একজন নুরী অথবা কিছু না পাওয়ার গল্প;
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১৭ মার্চ, ২০১৪, ১১:২৭:১৩ রাত
জীবনের বিস্ময়কর বিষয় হলো মানুষ হয়ে জন্মানো । মানুষ হয়ে না জন্মালে হয়তো সবকিছুরই অসীম শুন্যতা থেকে যেত । হয়তো জীবনবোধ নিয়ে এতো হিসাব-নিকাশের অবকাশ থাকতো না।
এ জীবনের স্বার্থকতা কি ? অবহেলায় ঔদাসীন্যে ধুলো-কাঁদায় ফেলে রাখার জিনিস তো এ নয়। প্রতিটা মানুষের জীবনে জড়িয়ে থাকে আশা-আকাংখা, সামনে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা। সেখানে কি জীবনটা শুধু পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে সীমিত থাকবে ? হয়তো থাকে !!!!! হয়তো থাকেনা !!!!
তেমনি না পাওয়ার ইট পাথরের গড়া নুরজাহান বেগম নূরীর জীবন। অসীমতার মাঝে জীবনকে বিলিয়ে দিতে বার বার ব্যর্থ নূরী সেই জীবনকে আজ নির্দিধায় ছুটি দিতে চায় , মুছে দিতে চায় সকল না পাওয়ার যন্ত্রনা।
খুবি সাধারন মেয়ে নুরজাহান বেগম নুরী। নি:স্বার্থ ভালবাসায় বিশ্বাসী প্রানোচ্ছল মানুষ।
নিজের উদ্ভাবিত দীপ্তিময় প্রেমের ঢালের আবর্তে আচ্ছাদিত করার তীব্র বাসনা নিয়ে আলোকিত করতে চেয়েছে তার আশ-পাশ। সেই অদম্য চাওয়া আজ তার জীবনকে পৌরানীক কাহিনীতে পরিনীত করতে চলেছে।
নিরবে চলছে আজ তার অন্তূষ্ট্যিক্রিয়ার আয়োজন। যেন থমকে আছে আজ ছোট্ মফশ্বল শহরটা গতিহীন, অর্থব, খালি আর শুন্যতায় মুহ্যমান। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ির বেলকনি গুলোতে বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে কালো রেশমী ফিতা গুলো অনবরত উড়ছিল আর নি:শ্চুপ বাড়ি গুলোর আলোক উজ্বল লাল বাতি গুলো বন্ধ ছিল এ যেন বিরহের শোকবার্তা জানিয়ে দিচ্ছে।
পাড়া-প্রতিবেশীরা এমন কি অন্ধ ভিক্ষুকটা , যে প্রতি দিন একি জায়গায় দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজিয়ে ভিক্ষা করতো,যে কখনো তার বেদী হতে সরে দাঁড়াতো না সেও আজ শামিল হয়েছে এই শোক পালনে। প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা আলাদা গল্প আছে। যে গুলো হয়তো বেশীর ভাগ সময় বিষন্নতার আবরনে মোড়ানো থাকে । দারিদ্রতার গল্প । কিন্ত নূরীর গল্প ভিন্ন রকম।
সেটা ছিল পাওয়া গুলো কে উপভোগ করতে না পারার অসহ্য যন্ত্রনা।ছোট বেলার স্বজন হারানোর দু:স্বপ্ন তাড়া করে ফিরছে সারাজীবন। হাজারো কষ্ট বুকে লালন করে অনাদর আর আর অবহেলায় বড় হয়েছে অন্যের অধীনে । জাগতিক ভোগ-বিলাসে উৎসাহী ছিলনা।এমনকি এক ফোটা সান্তনার জন্যও পাড়া-প্রতিবেশী,ভাগ্য গনক বা ভবিষ্যৎদ্রষ্টার মুখাপেক্ষী হয়নি।
তার এই একঘেয়ে জীবন কে চিরবিদায়ের প্রত্যয়ে নিজেকে আজ সাজিয়েছে মনের মতো করে । আজ পরিধান করেছে প্রিয় পোশাকটি,লাল রঙে রাঙিয়েছে ঔষ্ঠযুগল,মনোহরি জানালার পর্দা সরিয়েছে সূর্যের আলোকে স্বাগত জানাতে,অজানা কিছু পাবার প্রত্যাশা উন্মুক্ত করেছে দরজা।
"আমার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে" .........তার অন্তিম মূহুর্তে নিষ্ঠুর জগৎটাকে এটা জানানো ছাড়া তার আর কিছু বলার ছিলনা।
বিষঁ মিশানো দুধ পান করে নূরী মৃদুমন্দ বাতাসের মতো প্রবাহিত মৃত্যুর প্রহর গুনছে। পৃথিবী টাকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্তে সে আজ অটল।মিনিটে মিনিটে ঘনিভুত হচ্ছে তার মৃত্যু সময়। না পাওয়ার কষ্টগুলো আজ তাকে একে একে মুক্তি দিচ্ছে, যে কষ্ট গুলো তাকে আর যন্ত্রনার অনলে দগ্ধ করবেনা।
বন্ধুরা, এটা শুধুই একটা গল্প। কিন্তু একটু ভাবুনতো, এরকম নুরীর কি আমাদের সমাজে অভাব আছে? হয়ত সবার পরিণতিটা একরকম নয়। কিন্তু দারিদ্রের প্রবল কষাঘাতে তারা আমরণ পর্যন্ত জর্জরিত।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্যঃ বন্ধুরা আমরা চাইলেই অনেক কিছু পারি। কারন আমি বিশ্বাস করি, মানবতা এখনও মুখ থুবরে পরেনি, হয়তবা ঘুমিয়ে আছে, আমরা চাইলেই সেটা জাগাতে পারি। তাই আসুন এদের পাশে দাড়াই ।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য ইশতিয়াক ভাইকে
অনেক ধন্যবাদ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন