বিশ্ব রাজনীতিতে বড় মাতব্বারের দিন কি ফুরিয়ে আসছে?
লিখেছেন লিখেছেন মুসাফির আবিদ ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:০১:৫১ সন্ধ্যা
বিশ্বরাজনীতি এক মেরু থেকে এবার বহুমেরুকরণ হচ্ছে। অর্থাৎ অধিক মাতব্বারে ভরে উঠতে যাচ্ছে বিশ্ব। সবচেয়ে বড় মাতব্বার হিসেবে স্বীকৃত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লীপনার (সম্রাজ্যবাদ) সোনালী দিনগুলোর অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞগণ।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইবে এতদিন যারা বড় মাতব্বারে ভয়ে হুংকার দিতে সাহস করেনি। মানে অপেক্ষাকৃত ছোট মাতব্বার গোষ্ঠী।
এই খবর পেয়ে এই প্রথমে বিষ্মিত না হয়ে পাড়িনি। খবর নিয়ে চিন্তা করলাম, আমিও বাদ যাই কোন দুঃখে। তাই ধার করা চিন্তায় চিন্তিত না হয়ে পারলাম না!!!
এই সম্ভাব্য পরিবর্তনের উপসর্গ অনেক আগেই দেখা দিয়েছিল।
যখন আসাদের রাসায়নিক পাপের পাল্টা জবাব দিতে ব্যর্থ হয় বড় মাতব্বার।
আসাদের রাসায়নিক দাত উপড়ানোই যেন এখন বড় মাতব্বারের একমাত্র চিন্তার বিষয়। প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে ঘরের লোকের উপর চালানো গণহত্যার দায় থেকে যে পালানোর সুযোগ পাবে আসাদ, এই ব্যাপারটাই যেন ভুলে যাবার চেষ্টা করছে বড় মাতব্বার!!!
এই আচরনের মাধ্যমে নীল নদের পানি রক্তে রঞ্জিতকারী অবৈধ সিসিকে আরো রক্ত বন্যা ভাসাবার যেন গোপন ইশারা দিল সৌদি কিং ও ইসরাইলের এই গডফাদার।
সিরিয়া ইস্যূতে জাতিসংঘে তুলনামূলক ছোট দুই মাতব্বারের (রাশিয়া ও চীন) হুমকি ধমকিতে বড় মাতব্বারের বাঘের গর্জন এক্কেবারে বেড়ালের মিউ মিউ-তে পরিণত হয়। আসাদের ব্যাপারে এহেন নির্বিষ প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যে তার বিশ্বস্ত মিত্রদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়।
আর তাই তো ইসরাইল একা একা হলেও আসাদের অস্ত্র গুদামে আচমকা একটা দুইটা বিমান হামলা চালিয়ে নিজের সামর্থ্য জানান দেয়ার চেষ্টা করে।
যেন বলতে চায়, “মার্কিনীরা নপুংশকতা প্রদর্শন করলেও আমদের কিন্তু পুরোনো বদ অভ্যাস এখনো যায়নি”!!
আর সৌদি কিংয়ের তো পাকিস্তানের বাজার থেকে পরমাণু শপিং করার সম্ভাবনার কথা কোন কোন সূত্র থেকে শুনা যাচ্ছে।
শিয়া ইরানকে যে ঠেকাতে হবে!!
যদিও খবরটা গুজব মনে হতে পারে কারণ “তেহরান-ইসলামাবাদ-দিল্লী” পাইপ লাইনের বাঁধনে কূটনৈতিক সম্পর্ক আপাতত বাঁধা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তবে অবাক হওয়ার কিছুই নাই! কারণ পাকিস্তানের পক্ষে অসম্ভবের কিছু আছে বলে মনে হয় না। কথায় আছে না, টাকা দিলে বাঘের চোখও মেলে!!
দেখা যাক, ইরানের পরমাণু দাঁত গজানোর আকাঙ্ক্ষার বেলুন বড় মাতব্বার ফুটো করতে পারে কিনা। যদিও 6 party talk এ অন্য মাতব্বারেরাও আছে। সাঙ্গ-পাঙ্গদের কাধে পা রেখে উড়ন্ত বেলুনে আলপিন ফুটানোর চেষ্টা করা আর কি।
বড় মাতব্বারের আরেকটি দুর্বলতা ধরা পড়ে ইউরোপিয়ান মিত্রদের হাড়ির খবর চুরি করতে গিয়ে।
এমন ফাঁপরে যে পড়েছে!
মনে হচ্ছিল ফ্যাবিকল ফ্রেন্ডশীপের আঠা ভল্গা নদীর পানিতে ভেসে যাবে। যদিও তা হয়নি, তবুও বিশ্বাসভঙ্গের দাগ শুকিয়ে যেতে কত সময় নেবে তা হয়তো সময় বলে দেবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাও বিশ্ব মাতব্বার হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
তাছাড়া রণ ক্লান্তিতে হাঁপিয়ে উঠেছে তো সে অনেক আগেই। আফগান পর্বত আর ইরাকের মরুভূমিগুলো যেন তার ভেতরটা শুষে নিয়ে ফাঁপা করে দিয়েছে। তাই তরিঘড়ি করে লেজ গুটানোর জন্যে তালেবানদের সাথে এক টেবিলে চা পান করে।
আসলে রাজনীতিতে সব সম্ভব!!
এছাড়া সাথে আছে মহামন্দার ক্ষত। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছে দেউলিয়া।
সেগুলোকে বাঁচাতে করতে হয়েছে সরকারী তহবিলের প্যাকেজ ঘোষণা। মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও পুঁজিবাদীদের স্বর্গে সরকারী প্রণোদনা!!!
বিস্ময়ের কিছু নেই।
কমিউনিজম তার জন্মভূমিতে যদি পুঁজিবাদের বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে পারে, তাহলে পুঁজিবাদ কেন সরকারী হস্তক্ষেপে বাঁচার আকুতি জানানোর চেষ্টা করবে না।
আসলে যুগের চাহিদা পালন করা মত যোগ্যতা দু’টির করো আছে বলে মনে হয় না।
২০০৮ সালে লেহম্যান ব্রাদার্স থেকে শুরু। ডলার যেন আর্তনাদ করে বলছে, আর পারছি না গুরু!!!
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন