হিজাব বা পর্দা কি জামায়াতে ইসলামীর তৈরী? না কি আল্লাহর তৈরী ফরজ নির্দেশ?
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২১ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৫৭:৫৭ রাত
গত মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুরে জাতীয় মহিলা সংস্থা মৌলভীবাজার জেলা কমপ্লেক্স ভবনে মৌলভীবাজার মহিলা সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেছেন, “হিজাব পড়ে জামায়াতে ইসলামীর মতো কাজ করলে চলবে না। মুখ দেখাতে হবে তবেই সমাজ শ্রদ্ধা করবে। বোরকা পড়ে আকাম কুকাম করার শেষ নেই।”
মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে প্রশ্নঃ হিজাব বা পর্দা কি জামায়াতে ইসলামীর তৈরী? না কি আল্লাহর ফরজ নির্দেশ? যদি জামায়াতে ইসলামীর তৈরী নিয়ম হয় তা হলে আমিও মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে একমত। কিন্তু হিজাব বা পর্দা তো স্বয়ং আল্লাহর ফরজ নির্দেশ যা তিনি সূরা নুর এবং সূরা আহযাবে আয়াত নাযিল করে ফরজ করে দেন। আর আল্লাহর যে কোন একটি ফরজ নির্দেশের বিরুদ্ধে কথা বললে এবং যে কোন একটি ফরজ নির্দেশে আমান্য করলে তার আর ঈমান থাকে না. আল্লাহর সাথে বিদ্রোহী করার কারনে সে কাফের হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, রাসুলুল্লাহর (স) পবীত্র স্ত্রীদেরকে অর্থাৎ উম্মুল মোমিনীনদেরকে (মুসলিম জাতির মাতাদেরকে) অবমাননাও করা হয়, কারন রাসুলুল্লাহর (স) পবীত্র স্ত্রীগন মুখ ঢেকে পর্দা করতেন, যদিও মুখ খোলা রেখে পর্দা পালনের অনুমতি আছে এবং তা কাউকে দেখাবার উদ্দেশ্যে নয় যেভাবে মন্ত্রী মহোদয় বললেন। কেউ যদি রাসুলুল্লাহর (স) পবীত্র স্ত্রীগনকে অনুসরন করে মুখ ঢেকে পর্দা পালন করতে চায়, আর কেহ যদি তাকে মুখ দেখাতে বাধ্য করেন তারও আর ঈমান থাকার কথা নয়। কারন নফল ইবাদতে বাঁধা দিলেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (রা) সাথে বিদ্রোহ করা হয়।
মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আরো একটি প্রশ্নঃ পতিতারাও তো বোরকা পরে আকাম কুকাম করে, জামায়াতের মহিলারা যদি সত্যিই বোরকা পরে আকাম কুকাম করে, তাই বলে কি আমরা আল্লাহর ফরজ নির্দেশ হিজাব বা পর্দা অমান্য করবো? টুপি মাথায় দিয়ে চোর মসজিদে জুতা চুরি করে, সুদখোর ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজরাও অনেকেই মসজিদে গিয়ে নামাজের কাতারে দাড়ায়। তাই বলে কি আল্লাহর ফরজ নামাজ বাদ দিতে হবে?
হিজাব বা পর্দা কোন মোল্লা মৌলভীর বানান আইন নয় এবং জামায়াতে ইসলামীও তৈরী করে নাই, স্বয়ং আল্লাহর হুকুম যা কুরআন শরীফে আয়াত নাযিল করে ফরজ করে দেওয়া হয়ছে।
“(হে নবী!) মু’মিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে জোরে পা মেরে পদক্ষেপ করে না চলে (যেমন নাচ, জিমনেসিয়াম ইত্যাদি)। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও” [সূরা নূরঃ ৩০-৩১]।
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর (মাথার উপর থেকে) টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। [সূরা আহযাবঃ ৫৯]
স্কুল কলেজের কোন পরীক্ষায় যেমন পাশ করতে হলে সবগুলি বিষয় পড়তে হয় এবং সবগুলি বিষয়েই পরীক্ষা দিতে হয়, কোন একটি বিষয় বাদ দিয়ে বাকী সব বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেও যেমন ঐ পরীক্ষায় পাশ করা যায় না, তেমনি আল্লাহর সব ফরজ হুকুমগুলির মধ্যে একটি মাত্র ফরজ হুকুম (যেমন পর্দা) বাদ দিয়ে বাকী সব ফরজ হুকুম (যেমন নামাজ রোজা ইত্যাদি) পালন করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না এবং মুসলমান হিসাবে পাশও করা যাবে না। এই শ্রেণীর মুসলিম নামধারীদের সম্পর্কে কুরআন শরীফে আল্লাহ কি বলেন দেখুনঃ-
“তবে কি তোমরা এ কিতাবের (কুরআনের) কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া আর কোনই পথ নেই। আর কিয়ামতের দিন তো তাদেরকে আরও কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে।” [সূরা বাক্বারাঃ ৮৫]
প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা! মনে রাখবেন আল্লাহর কোন ফরজ বিধান কেউ অলসতার কারণে পালন না করলে সে “ফাসিক” অর্থাৎ “সাধারণ পাপী” হবে এবং তার শাস্তি হবে সাধারণ, আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে মাফও করে দিতে পারেন। কিন্তু মুসলমান হয়ে এভাবে আল্লাহর ফরজ বিধান পর্দার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সে আর মুসলমান থাকে না, সে “কাফির” অর্থাৎ “আল্লাহ বিদ্রোহী” হয়ে যায় এবং তার শাস্তি সারা পৃথিবীর ওজনের সম পরিমান স্বর্ণ (Gold) ফিদিয়া হিসাবে দান করে দিলেও আল্লাহ কখনও মাফ করবেন না, চিরকাল জাহান্নামে সবচেয়ে ভয়াবহ ও যন্ত্রনাদায়ক কঠিন শাস্তি পেতে হবে। দেখুন কুরআন শরীফে আল্লাহ কি বলেনঃ-
“যারা ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন অস্বীকার ও বিরোধিতা করেছে এবং অস্বীকার ও বিরোধিতা ক্রমে বেড়েই চলছে, তাদের তওবা কখনও কবুল করা হবে না। আর তারা ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভ্রান্ত। যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে ফিদিয়া দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! আর তাদের বাচাঁতে কোনই সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল ইমরানঃ ৯০-৯১]
এ আয়াতে ভাল করে লক্ষ্য করুন, যারা Original মূল কাফির তাদের সম্পর্কে বলা হয় নাই, বরং মুসলিম নামধারী যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর ফরজ বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কুফরি করেছে তাদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে।
প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা! এখন আপনারাই ভেবে দেখুন কি সিদ্বান্ত নেবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন