ভাইয়া বলেছে বাবা আসলেই সেমাই খাব! বাবা তুমি কবে আসবে ?
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তআকাশ ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:১৬:২২ সন্ধ্যা
বাবা পাশের বাসার আন্টি ঈদের দিন সেমাই রান্ন করে আমাকে খেতে দিয়েছিল। আমি খেতে গেল ভাইয়া খেতে দেয়েনি। বলেছে বাবা আসার আগে সেমাই খাওয়া যাবে না। তুমি জেলে আসার পর আম্মুর কছে সেমাই খেতে চাইলে একদিন রান্না করে দিয়েছিল। কিন্তু আম্মু সেদিন সেমাই খাইনি। আর আম্মু খাইনি বলে ভাইয়াও খাইনি।
পরে আম্মু তোমার জন্য দৌড়া দৌড়ি করতে গিয়ে জন্ডিস হয়ে মারা যাওয়ার পর এখনও কোনদিন ভাইয়া সেমাই খেতে দেয়নি।
যতবার খেতে চেয়েছি ততবারই ভাইয়া বলেছে বাবা আসলে সেমাই খাব! বাবা তুমি কবে আসবে।
যান বাবা মা যাওয়ার পর আন্টিদের বাসা থেকে একদিন চুরি করে সেমাই খেয়েছিলাম। তখন ভাইয়া দেখে আমাকে মেরেছিল আর বলেছিল ....বলেছিনা বাবা আসার আগে সেমাই খাওয়া যাবেনা।
বাবা সেদিন তোমাকে দেখতে এসে দেখলাম, অনেক লোক জেলখানা থেকে বের হচ্ছে। ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলে বল্ল- উনারা বিডিআর আঙ্কেল । তাদের সাজা শেষ তাই বের হয়ে যাচ্ছে।
বাবা তোমার কি সাজা শেষ হবে না। ভাইয়া সেদিন সেমাই কিনে এনেছে। আমি খুশি হয়ে ভাইয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভাইয়া আমাদের কি আজ সেমাই রান্না হবে?
ভাইয়া বল্ল এটা কিনে এনেছি বাবা আসলেই সেদিন রান্না করা হবে! এজন্য।
কথা গুলো বলেছিল, বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সাজা প্রাপ্ত শামছুর রহমান নামের একজন সাধারণ সৈনিক। তিনি কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
লালবাগে তার নিজের বাড়ি আছে। বাবার থেকে পাওয়া বাড়ি। নিজের সহকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষি না দেওয়ার কারণে সে জেল খাটছে ২০০৯ সাল থেকে।
তার জন্য দৌড়া দৌড়ি করার মত তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিল না। যখন সে জেলে গেছে।
এর পর স্বামীর চিন্তা ও ছেলেদের পড়ালেখার চিন্তা করতে করতে এক পর্যায়ে সে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তার পর থেকে তার ছেলে দুটি বাবার স্মৃতি আকড়ে ধরে আছে।
আর বাবা কারাগারে থাকায় মা কোনদিন সেমাই বা ভাল কোন খাবার না খাওয়ায় বড় ছেলেও ২০০৯ সালের পর থেকে এখনও কোনদিন ভাল কোন খাবার কেনে না নিজেদের জন্য।
সামছুর রহমানের বড় ছেলে এখন ডেফডিল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্সে পড়ালেখা করে। আর ছোট ছেলে প্রাথমিকে আছে।
ছোট ছেলে জেলের কোন বাস্তবতা জানেনা যে কারণে বার বার ভাইয়ার কাছে বিভিন্ন জিনিসের বাইনা ধরে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন