প্রায়শ্চিত্ত্ব-

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:০৩:২৬ রাত

আজ মুমুর বাসর রাত , পারিবারিকভাবেই ওর বিয়ে হয়েছে ।ও গুটিশুটি মেরে খাটের মাঝখানে বসে আছে । এইমাত্র ওর বর রিয়াদ রুমে প্রবেশ করলো . .

রিয়াদ : কেমন আছ মুমু ?

মুমু : দেখুন আমি আপনাকে বিয়ের আগেই সব কিছু বলতে চেয়েছি , কিন্তু আপনি আমাকে বলার কোন সুযোগ দেননি ।

রিয়াদ : ঠিক , কিন্তু আমি বলেছিলাম বাসর রাতে সব শুনবো । এখন বল তোমার কি সেই জমে থাকা কথা ।

মুমু : আমি জানিনা আমার সব কথা শোনার পর আপনি আমার দিকে তাকাতে পারবেন কিনা ।

রিয়াদ : আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পার . .

মুমু ফিরে গেল এক বছর আগে . .

মুমু মফস্বলের এক কলেজ থেকে HSC দিয়ে ঢাকায় এসেছে কোচিং করতে , উঠেছে এক দূরসর্ম্পকের আত্মীয়ের বাসায় । সেখান থেকে ও কোচিং করতো নিয়মিত , আস্তে আস্তে ঐ কোচিং সেন্টারের এক বড় ভাইয়ের সাথে ওর কিছুটা ঘনিষ্ঠতা হয় , যে কিনা ওকে বিভিন্ন বিষয়ে হেল্প করতো ।ছেলেটির নাম ছিল রতন ।আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্ক আরও গভীর হল , আপনি থেকে তুমিতে গড়াল । যেদিন কোচিং শেষ হল সেদিন রতন মুমুকে বলেছিল কালকে আমরা একটা ছোটখাট অনুষ্ঠান করবো তোমাকেও আসতে হবে । পরের দিন মুমু গিয়ে দেখে কেউ নেই , রতন তাকে বলেছিল সবাই এখনি চলে আসবে তুমি ভিতরে গিয়ে বস , টেবিলের উপর জুস রাখা আছে ইচ্ছে করলে খেতে পার । মুমু এক গ্লাস জুস পান করলো ,কেমন যেন খারাপ লাগছে ওর মাথাটা ঝিমঝিম করছে , এরপর আর ওর কিছুই মনে নেই . .

হুশ ফিরে পাওয়ার পর ও বুঝতে পারলো কি হয়েছে ওর সাথে ।তারপর রতনকে সে অনেক খুঁজেছে , কোন ভাবেই আর রতনের দেখা পেলনা । ।

এই ঘটনার পর মুমু খুব ভেংগে পড়ে , ভার্সিটি পরীক্ষা না দিয়েই বাড়িতে ফিরে আসে । মা বাবাকে সে বলেছিল তাদের চেড়ে ওর পক্ষে ঢাকায় থাকা সম্ভব না । তারপর সেই মফস্বল কলেজেই অনার্সে ভর্তি হয় ও । ।

মুমুর নিজের কাছে খুব হালকা মনে হচ্ছে এখন , রিয়াদকে সে কথাগুলো বলতে পেরেছে । আবার পরক্ষণেই ওর মনটা ভারী হয়ে গেল কারন এসব কথা শুনার পর রিয়াদের রিয়েকশান ভালো হবার কথা না ।

রিয়াদ : তোমার কথা শেষ ?

মুমু : হুম

রিয়াদ : তুমি এতক্ষণ যা যা বললে সবই আমি জানি ।

মুমু : মানে ?

রিয়াদ : মানে রতন আমার আপন বড় ভাই ! !

(মুমুর মনে হচ্ছে , ও হাজার ভোল্টের একটা বৈদ্যুতিক শক খেল) ! !

মুমু : আপনি এসব কি বলছেন ? ?

রিয়াদ : আমি তখন লন্ডনে , বিবিএ শেষ হয়নি তখনো । জানতে পারলাম ভাইয়্যা রোড এক্সিডেন্ট করেছে , এর তিনদিন পর আবার খবর এল ভাইয়্যা মারা গেছে । এর কয়েক মাস পর আমার বিবিএ শেষ হয়ে যায় এবং আমি দেশে ফিরি । ভাইয়্যা মারা যাবার আগে মা বাবার কাছে তোমার ছবি এবং ঠিকানা দিয়ে যায় । আর তোমার সাথে সে যা যা করেছে সব মা বাবার কাছে স্বীকার করে ।

মারা যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে সে বলছিল " মুমুর সাথে আমি যে অপরাধ করেছি তার জন্য আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিয়েছে , তোমরা পারলে ওর জন্য কিছু করো " ।

মুমু : আপনি এসব কথা আগে বলেননি কেন ?

রিয়াদ : আমার ভয় ছিল যদি তুমি সব কিছু শুনে বিয়েতে রাজি না হও ।

মুমু : একটা প্রশ্ন করতে পারি ?

রিয়াদ : অবশ্যই ।

মুমু : দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন ?

রিয়াদ : প্রায়শ্চিত্ত করতে , আর মা বাবাও চায় তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক ।

মুমু : অপরাধ করেছে আপনার ভাই আপনি কেন প্রায়শ্চিত্ত করবেন ?

রিয়াদ : বিশ্বাস কর মুমু সব ঘটনা শুনার পর আমার মনে হতে লাগলো যেন আমি নিজেই এর জন্য দায়ী , আমি নিজেই অপরাধটি করেছি ! আমি মানতে পারছিলাম না কি করে আমার ভাই এমন একটি কাজ করতে পারলো ! ভাই হারানোর শোকও তখন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে ।

রিয়াদ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে , সে মুমুর হাত ধরে বলল " আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে " । আমি জানি তোমার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার কোন ক্ষমা নেই , প্রায়শ্চিত্ত নেই ।

মুমু অবাক হয়ে ভাবছে , কি বৈপরীত্য দুটি মানুষের মাঝে । একজন তার জীবনকে কলঙ্কিত করে গেছে , আর একজন এসেছে তার জীবনকে অলংকৃত করতে , তার পাশে থাকতে , তার সুখ দুঃখের অংশীদার হতে ।

একদিন একজনকে বিশ্বাস করে সে প্রতারিত হয়েছে কিন্তু আজ আরেকজন তাকে বিশ্বাস করে তার দিকেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ।

" মুমুর পক্ষে এই বিশ্বাসের হাতকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না , কখনোই না "

বিষয়: বিয়ের গল্প

৩৯৪৫ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

172625
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১৬
বুড়া মিয়া লিখেছেন : কিন্তু এর পরও এরকম অসংখ্য মুমুরাই প্রতারণা করে যাচ্ছে! দিব্যদৃষ্টিতে অহরহ আমরা তা দেখেও যাচ্ছি! একটা গল্প মনে পড়ে গেল –

এক লোকের বউ সাঙ্ঘাতিক অসুস্থ, মরে যাবে বলে আশঙ্কা; তাই মরার আগে স্বামীকে বলতেছে – কথা দাও, তুমি আমার ভালোবাসার স্মৃতি ধরে রাখতে আর কখনও বিয়ে করবে না; স্বামী বললো – ঠিক আছে। তাতেও স্ত্রী বিশ্বাস করতে পারছিলো না – তাই স্বামী তার পুরুষাংগ কেটে বসলো। দুর্ভাগ্যক্রমে স্ত্রী না মরে বেচে গেলো এবং সে স্বামীকে আরেকজনের ঔরশজাত সন্তান উপহার দিলো।

হতে পারে আপনার গল্পের মুমু এমন না, তবে এমন অনেক ....
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:১৮
126366
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : এ গল্প আমি আগেও শুনেছি। তবে সবাই একরকম না এখনও পৃথিবীতে অনেক ভালো মানুষ আছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
172629
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৬
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক সুন্দর একটা গল্প পড়ে ভালই লাগলো
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:২০
126367
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : আপনার ভালো লাগাতে অনেক খুশি হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
172646
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৫৪
হতভাগা লিখেছেন : আজগুবি কাহিনী মনে হল ।

এটা নিয়ে সিনেমা বানালেও দর্শক টানতে পারবে বলে মনে হয় না ।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:২৪
126368
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : আজগুবি মানুষের কাছে কাহিনী তো আজগুবি মনে হবেই!
172652
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:০২
বিদ্যালো১ লিখেছেন : valo golpo . valo laglo.
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৫
126637
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য
172662
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:১৪
নূর আল আমিন লিখেছেন : অসাধারন লিখছেন
ভাই
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪০
126639
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য
172731
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:৫৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : যাক মুমু না হয় বেচে গেলো কিন্তু এই অবস্হায় হাজারো মুমু অসহায় হয়ে পড়ে।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪১
126641
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন।ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য
173186
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৩২
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
126795
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
174433
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:২৫
খালেদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন : " মুমুর পক্ষে এই বিশ্বাসের হাতকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না , কখনোই না "
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
128155
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : Good Luck Rose Good Luck
176067
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৫:১৯
১০
178950
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২৩
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
132026
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File