আন্তর্জাতিক নিষেধাঙ্গার মুখে বাংলাদেশ।

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:১৯:২৫ সকাল

জাতিসংঘ, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোকে অবজ্ঞা এবং গোঁয়ার্তুমি করে পাতানো নির্বাচনের কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির দুই দফায় টেলিফোন এবং চিঠি, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর একাধিকবার ঢাকা সফর করে সংকট সমাধানের চেষ্টা, বান কি মুনের দুই প্রস্তাব কোনো কিছুই গ্রাহ্য করেননি সর্বদলীয় (!) সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ বিদেশের সব প্রস্তাব-অনুরোধ,মধ্যস্থতার চেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৫ জানুয়ারি পাতানো নির্বাচন করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেআন্তর্কাতিক সম্প্রদায়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ট্রাষ্টি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন একাধিকবার বাংলাদেশে ফোন করেছেন। তিনি বিশ্বের অন্য কোন দেশে এতবার ফোন করেছেন এমন উদাহরণ খুবই কম। জন কেরির মতো লোক, যিনি হয়তো বাংলাদেশ কোন ভূখন্ডে অবস্থিত তা স্পষ্ট করে জানেন না, তিনিও ফোন করেছেন। তারপরও বাংলাদেশে কেন কোন ব্যত্যয় নেই। এটা তাদের কাছে বিস্ময়কর। সমস্যারতো সৃষ্টি হবেই।আর্ন্তাতিক দুনিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশ। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো। তারা বাংলাদেশের সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চান। কিন্তু দিল্লীর ইন্দনে সরকার তাদের কোনো প্রস্তাব গ্রাহ্য করছে না। পাতানো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। পুলিশের গুলিতে রক্ত ঝড়ছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর জুলুম নির্যাতন হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশকে ‘কারাগার’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কেউ কেউ বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বলেও রিপোর্ট করা হয়েছে। মিডিয়াগুলোতে বলা হয় সরকারের একগুঁয়েমির কারণে জাতিসংঘ মিশনে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য নেয়ার প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মার্কিন বাজারে গার্মেন্টেস এর যে কোটা প্রথা বাতিলের সময়সীমা ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আবার দীর্ঘায়িত হতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকো ঢাকা সফরে এসে দুই দলকে সংলাপে বসালেও সরকারের অনমনীয়তার কারণে সংকটের সুরাহা হয়নি। বানকি মুন টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনাকে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটাও মানা হয়নি; বরং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে আওয়ামী লীগ থেকে প্রচার করা হয় জাতিসংঘের মহাসচিব আওয়ামী লীগের সংবিধান প্রেমের পক্ষেই কথা বলেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে ড. ইউনূস ইস্যুতে শীতল সম্পর্ক বিরাজমান। এখন গণতন্ত্র এবংদেশের কোটি কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার হনন করে পাতানো নির্বাচন ইস্যুতে দেশকে চরম সংঘাতের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সরকারের গোঁয়ার্তুমি নিয়ে আলোচনাই শুধু হচ্ছে না; বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে। গতকালও বাংলাদেশে বিজয় দিবসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। সরকারের প্রতি ক্ষোবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কূটনৈতিক রীতি নীতি উপেক্ষা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচিতেরযোগদান থেকে বিরত থেকেছে। এমনকি বঙ্গভবনেঅনুষ্ঠানও বর্জন করেছে। তবে সরকারের অনুরোধে ২৭ দেশ নিয়ে গঠিত এই জোটের মাত্র একজন কূটনীতিক বঙ্গভবনে উপস্থিত হন। পদ্মা সেতু দুর্নীতির ইস্যুতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টই শুধু নয়; প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কিন্তু সরকারের গোঁয়াতুর্মিতে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে পারে দেশ।

বিষয়: রাজনীতি

৮৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File