে উপদেশ দিয়ে বললেন- বাপু ! কাউকে এরকম কটু কথা বলে মনে কষ্ট দিবেনা। কারো মনে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। কেউ যদি কিছু নিতে অাসে , তবে তাকে এভাবে না বলে বিভিন্ন ধরণের ওজর পেশ করবে। যেমন- কাঁচি। খাঁচি নিতে অাসলে বলবে, কাঁচির তো হাতল নেই। ওটার দাঁত নষ্ট। ওটাতে মরিচা পড়ে গেছে। ওটা দেয়া যাবে না।
ভৃত্য মালিকের এসব কথা শুনল অার মুখস্থ করলো। হাঁটতে,বসতে,এমনকি ঘুমের মাঝেও ওটা অাওড়াতে লাগলো।
কয়েকদিন পর অাবার অারেকজন লোক অাসলো তাদের জালটা ধার নিতে। এ লোকটিও মালিককে না পেয়ে ভৃত্যকে বললো- ভাই ! দয়া করে অাপনাদের জালটা ধার দিন।
ভৃত্য তখন মালিকের কথা অনুযায়ী বলতে লাগলো- ভাই ! জাল যে অাপনি নিবেন, ওটা তো ধারালো না। ওটার হাতল নেই। ওটাতে মরিচা পড়ে গেছে। ওটা দিয়ে কাটা যাবে না। সুতরাং ওটা নিয়ে অাপনারকোন কাজ হবে না।
লোকটিতো অবাক। বলল- অাপনি পাগল নাকি? জাল দিয়ে কাটা যায় নাকি? জালে অাবার মরিচা পড়ে নাকি?
ভৃত্য লোকটির জবাবে ধমক দিয়ে বললো- যায় না তো কি ! অামার মালিক কি ভুল বলেছেন? যান এখান থেকে।
লোকটি চলে গেল। মালিক অাসার পর ভৃত্য সব কথা মালিককে বললো। ভৃত্যের সব কথা শোনার পর মালিক বললেন- না, কেউ জাল নিতে অাসলে বলবে- জাল ছিঁড়ে গেছে। মাছ ঢুকলে বের হয়ে যায়। তা্ই রাগ করে মালিক সেটাকে পুড়িয়ে ফেলেছেন। ভৃত্য সব কথা মুকস্থ করল।
পরেরদিন অারেকজন লোক অাসলো মালিকের ঘোড়া ধার নিতে। এ লোকও মালিককে না পেয়ে ভৃত্যকে বললো ঘোড়াটা ধার দেয়ার জন্য। ভৃত্য এ লোকটির জবাবে বললো- ভাই ! ঘোড়া অাপনি কিভাবে নিবেন, ঘোড়াতো ছিঁড়ে গেছে।ওটার ভেতর মাছ ঢুকলে বের হয়ে যায়। তা্ই রাগ করে মালিক সেটাকে পুড়িয়ে ফেলেছেন।
এ লোকটি ভৃত্যের এমন কথা শুনে ভাবলো- লোকটি হয়তো পাগল হবে। পাগলের সাথে সময়ের অপচয় না করে চলে যাওয়াই ভালো। তাই লোকটি চলে গেল্
মালিক বাড়ীতে অাসার পর ভৃত্যের কাছ থেকে সব শুনলেন। এবারও তিনি উপদেশ দিয়ে বললেন- কেউ ঘোড়া নিতে অাসলে বলবে, ওটা অাগে ভালো ছিল, এখন পাগল হয়ে গেছে। যাকে সামনে পায় , তাকেই মেরে ফেলতে চায়। কিছুই খায় না। না খেয়ে খেয়ে একেবারে দুর্বর হয়ে গেছে। অাপনি তার উপর অারোহণ করতে পারবেন না। ওটা এতোই পাগল যে, ওটাকে অামরা লোহার চেইন দিয়ে বেঁধে রেখেছি।
ভৃত্য মালিকের কথা মন দিয়ে শ্রবণ করলো অার মুখস্থ করতে লাগলো।
পরেরদিন অারেকজন রোক অাসলো মালিককে বিচারে নেয়ার জন্য্ লোকটি মািলিককে না পেয়ে ভৃত্যকে বললো- অাপনার মালিক কোথায়? উনাকে বিচারে নেবার জন্য অাসছিলাম।
ভৃত্য উত্তর দিল- উনাকে নিয়ে কি করবেন, উনি তো পাগল। যাকেই সামনে পান তাকেই মেরে ফেলতে চান। কিছুই খান না। না খেয়ে খেয়ে একেবারে দূর্বল হয়ে গেছেন। অাপনি উনার উপর অারোহণ করতে পারবেন না। উনি এতোই পাগল যে উনাকে অামরা লোহার চেইন দিয়ে বেঁধে রেখেছি। সুতরাং উনাকে নিয়ে কাজ হবে না।
লোকটি ভৃত্যকে বললো- তোমার এতো সাহস , তুমি তোমার মালিকের সম্পর্কে মস্কারী করো? ভৃত্য বললো- মস্কারী কিভাবে করলাম? তিনি অামাকে যা বলতে বলেছেন অামি তা-ই বলেছি। অাপনি অযথা তার সোহাগে নাক না গলিয়ে চলে যান। তখন লোকটি বিদায় হয়ে গেল।
মালিক বাড়ীতে অাসতে না অাসতেই ভৃত্য মালিককে বলতে লাগলো- অাপনাদের গ্রামে কি যে সব অাজব মানুষ। সবকিছু ধার নিতে চায়। এখন এসেছিল অাপনাকেও ধার নিতে। মালিক বুঝলেন ভৃত্য কিছু একটা করে বসেছে। তাই তিনি বললেন তুই কি বলেছিস?
ভৃত্য সব বললো। ভৃত্যের কথা শুনে মালিক মাথায় হাত দিয়ে বললেন- হায় হায় ! তুই অামাকে ঘোড়া বানিয়ে ফেলেছিস?! অামি পাগল? অামি যাকে সামনে পাই তাকেই মারতে চাই?! এক্ষুণি তুই চলে যা। তোকে রাখলে অামার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। তাড়াতাড়ি তুই এখান থেকে চলে যা।
ভৃত্য কাঁপতে কাঁপতে এ বাড়ী থেকে চলে যেতে যেতে বললো- মালিকের ভালো করতে চাইলাম। কিন্তু তিনি অামাকে বাড়ী থেকে বের করে দিলেন !
মালিক দূর থেকে এ কথা শুনলেন এবং ভাবলেন- এই ভৃত্যু তো খামাখা বদনাম নটিয়ে অামার বারোটা বাজাবে। তাই তিনি তৎক্ষণাত ভৃত্যকে ডেকে শাষালেন- যেন সে মালিকের বিরুদ্ধে কিছু না বলে।
তখন ভৃত্য বললো- অামিতো লোকদেরকে কিছুই মিথ্যে বানিয়ে বলিনি, অাপনি যা শিখিয়ে দিয়েছেন তা-ই বলেছি। কিন্তু অাপনিই তো মিথ্যে বানাওটি করে মানুষকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছেন এবং অামাকেও তাড়িয়ে দিচ্ছেন। অামার দোষটা কোথায়?
তখন মালিক বানোযাটের জন্য অনুতপ্ত হলেন এবং ভৃত্যকে তার পদে পূনঃবহাল করলেন। অার ভবিষ্যতে কোন মিথ্যা বানোয়াটি করবেন না বলে তওবা করলেন।
বিষয়: সাহিত্য
১০৫৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
...
সামান্য বিষয়ে কিছু স্বার্থ পুরণে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া কতটা ক্ষতির কারণ তা ফুটে উঠেছে!
মিথ্যার সয়লাব থেকে আল্লাহ আমাদের মুক্ত রাখুন!আমিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন