জিনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজঃ

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২১ জুন, ২০১৪, ০৭:০৮:৩৫ সকাল

জিনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজঃ

১. ‘ইবলিস’ – আদম (আঃ)

কে ওয়াসওয়াসা দিয়ে যেই জিন আল্লাহর

আনুগত্য থেকে তাকে বিচ্যুত করেছিল –

তার নাম হচ্ছে ইবলিস। আল্লাহ

তাকে সরাসরি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন,

সে হচ্ছে প্রথম জিন যেমন আদম (আঃ)

হচ্ছেন প্রথম মানুষ। আদম (আঃ)

কে সিজদা করতে অস্বীকার

করে সে আল্লাহর সামনে অহংকার

প্রদর্শন করে – এই কারণে সে ‘কাফের’

হয়ে চির জাহান্নামী ও আল্লাহর

অভিশপ্রাপ্ত। তার সন্তানদের কেউ

ঈমানদার মুসলিম, আবার কেউবা কাফের,

তাদের পিতা ইবলিসের অনুসারী।

যারা কাফের জিন,

তাদেরকে সাধারণভাবে ‘শয়তান’ বলা হয়।

আদম (আঃ) ও ইবলিসের

কাহিনী সংক্ষেপে জানার জন্য

আপনারা সুরা ত্বা হা এর ১১৫-১৩৫

নাম্বার আয়াত পড়ুন।

২. ‘খানজাব’ – খানজাব হচ্ছে বিশেষ

একপ্রকার জিন, যারা মানুষ যখন

সালাতে দাঁড়ায় তাদেরকে নানান রকম

চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে নামায

থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তুলে।

এর ফলে তারা সালাতে ভুল করে, কত

রাকাত পড়েছে মনে থাকেনা,

কোনটা কি করছে সন্দেহে পড়ে যায়। এর

কারণে সওয়াবও কমে যায়। তাই

আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যথযথ খুশু

ও খুজু সহকারে মনোযোগী হয়ে সালাত

আদায় করার জন্য।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

“নামাযের জন্য আযান দেওয়ার সময়

শয়তান সশব্দে বায়ু

ছাড়িতে ছাড়িতে পালায়, যেন সে আযানের

শব্দ না শোনে। আযান শেষ

হইলে সে আবার আসে। ইকামত আরম্ভ

হইলে আবার পলায়ন করে। ইকামত

বলা শেষ হইলে পূনরায় উপস্থিত হয়

এবং ওয়াসওয়াসা ঢালিয়া নামাযী ব্যক্তি ও

তাঁহার অভীষ্ট লক্ষ্যের

মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টী করে। যে সকল

বিষয় তাহার স্বরণ ছিল না সেই সবের

প্রতি আকৃষ্ট

করিয়া সে বলিতে থাকেঃ অমুক বিষয়

স্বরণ কর, অমুক বিষয় স্বরণ কর।

ফলে সেই ব্যাক্তি কত রাকাআত নামায

পড়য়াছে এমনকি সেটাও ভুলিয়া যায় ।

(বিঃদ্রঃ নামাযে ওয়াসওয়াস

প্রদাওনকারী শয়তানের নাম

হচ্ছে "খানজাব")

মুয়াত্তা মালিক :: স্বলাত অধ্যায় ৩,

হাদিস ১৫২

এ থেকে বাচার উপায়ঃ

নামাযে কিরাত পড়া শুরু করার

আগে “আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির

রাযীম” পড়বেন। আ’উযুবিল্ললাহ শুধু

প্রথম রাকাতেই পড়তে হয়, এর পরের

রাকাতগুলোর শুরুতে পড়তে হয়না। এই

দুয়া পড়ে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়,

কারণ নামাযে দাড়ালে খানজাব নামের

শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে নামাযকে নষ্ট

বা ক্ষতি করতে চায়।

নামাযের মাঝখানে সুরা-কেরাতে বা কত

রাকাত, রুকু সেজদা নিয়ে শয়তান খুব

বেশি ওয়াসওয়াসা দেয়/সন্দেহে ফেলে দেয়

তাহলে কি করতে হবে?

সালাতে ও কেরাতের মাঝে শয়তানের

কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তি যেই দো‘আ

করবেঃ

“আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বানির

রাজীম”

এই দুয়া বলে তারপর বাম দিকে তিনবার

থুতু ফেলবে (থুতু ফেলার

মতো করে নিঃশব্দে ফু দিবে, কিন্তু থুতু

ফেলবেনা)।

উসমান ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু

বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!

শয়তান আমার ও আমার নামাযের

মাঝে অনুপ্রবেশ

করে এবং কিরাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম

তাকে সেটা (উপরে যা বলা হয়েছে) বলার

নির্দেশ দেন, তিনি সেটা করার পর

আল্লাহ তাঁকে সেটা থেকে মুক্ত করেন।

মুসলিম ৪/১৭২৯, ২২০৩।

৩. ‘ওলহান’ – এরা হচ্ছে একপ্রকার

শয়তান জিন যারা মানুষকে ওযুর সময়

ওয়াসওয়াসা দেয়। ওয়াসওয়াসাগ্রস্থ

মানুষেরা ওযুতে ভুল করে বেশি, এক কাজ

কয়েকবার করে, তবুও মনে সন্দেহ

থেকে যায় ওযুর অমুক অংগ

ধোয়া হয়েছে কিনা?

এরা পানি বেশি অপচয় করে।

কি করতে হবে?

এই ওয়াসওয়াসায় যারা আক্রান্ত

তারা মনোযোগের সাথে কোন

পাত্রে নির্দিষ্ট পানি নিয়ে ওযু করবেন,

টেপ ছেড়ে দিয়ে অমনোযোগী হলে শয়তান

সহজেই ওয়াসওয়াসা দিবে। অবশ্যই

আল্লাহর নাম ‘বিসমিল্লাহ’

বলে আস্তে ধীরে ওযু শুরু করবেন, অবশ্যই

তাড়াহুড়া করবেন না। প্রতিটা অংগ

মনোযোগের সাথে উত্তমরুপে ধৌত

হচ্ছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।

আর কোন অংগ ধৌত

করতে ভুলে গেলে নিশ্চিত হলে মেজাজ

খারাপ না করে ঐ অংগ থেকে ধোয়া শুরু

করবনে। আর ওয়াসওয়াসা পড়লে এই

দুয়া পড়বেনঃ

“আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির

রাযীম” – এই দুয়া পড়ে শয়তান

মনে কি ওয়াসওয়াসা দেয় সেইদিকে কোন

লক্ষ্য করবেন না। যেই অংগ থেকে ভুল

করেছেন সেখান থেকে ওযু সম্পূর্ণ করবেন।

আস্তে আস্তে মনোযোগী হয়ে ওযু করার

অভ্যাস

গড়ে তুললে আস্তে আস্তে শয়তানের

বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবেন ইন শা’আল্লাহ

৪. ‘ক্বারীন’ – ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী,

প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জিন

লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময়

বান্দার অন্তরে খারাপ

চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ

করতে উতসাহিত করে। ক্বুরানে আল্লাহ

এদের কথা উল্লেখ করেছেন সুরাতুল

ক্বাফে।

আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম

“মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ

থেকেইতো তুমি টালবাহানা করতে।

এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার

দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।

প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার

সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী।

তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে।

এখন তোমার কাছ

থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ

তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন। তার

সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে,

আমলনামা ছিল, তা এই। তোমরা উভয়েই

নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক

অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে, যে বাধা দিত

মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী,

সন্দেহ পোষণকারীকে।

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য

গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন

শাস্তিতে নিক্ষেপ কর। ‘ক্বারীন’ (তার

সঙ্গী শয়তান) বলবেঃ হে আমাদের

পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত

করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর

পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ

বলবেনঃ আমার

সামনে বাকবিতন্ডা করো না,

আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব

দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। আমার

কাছে কথা রদবদল হয়

না এবং আমি বান্দাদের

প্রতি জুলুমকারী নই।

সুরা ক্বাফঃ ১৯-২৯।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237068
২১ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:৪৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ভাল লাগল।
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
184007
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
237072
২১ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:০২
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:১৯
184008
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : Surprised Surprised Surprised
237078
২১ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:৩২
হতভাগা লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন - আল'হামদুলিল্লাহ
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২২
184013
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : এই প্রথম মনে হয় আপনার পজেটিব একটা মন্তব্য পেলাম। Happy
237158
২১ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:৫৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আরেক প্রকার ব্লগীয় শয়তান আছে, আপনার পোস্টে কমেন্টও করেছে নামটা দিলেন না যে।
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:০৯
183753
নানা ভাই লিখেছেন : একমত।Good Luck
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
184017
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হ্যাঁ, তাই তো!! আমি ভুলে গেছিলাম। ওটা পাতি শয়তান ...... :P
237215
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
184019
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File