**হঠাৎ চলে যাওয়া**

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৩৯:১২ রাত

১। অনেক রাত। আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সানিয়া। বহুদিন আগেও এভাবেই দাড়িয়েছিল। সেদিন গুলোতে অবশ্য ওর চোখে পানি ছিল। এক অজানা আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল ও। খুব কান্না পাচ্ছিল। সারাটা রাত বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদত। আজ কাঁদছে না। একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কাল ওর বিয়ে।ঋদ্ধর সাথে। বয়স তো অনেক হল। বাবা মায়ের বোঝা হয়ে আর কতদিন থাকবে সানিয়া। আজ ওর বাবা মা খুব খুশি। মেয়ের বিয়ে পাকা হয়ে গেছে। শুধু এই হাসিটা দেখার জন্যই ও বিয়ের সিদ্ধান্ত টা নিয়েছে । ঋদ্ধ অনেক ভালো ছেলে। এখন বড় একটা ব্যাংকে জব করে। দেখতেও অনেক স্মার্ট। খুব সুন্দর করে কথা বলে। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। খুব আদুরে। গত সপ্তাহে ওকে দেখতে এসেছিল। যদিও এর আগে থেকেই ওকে চিনত সানিয়া। ওর ভার্সিটিতে ওর চেয়ে দুই ইয়ার উপরে পড়ত। গত বছর পাশ করে বের হয়েছে। ঋদ্ধ সানিয়াকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। অউ অনেক আগে থেকেই ওকে পছন্দ করত। কিন্ত কখনও বলেনি। আসলে ও আগে নিজের পায়ে দাড়াতে চেয়েছিল। কাল ওর অপেক্ষা শেষ হবে। সানিয়া এখনও দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। আজ আকাশের কথা খুব মনে পড়ছে। সেদিনের কথা ভাবলে আজও ভয়ে শিউরে ওঠে ও...... ২। বসন্তের পড়ন্ত বিকেলে হাইওয়ের পাশ দিয়ে হাটছিল ওরা। দুজন দুজনের হাত ধরে। -সানিয়া? -হ্যা আকাশ। -কত বছর হল তোকে চিনি? -জানি না। মনে হয় তোকে সারাজীবন ধরে চিনি। হঠাৎ এইকথা? -না এমনিই। আচ্ছা আমাকে একটা কথা দিবি? -এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে? তুই আমার এতদিনের বন্ধু। বলে ফেল। -আমাকে কখনও ছেড়ে যাবি না তো? সানিয়া একটু অবাক হল। হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেন আকাশ। এমনিতে তো সারাদিন শয়তানী করে বেড়ায়। ওকে একটুও অবসর দেয় না। আজ হঠাৎ এরকম পরিবর্তন ওকে আবিয়ে তোলে। হাটা বন্ধ করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে আকাশ। আকাশকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু লজ্জা পায় সানিয়া। মাথা নিচু করে বলে, -এভাবে বলছিস কেন আকাশ? -সানিয়া আমি তোকে ভালবাসি। আমাকে ছেড়ে চলে যাবি তুই? তোর হাত ধরে রাখতে দিবি সারাজীবন? সানিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। হ্যা আকাশ কে একটু একটু পছন্দ করে ও। কিন্ত এভাবে ভেবে দেখেনি কখনই। ও ভাবতে থাকে কি উত্তর দিবে... ভেবে পায় না... হাটতে শুরু করে আবারও। আকাশের মূঠোতে এখনও ওর হাত ধরা। ছাড়িয়ে নিয়ে ইচ্ছা করছে না কেন যেন। মনে হচ্ছে এই মুঠোটাই সবচেয়ে আপন। ধিরে ধিরে হাটছে ওরা। নিরবে। হঠাৎ একটা ট্রাক!! নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। বার বার হর্ন দিচ্ছে। খুব কাছে চলে আসলো ট্রাক টা। -সানিয়া!! চিৎকার করেই ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দিল সানিয়াকে। হতভম্ব হয়ে পড়ে গেল সানিয়া। কুনুই তে একটু ব্যথা পেয়েছে ও। উঠে আকাশ কে ডাকল। -আকাশ? পেছনে ফিরে খুঁজে পেল না ওকে। হঠাৎ একটু দূরে লাল লাল কি যেন গড়িয়ে যাচ্ছে। আরও একটু দূরে ছেড়া কাপড় রাস্তায় পিশে গেছে। লাল রঙে রাঙ্গা হয়ে আছে সেগুলো। সানিয়া দৌড়ে গেল সেদিকে। -আকাআআশ!!! বিকট এক চিৎকার করে হাটু গেড়ে বসে পড়ল। রাস্তার সাথে পিষে গেছে আকাশের সুন্দর মুখটা। মাথার খুলিটা গড়িয়ে গিয়ে পড়ে আছে একটু দূরে। মগজের বিগলিত অংশ পুডিং এর মত পড়ে আছে এখানে ওখানে। পিষে যাওয়া মাথার পাশে পড়ে আছে আকাশের নিথর দেহ টা। -আকাশ? এই আকাশ? এই আকশ ওঠ দেখ। আমি আমি তোর সানিয়া। দেখ আমি তোকে কত্ত ভালবাসি। আচ্ছা তুই না বলছিলিআমাকে ছেড়ে যাস না?? এখন তুই-ই চলে যাচ্ছিস? আকাশ? ওঠ না। দেখ আমি কিন্তু এইবার রাগ করব। ওঠ না? আকাশ শোন? আমি তোকে ভালবাসি। খুব খুব খুব ভালবাসি। তোকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব বল? প্লিজ উঠে পর। আর পারল না ও। পাগলের মত কাঁদছে। আশে পাশে লোক জড় হয়েছে। এম্বুলেন্স এসেছে। আকাশ চলে যাচ্ছে অজানার দেশে। তার সানিয়াকে একা করে... ৩। বাড়িতে অনেক লোক। সানিয়ার বিয়েতে এসেছে। অনেক আয়োজন একমাত্র মেয়ের বিয়েতে। গেটে গাড়ি রেডি। সানিয়া আর ঋদ্ধ কে নেয়ার জন্য। সবার থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছে সানিয়া। ওর মা খুব কাঁদছে... বাবাও কাঁদছে লুকিয়ে লুকিয়ে। কি করবে একমাত্র মেয়ে তো। কিন্তু সানিয়া কাঁদছে না। একটুও না। চুপ করে আছে। ওর পাশে ঋদ্ধ আজ খুব খুশি। এতদিনের ভালবাসাকে কাছে পাবে আজ। মুচকি মুচকি হাসছে সারাক্ষণ। এবার যাবার পালা। গাড়ির পেছনের সিটে বসল ওরা দুইজন। গাড়িটা বাড়ির গেট ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সানিয়া জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে তারা ভরা আকাশের বুকে...

বিষয়: বিবিধ

১১৯৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

179613
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:০০
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আকাশের জন্য কষ্ট লাগলো! কেউ না কেউ তো পেল...
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৩২
132632
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : পেয়েছে ,কিন্তু যাকে চেয়েছিল তাকে পায়নি। ধন্যবাদ
179737
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৮
আহমদ মুসা লিখেছেন : লেখা মনোযোগ সহকারে পড়েছি। আমার মনে হয় যদি লেখাটাকে কয়েকটা প্যারায় ভাগ করে পোস্ট দেয়া হতো তাহলে দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন হতো তেমনি পাঠকদের পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি হতো বেশী।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
132816
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ. ,সামনে থেকে এটা মাথায় রাখবো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File