ভালোবাসা মানেই সারাক্ষণ ফোনে কথা বলা না,হাত ধরে পার্কে ঘুরে বেড়ানো না!
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ০৩ মার্চ, ২০১৪, ০১:২৭:২৭ রাত
এই আমার ব্যাগটা ক্লাসে রেখে আয় তো! -পারব না! -পারব না মানে?চড় দিয়া গালের সব দাঁত ফালায়া দিব! -ওই তোর কাছে আমাকে কি মনে হয়?এট লিস্ট মানুষ.হিসেবে তো রেসপেক্ট করতে পারিস! -ধন্যবাদ! কথাটা বলেই ব্যাগ হাতে নিয়ে হনহন করে ক্লাসে চলে আসল মেঘা|সামান্য একটা ব্যাগ রাখা নিয়েও ঝগড়া হয়ে গেল আবির এর সাথে!মেঘার মাথায় ঢুকে না এই ছেলেটা এত নির্লিপ্ত থাকে কি করে!কেউ মরে গেলেও সম্ভবত এই ছেলের কোন বিকার থাকবে না|এমনকি মেঘা মরে গেলেও না! মেঘার ধারণা মেঘা মরে গেলেও পরদিন ঠিকই আবিরকে জাকির মামার দোকানে চা খেতে দেখা যাবে!সে একইভাবে ক্লাস করবে,আড্ডা দিবে|কষ্ট যদি হয়ও সেটা কোনোদিন.প্রকাশ করবে না!এমনভাবে চলবে মনে হবে যেন মেঘা নামে কারো অস্তিত্ব ওর জীবনে ছিলই না! ব্যাগটা রেখেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসল ও! আবিরকে খোঁজা দরকার|ইচ্ছেমত ঝাড়ি দিতে হবে!তারপর একবারে সাত দিনের জন্য কথা বলা অফ!কিন্ত মেঘার চিন্তা চিন্তাতেই রয়ে গেল!তার প্রয়োগ আর করা হল না|পুরা ক্যাম্পাস চষে ফেলেও আবীরের খোঁজ পাওয়া গেল না!এই ছেলে এমনই|হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়!ক্লাস না করে কোন রাজকার্য যে উদ্ধার করতে যায় সেটা একমাত্র তিনিই জানেন! কিন্ত প্রক্সিটা ঠিকই মেঘাকেই দিতে হবে!পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব আর প্রেমের হিসেব ঘেটে মেঘার ধারণা এই এতগুলো বছরে মেঘা আবিরকে সম্পূর্ণভাবে জানলে,বুঝলেও,আবিরের মেঘা সম্পর্কে কোনো ধারণা ই নেই!নিজ থেকে কখনো একটা প্রশ্ন ও করেনি ও!যা বলার মেঘা নিজেই বলেছে! -আচ্ছা আজ পর্যন্ত তুই নিজে কোনোদিন আমাকে ফোন করেছিস? -না! -কেন? -দরকার পড়েনি তাই| -কি বললি?! আমাকে ফোন দিতেও তোর দরকারের প্রয়োজন হয়!! -আমি অযথা কাউকে ফোন দেই না! -ও! তাহলে কালকে শম্পাকে কেন ফোন দিয়েছিলি?কি দরকার ছিল ওর সাথে তোর!? -ওর নোট খাতার দরকার ছিল তাই| -কেন আমার নোট খাতা নেয়া যায় না?আমি কি ক্লাস.করি না? -তোর খাতা নিলে কোন লাভ হয় না|কি লিখিস কিছু বোঝা যায় না! এই পর্যায়ে রাগে মোবাইলটা আছাড় মারল মেঘা!পাঁচ বছর কম সময় নয়!এই এতগুলো বছরেও ওর হাতের লেখাটা পর্যন্ত বুঝতে পারে না আবির!আর মনের কথা বুঝবে কি করে! মেঘা সবসময়ে চেয়েছে একটা বোকা ছেলে ওকে ভালোবাসবে! যে কিনা মেঘার প্রতিটা কথাই হা করে গিলবে! মেঘাকে যদি পেতনির মত দেখায়ও তবুও ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবে!মেঘার প্রত্যেকটা কাজ তাকে অবাক করবে!কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টোটা!মেঘাই সারাক্ষণ হা করে আবীরের কথা গিলে, মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে!কিন্ত আবিরের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই!বিশেষ দিনগুলোতেও কখনো হাতে গোলাপ নিয়ে বলেনি ভালোবাসি| প্রতিবার মেঘাই বলে এসেছে ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভা-লোবাসি! পরদিন ক্যাম্পাসে, -সরি,কাল আসলে... -আবির আমি তোর কাছে কোনো কৈফিয়ত চাইনি! -না মানে আসলে.... মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে আবির!অবাক হয়ে ওকে দেখছে মেঘা!আবীরের এই রূপ আগে দেখেনি ও!আবির এতটা বোকা না যে মেঘার রাগ ভাঙাতে এভাবে তাকিয়ে থাকবে! হঠাৎ মেঘার হাতটা নিজের হাতে তুলে নিল আবির! -শোন মেঘা,আমি হয়ত তোর হাতের লেখা বুঝি না কিন্ত মনের কথাগুলো ঠিকই বুঝতে পারি! -কিন্ত... -চুপ!সবসময় তুই ই বলিস! এবার একটু আমি বলি! ভালোবাসা মানেই সারাক্ষণ ফোনে কথা বলা না,হাত ধরে পার্কে ঘুরে বেড়ানো না!দু মিনিট পর পর আই লাভ ইউ বলা না!ভালোবাসা মানে... -চুপ!আর বলা লাগবে না!ভালোবাসা মানে তোর মত একটা ভ্যাবলার দিকে হা করে চেয়ে থাকা আর আমাকে কষ্ট দেয়া তাই না?লাগবে না তোর ভালোবাসা যা ভাগ!! হাসছে আবির!বাইরে থেকে যতটাই নির্লিপ্ত থাকুক.না কেন ভিতরে ভিতরে এই পাগলামিটুকুর জন্যই সে অস্থির হয়ে থাকে!! কারণ এই পাগলি আর তার পাগলামিটুকুই তার ভালোবাসা!
বিষয়: সাহিত্য
১২৩৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন