ওকে দেখে আমার চোখে পানি চলে আসলো
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১১ মার্চ, ২০১৪, ১১:৫২:০৬ রাত
রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে নজরে পড়লো পিজ্জা হাট । পকেটে যথেষ্টপরিমাণ টাকা থাকায় ভেতরে গিয়ে কিছু খাইতে মন চাইলো... মনে যখন চাইছে তখন আমারে কে ঠেকায়। দরজাখুলে ভেতরে ঢুকতেই লাল ক্যাপ পরা একটা ছেলে এসে আমারে ইংরেজিনা চাইনিজ ভাষায় কি কইল কিচ্ছু বুঝলাম না।আমি বললাম:কিছু খাওয়া যাইবো তো ?- জ্বি অবশ্যই। এখানে বসে খাবেন না পার্সেল করে নিয়ে যাবেন ?-- এখানে কি মানুষ দাঁড়িয়েও খায় নাকি ?- sorry sir,আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম। অদ্ভুত অদ্ভুত সুন্দরি মেয়ে এবং হ্যান্ড-সাম ছেলেদের আড্ডা চলছে । দেখে মনে হচ্ছিল জগতের সকল বিস্ময় জমা হয়েছে আজ পিজ্জাহাটে।এদেরভুংভাং আর ড্রেসাপ আর আমারকাপড় চোপড় দেখে মনে হইল আমি উঠে এসেছি বস্তি থেকে আর এরা থাকে আলিশান মহলে। এদেরকে দেখে মনে হইলো আমি হইলাম নর্দমার কালো ময়লা আবর্জনা এবং এরা হলো এক একটা হিরার টুকরা...যাজ্ঞে পকেটে যা টাকা ছিল তা দিয়ে বেশ আরাম করে আস্তা একটা পিজ্জা খাইলাম । খাওয়া শেষে বাইরে বের হয়ে কিছু দূর হাটতেই দেখি রাস্তার পাশে একজন লোক তারদুই পিচ্চিকে নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছেন। লোকটার স্ত্রী চুলার উপর রাখা হাড়ি থেকে কি যেন তুলে দিচ্ছে আর পিচ্চিরা মনের আনন্দে খানা খাচ্ছে।তাদেরকে দেখে ভাবলাম: আমি যদি নর্দমার ময়লা আবর্জনা হই তাহলে এরা কি ? এরাতো ময়লা আবর্জনাতে বসবাসকারী কীটপতঙ্গ ।আরো কিছুদূর হাটা শেষে হটাৎ একটা ছোট্ট মেয়ে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরিল। নিচে তাকিয়ে দেখি মেয়েটার পড়নে জামা নেই শুধুই একটা ছেড়া ফাড়া পেন্ট আছে।আমি বসে বললাম: কি হয়েছে ?- চোখে অশ্রু নিয়ে বলল: আমারে ভিক্ষা দেন ।-- আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এলো। এত ছোট্ট একটা মেয়ে এত শীতের রাতে কোন জামা ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছে আর বলে বেড়াচ্ছে তাকে ভিক্ষা দেয়ার জন্য। এমন কি অভাব তার ? আমি জিজ্ঞেস করলাম:- কি করবা টাকা দিয়ে ?-- খাব, ক্ষুধা লাগছে ।- তোমার মা-বাবা কথায় ?-- হারাই গেছে ।তারপর আমার পড়নে চাদর তার শরীরেদিয়ে হাটতে হাটতে গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে । সেখানে তাকে ভাত খাওয়াইলাম এবং পিজ্জা হাটে নিয়ে তাকে আইসক্রিম খাওয়াইলাম ।তখন দেখলাম এই মেয়েটা এইখানে বসে আমার মত নিজেকে নর্দমার ময়লা আবর্জনা মনে করছে না। যদিওতার কাপড় চোপড়ে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সে ময়লা আবর্জনা কিন্তু সে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করছে। তার সুখের অংশীদার হয়ে নিজেকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে মনে হচ্ছে।তারপর আমি তাকে নিয়ে এলাম আমার বাসায়। যতদিন পর্যন্ত তার মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ততদিন তাকে আমার বাসাতেই রাখবো।[] এইটা দুবছর আগের কাহিনী, আশরাফ ভাই মেয়েটার নাম দিয়েছেন:এশা। আশরাফ ভাই ভালোই আছেন উনারস্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে। ছেলের নাম এমাদ এবং মেয়েরনাম এশা । এশা এখন তার এমাদ ভাইয়ের সাথে স্কুলে যায়। পড়ালেখাতেও খুব ভালো ... মাশাআল্লাহ ।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৬ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
May Allah give you reward for what you did for the little angle!
খুব ভালো লাগ্লো...
মন্তব্য করতে লগইন করুন